বলিউড জগতের অভিনেতাদের মধ্যে অক্ষয় কুমার অন্যতম, যিনি তাঁর চেয়ে কম বয়সের অভিনেত্রীদের সঙ্গে বড় পর্দায় রোম্যান্টিক দৃশ্যে অভিনয় করতে পিছপা হন না। অন্তত বলিপাড়ায় অক্ষয়ের নামে এমন কথাবার্তাই চালাচালি হয়ে থাকে। কিন্তু শুধুমাত্র কম বয়সি নায়িকাদের সঙ্গেই নয়, অক্ষয় তাঁর চেয়ে বেশি বয়সের অভিনেত্রীদের সঙ্গেও পর্দায় চুটিয়ে রোম্যান্স করেছেন। এমনকি, তাঁর শাশুড়ি ডিম্পল কাপাডিয়ার সঙ্গেও নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করার কথা ছিল অক্ষয়ের।
অক্ষয় তখন সবেমাত্র হিন্দি সিনেমা জগতে ‘অ্যাকশন হিরো’ হিসাবে পরিচিতি পেতে শুরু করেছেন। সমবয়সি বা কমবয়সি নায়িকাদের ছাড়াও শ্রীদেবী এবং রেখার বিপরীতে অভিনয় করে ফেলেছেন ‘খিলাড়ি’।
১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় উমেশ মেহরা পরিচালিত ‘খিলাড়িয়োঁ কা খিলাড়ি’ ছবিটি। এই ছবিতে অক্ষয়ের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন রেখা এবং রবিনা ট্যান্ডন। কিন্তু ছবি নির্মাতাদের প্রথম পছন্দ রেখা ছিলেন না।
‘খিলাড়িয়োঁ কা খিলাড়ি’ ছবির নায়িকা হিসাবে ছবি নির্মাতারা পছন্দ করেছিলেন ডিম্পলকে। ছবিতে মায়া চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ডিম্পলকে। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে ডিম্পলকে পর্দায় অক্ষয়ের সঙ্গে নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করতে হত। তখনও টুইঙ্কলের সঙ্গে অক্ষয়ের আলাপ হয়নি।
কিন্তু ডিম্পল ‘খিলাড়িয়োঁ কা খিলাড়ি’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব খারিজ করে দেন। সেই সময় ডিম্পল তাঁর কন্যা টুইঙ্কল খন্নার কেরিয়ার নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। টুইঙ্কলের কেরিয়ার গড়ার মুহূর্তে সব সময় তাঁর পাশে থাকতে চেয়েছিলেন ডিম্পল।
রাজকুমার সন্তোষীর পরিচালনায় ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় ‘বরসাত’ ছবিটি। এই ছবিতেই প্রথম অভিনয় করেন টুইঙ্কল। প্রথম ছবিতে ববি দেওল এবং রাজ বব্বর, মুকেশ খন্নার মতো তারকার সঙ্গে কাজ করেছিলেন তিনি।
‘বরসাত’ ছবিতে টুইঙ্কল কেমন অভিনয় করছেন, কেরিয়ার শুরু করার পথে কোনও সমস্যায় পড়ছেন কি না— এমন ছোটোখাটো বিষয় নজরে রাখতে চেয়েছিলেন ডিম্পল। তিনি যদি নিজেই শুটিংয়ের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তা হলে আর নিজের কন্যাকে সময় দিতে পারবেন না। তাই ‘খিলাড়িয়োঁ কা খিলাড়ি’ ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন অভিনেত্রী।
ডিম্পলের পরিবর্তে মায়ার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য রেখার কাছে প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন নির্মাতারা। তাঁদের প্রস্তাবে রেখা রাজিও হন এবং অক্ষয়ের বিপরীতে অভিনয় করেন। ‘খিলাড়িয়োঁ কা খিলাড়ি’ ছবিতে অক্ষয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন রেখা।
এই প্রসঙ্গে পুরনো এক সাক্ষাৎকারে ডিম্পল বলেছিলেন, ‘‘ভাগ্যিস আমি ওই ছবিতে কাজ করতে রাজি হইনি। না হলে পরে ভীষণ লজ্জায় পড়তাম। নিজের জামাইয়ের সঙ্গে এ রকম দৃশ্যে অভিনয়ের কথা মনে পড়লেই লজ্জায় মাথা কাটা যেত আমার!’’
তবে অক্ষয়ের ব্যাপারে অন্য রকম ধারণা নিজের মনে পোষণ করতেন ডিম্পল। টুইঙ্কলের সঙ্গে বিয়ে দিতেও নাকি সায় দিতে চাইছিলেন না তিনি। কর্ণ জোহরের রিয়্যালিটি শো-তে এসে এই অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিয়েছিলেন টুইঙ্কল এবং অক্ষয়।
অক্ষয় জানিয়েছিলেন যে, টুইঙ্কলকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর অভিনেত্রী তাঁকে বিয়ে করবেন কি না, তার উপর শর্ত রেখেছিলেন। ২০০০ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ধর্মেশ দর্শন পরিচালিত ছবি ‘মেলা’। এই ছবিতে আমির খান এবং ফয়জ়ল খানের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন টুইঙ্কল।
টুইঙ্কল শর্ত দিয়েছিলেন যে, ‘মেলা’ যদি বক্স অফিসে ফ্লপ করে, তবেই তিনি অক্ষয়কে বিয়ে করবেন। নচেৎ নয়। অক্ষয় মনে মনে ভেবে নিয়েছিলেন যে, এই ছবি কোনও মতেই ফ্লপ করবে না। টুইঙ্কলকে তাঁর জীবনসঙ্গী হিসাবেও কোনও দিন পাবেন না তিনি, এমনটাই মেনে নিয়েছিলেন অক্ষয়।
কিন্তু বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে ‘মেলা’ ছবিটি। টুইঙ্কলও তাঁর শর্ত মেনে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। অবশেষে টুইঙ্কলের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান অভিনেতা। সেই সময় ডিম্পলের এক বান্ধবীও তাঁদের বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন।
অক্ষয় যে টুইঙ্কলকে বিয়ে করতে চান, তা জানতে পেরে চমকে ওঠেন ডিম্পল। সঙ্গে সঙ্গে টুইঙ্কলকে ডেকে বলেন, ‘‘অক্ষয় তো সমকামী। তুমি ওকে বিয়ে করবে কী করে?’’ মায়ের মুখে এই কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েন টুইঙ্কল নিজেও।
ডিম্পল জানান যে, তাঁর এক বান্ধবী কোনও এক সংবাদপত্রে সমকামীদের ব্যাপারে লিখেছিলেন। লেখার আগে খোঁজখবর করার সময় নাকি তিনি জানতে পেরেছিলেন যে, অক্ষয় সমকামী। এই ধারণা মনে মনে পোষণ করেছিলেন ডিম্পল নিজেও।
সত্যি জানার পরেও অক্ষয় এবং টুইঙ্কলকে বিয়ের জন্য অনুমতি দেননি ডিম্পল। অক্ষয়ের সঙ্গে নিজের কন্যার বিয়ে দিতে ভরসা পাচ্ছিলেন না ডিম্পল। তাই তিনি দু’জনকে এক বছর একসঙ্গে একত্রবাসের নির্দেশ দেন। এক বছর পর অক্ষয় এবং টুইঙ্কলের সম্পর্ক অটুট থাকলে তবে তাঁরা বিয়ে করতে পারেন বলে জানান ডিম্পল।
মায়ের নির্দেশ মেনে এক বছর একত্রবাস করেছিলেন অক্ষয় এবং টুইঙ্কল। তার পর ২০০১ সালে ধুমধাম করে বিয়ে করেন বলিপাড়ার এই তারকা জুটি।