ষাটের দশকের মধ্যে বলিপাড়ার প্রথম সারির অভিনেতাদের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন সুনীল দত্ত। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা এবং পরিচালনার দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ফিল্মজগতে পা রাখেন সুনীলের পুত্র সঞ্জয় দত্তও। ১৯৮১ সালে ‘রকি’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় আগমন সুনীল-পুত্রের। অভিনেতা হিসাবে এক দিকে তিনি যেমন প্রশংসা কুড়োতেন, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ঠিক তেমনই বার বার বিতর্কে জড়িয়ে পড়তেন তিনি।
সঞ্জয় এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর আরও বেশি পরিমাণে মাদকের প্রতি আসক্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল অভিনেতার।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, সঞ্জয় নাকি তাঁর মাকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারতেন না। সুনীলের সঙ্গে প্রায়শই তাই কথা কাটাকাটি হত। বাবার প্রতি যে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তা তারকাভরা মঞ্চে স্বীকার করেন সঞ্জয়।
নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে এক জনপ্রিয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যান সঞ্জয়। সেখানকার মঞ্চে উঠে সঞ্জয় তাঁর বাবার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করতে থাকেন।
সঞ্জয় দাবি করেন, তাঁর বাবা জীবনে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আশির দশকে সঞ্জয় যখন তাঁর কেরিয়ার শুরু করেন, তার কয়েক বছরের মধ্যেই সুনীল রাজনীতিতে যুক্ত হন। রাজনীতির পাশাপাশি যদিও সিনেমাজগতের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
কিন্তু রাজনীতিক হওয়ার ক্ষমতা ছিল না সুনীলের, এমনটাই দাবি করেন সঞ্জয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলিপাড়ার নামী তারকারা। সকলের সামনেই বাবার সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেন সঞ্জয়।
সঞ্জয় বলেন, ‘‘আমার বাবার উচিত রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া। অভিনয় নিয়েই তাঁর ব্যস্ত থাকা প্রয়োজন। উনি বড় ভাল মনের মানুষ। জনগণের উন্নতির জন্য তিনি কাজও করতে চান। কিন্তু তাঁকেও বুঝতে হবে যে এটি শুধুমাত্র এক জনের দায়িত্ব নয়।’’
সুনীলকে নরম মনের মানুষ পেয়ে তাঁর সুযোগ নিচ্ছেন অনেকে, দাবি করেন সঞ্জয়। অভিনেতা বলেন, ‘‘বাবা সহজ-সরল মানুষ। তাই লোকজন বাবাকে যা বোঝান, বাবা সেটাই বোঝেন।’’
সঞ্জয় বলেন, ‘‘অনেকে এমন রয়েছেন যাঁরা নিজেদের কার্যসিদ্ধির জন্য বাবাকে দিয়ে ইচ্ছামতো কাজ করিয়ে নেন। বাবাও ভাল মনে সেই কাজ করে ফেলেন। এ ভাবে তাঁর ভালমানুষির সুযোগ নেওয়া হচ্ছে।’’
সঞ্জয়ের সঙ্গে তাঁর বাবার যে বার বার অশান্তি হয় সে কথাও জানান অভিনেতা। মঞ্চে দাঁড়িয়ে সঞ্জয় বলেন, ‘‘আমার আর বাবার মধ্যে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া হয়। প্রতি বার ঝগড়ার বিষয়বস্তু একই হয়। তা হল রাজনীতি।’’
সুনীলকে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ারও পরামর্শ দেন সঞ্জয়। অভিনেতা বলেন, ‘‘বাবা খুবই সৎ এবং ভাল। দেশের জন্য তিনি ভালই করতে চান। কিন্তু তিনি যে একা দেশবাসীদের জন্য কিছু করতে পারবেন না তা বুঝতে পারছেন না।’’
সঞ্জয়ের বক্তব্য, ‘‘যে দিন থেকে বাবা রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন, সে দিন থেকে তাঁর চিন্তা বেড়ে গিয়েছে। আমার মনে হয় তিনি বহু বছর যে কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, সেই কাজেই ফিরে যাওয়া উচিত। রাজনীতি ছেড়ে যাওয়া প্রয়োজন বাবার।’’
২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবিতে সুনীল এবং সঞ্জয়কে একসঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। ক্যামেরার সামনে পিতা-পুত্রের জুটি দর্শকের মনে ধরেছিল।
সঞ্জয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘সকলে মনে করেন যে মা আমার সবচেয়ে প্রিয়। কিন্তু বাবা যে আমার জীবনে কতটা, তা কেবল আমি জানি। বাবা প্রতি মুহূর্তে আমাকে অনুপ্রেরণা দেন।’’