নব্বইয়ের দশকে বলিপাড়ায় অ্যাকশন ঘরানা এবং রোম্যান্টিক ঘরানার ছবির পাশাপাশি যে আদ্যোপান্ত পরিবারকেন্দ্রিক ছবিও বক্স অফিসে ব্যবসা করতে পারে, তা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন বলি পরিচালক সুরজ বরজাতিয়া।
সাড়ে চার কোটি টাকা খরচ করে সুরজ যে ছবি তৈরি করেছিলেন তা মুক্তির পর বক্স অফিসে চুটিয়ে ব্যবসা করে। বলিপাড়া সূত্রে খবর, মোট ১৩৫ কোটি টাকার ব্যবসা করে বক্স অফিস থেকে ৩০ গুণ বেশি উপার্জন করে সুরজ পরিচালিত ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিটি। সম্প্রতি ২৯ বছরে পা দিল এই ছবিটি।
‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিটি মুক্তির পর প্রেম (সলমন খান) এবং নিশার (মাধুরী দীক্ষিত নেনে) জুটি দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রাভিনেত্রী হিসাবে মাধুরীকে বেছে নিলেও মাধুরীর বিপরীতে প্রেমের চরিত্রের জন্য সলমন প্রথম পছন্দ ছিলেন না।
সলমন নন, বরং ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিতে বলিপাড়ার অন্য খানকে চেয়েছিলেন সুরজ। এমনকি তাঁকে অভিনয়ের প্রস্তাবও দিয়ে ফেলেছিলেন পরিচালক। তা হলে প্রেমের চরিত্রে সলমনকে অভিনয় করতে দেখা গেল কী করে?
‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিতে প্রেমের চরিত্রের জন্য প্রথম পছন্দ ছিলেন আমির খান। আমিরের কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়েও গিয়েছিলেন সুরজ।
সুরজের কাছে ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবির চিত্রনাট্যের প্রাথমিক খসড়া শোনার পর আমির সরাসরি প্রেমের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব খারিজ করে দেন।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, প্রেমের চরিত্র যে ভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল তা আকর্ষণীয় মনে হয়নি আমিরের। অভিনেতা মনে করেছিলেন এই চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারবেন না তিনি। তাই সুরজের প্রস্তাব খারিজ করে দেন অভিনেতা।
আমির খারিজ করলে সুরজ ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হন সলমন খানের কাছে। সুরজের হাত ধরেই বলিপাড়ায় পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন সলমন।
১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সুরজ। এই ছবির মাধ্যমে মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন সলমন। এই ছবিতেও সলমনের চরিত্রের নাম ছিল প্রেম। ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবির পর আবার প্রেম নামের চরিত্রেই অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হল সলমনকে।
সুরজের প্রস্তাব ফেরাননি সলমন। মাধুরীর বিপরীতে অভিনয় করে বহুল প্রশংসা কুড়োতে শুরু করেন অভিনেতা। তারকা সমন্বিত ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিতে সলমন, মাধুরীর সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল রেনুকা সাহানে, মণীশ বহেল, রীমা লাগু, অনুপম খের, দিলীপ জোশী, অলোক নাথ, সতীশ শাহ, বিন্দু, দীনেশ হিঙ্গুর মতো একাধিক তারকাকে।
১৯৯৪ সালের ৫ অগস্ট প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিটি। বলিপাড়ার অন্দরমহল থেকে জানা যায়, এই ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে দু’বছর ধরে কাজ করছিলেন সুরজ।
১৯৯০ সাল থেকে ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবির শুটিং শুরু করেছিলেন সুরজ। তামিলনাড়ুর উটি শহরে এই ছবিটির শুট হয়েছিল।
চার বছর ধরে শুটিং চলেছিল ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিটির। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, ১৯৮২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নদীয়া কে পার’ ছবির চিত্রনাট্যের উপর নির্ভর করে সুরজ তাঁর ছবিটি তৈরি করেছিলেন।
রাজশ্রী প্রোডাকশনস প্রযোজিত ‘নদীয়া কে পার’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সচিন পিলগাওকর, সাধনা সিংহ, লীলা মিশ্র, ইন্দ্র ঠাকুর, শীলা ডেভিডের মতো বলি তারকা।
‘হম আপকে হ্যায় কৌন’-এর পর সুরজের পরিচালনায় ‘হম সাথ সাথ হ্যায়’ নামের আরও একটি পরিবারকেন্দ্রিক ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় সলমনকে। সেই ছবিটিও বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করে।
১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির পর দীর্ঘ বিরতি। এই ছবিতেও সলমন অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল প্রেম। প্রায় আট বছর পর আবার সুরজের পরিচালনায় অভিনয় করতে দেখা যায় সলমনকে।
২০১৫ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় সুরজ পরিচালিত ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’ ছবিটি। সলমনের বিপরীতে এই ছবিতে সোনম কপূরকে অভিনয় করতে দেখা যায়। এই ছবিতেও সলমনের চরিত্রের নাম ছিল প্রেম।
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে মুক্তি পেয়েছে অমিতাভ বচ্চন, ড্যানি ডেনজংপা, বোমান ইরানি, অনুপম খের, পরিণীতি চোপড়া অভিনীত ‘উঁচাই’ ছবিটি। এর পর বলিপাড়ায় এখনও পর্যন্ত সুরজের পরিচালনায় আর কোনও ছবি মুক্তি পায়নি।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল সলমন অভিনীত ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ ছবিটি। কিন্তু এই ছবিটি মুক্তির পর তেমন সাড়া পায়নি। এই বছরের নভেম্বর মাসে মুক্তি পাওয়ার কথা সলমনের ‘টাইগার ৩’ ছবিটির।
যশরাজ ফিল্মসের প্রযোজনায় স্পাই-থ্রিলার ঘরানার ‘টাইগার ৩’ ছবিতে সলমনের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যাবে ক্যাটরিনা কইফকে। খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমরান হাশমি। ক্যামিয়ো চরিত্রে দেখা যাবে শাহরুখ খানকেও।