বর্তমানে বলিজগতের প্রথম সারির অভিনেতাদের মধ্যে যে তিন খানের নাম আসে তাঁদের মধ্যে অন্যতম সলমন খান। নব্বইয়ের দশক থেকে ধীরে ধীরে দর্শকের প্রিয় ‘ভাইজান’ হয়ে ওঠেন সেলিম খানের পুত্র।
প্রথম ছবিতে অভিনয় করেই বাজিমাত করেছিলেন সলমন। কেরিয়ারের প্রথম ছবি যে বক্স অফিস থেকে যে চুটিয়ে ব্যবসা করবে সে ধারণা ছিল না অভিনেতার। কিন্তু এই ছবির সাফল্য সলমনের জীবনে বিশেষ পরিবর্তন আনেনি।
বরং প্রথম ছবির পর কোনও কাজ ছাড়াই বসেছিলেন সলমন। ২০২২ সালে একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠে নিজের অভিনয় জীবনের কথা উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন সলমন। তখনই অভিনেতা জানান যে ‘বেকার’ অবস্থা কাটানোর জন্য নাকি টাকা দিয়ে অন্য ছবির ভুয়ো ঘোষণা করেছিলেন তাঁর বাবা সেলিম খান।
১৯৮৯ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল সুরজ বরজাতিয়া পরিচালিত ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ নামের রোম্যান্টিক ঘরানার হিন্দি ছবি। এই ছবির মাধ্যমেই বলিপাড়ায় পদার্পণ করেন সলমন।
যদিও ১৯৮৮ সালে ‘বিবি হো তো অ্যায়সি’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেছিলেন সলমন। কিন্তু পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। মুখ্যচরিত্রে প্রথম অভিনয় করেছিলেন বলে সলমনের কেরিয়ারের প্রথম ছবি হিসাবে ধরে নেওয়া হয় ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’কে।
সলমনের বিপরীতে ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ভাগ্যশ্রী। ছবিতে দুই তারকার সম্পর্কের রসায়ন দর্শকের মনে ধরে। এক কোটি টাকা বাজেটের এই ছবি মুক্তির পর বক্স অফিস থেকে ২৮ কোটি টাকার ব্যবসা করে।
সলমন জানান, তাঁর কেরিয়ারের প্রথম ছবি হিট হলেও আলোর রোশনাই ছিল ভাগ্যশ্রীর দিকেই। অভিনেত্রী হয়ে উঠেছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এমনটাই দাবি করেন সলমন।
সলমন ভেবেছিলেন দর্শক যখন পর্দায় তাঁর সঙ্গে ভাগ্যশ্রীর জুটি পছন্দ করেছেন, তখন ভাগ্যশ্রীর সঙ্গেই পরবর্তী ছবিতে অভিনয় করবেন তিনি। কিন্ত সলমনের স্বপ্নে বাধা দেন খোদ ভাগ্যশ্রী।
‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবিটি মুক্তির পর ভাগ্যশ্রী সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি বিয়ে করে সংসারে মনোনিবেশ করবেন। আর অভিনয় করবেন না। কেরিয়ারের শুরুতেই সলমনের মাথায় যেন বাজ পড়ে।
সলমন জানান, ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবি মুক্তির পর টানা ছ’মাস বেকার বসেছিলেন অভিনেতা। হাতে টাকাও ছিল না সলমনের।
প্রথম ছবি মুক্তির পর সলমন যে কোনও কাজ পাচ্ছিলেন না তা সহ্য করতে পারছিলেন না সেলিম। কেরিয়ারের শুরুতে এমন কঠিন সময়ে পুত্রের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন তিনি।
কী করা যায় স্থির করতে বলিপাড়ার ছবি নির্মাতা রমেশ তৌরানির সঙ্গে আলোচনায় বসেন সেলিম। উপায় খুঁজে বার করতে মরিয়া ছিলেন দু’জনেই।
সলমন বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখি একটি পত্রিকায় আমার নামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবর দেখামাত্র তো আমি চমকে উঠি। বলিউডের ছবি সংক্রান্ত খবর যে পত্রিকায় ছাপানো হত, সেখানে দেখি লেখা হয়েছে আমাকে নাকি একটি ছবির নায়ক হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ছবিনির্মাণের দায়িত্বে নাকি রয়েছেন জিপি সিপ্পি।’’
পরে অবশ্য সত্য ঘটনা জানতে পারেন সলমন। ভুয়ো ছবি ঘোষণার নেপথ্যে ছিলেন স্বয়ং সেলিম খান। সলমন জানান, তাঁর বাবা দু’হাজার টাকা দিয়েছিলেন রমেশকে। এই টাকা দিয়েই পত্রিকায় ভুয়ো ঘোষণা করিয়েছিলেন সেলিম।
সলমনের দাবি, প্রযোজক সিপ্পির সঙ্গে কথা বলেন সেলিম। ছবিমুক্তি নিয়ে অসত্য ঘোষণা করতে সেলিম অনুরোধ করেছিলেন সিপ্পিকে। আদতে সিপ্পি কোনও ছবিই তৈরি করছিলেন না।
তবে সেলিমের অনুরোধ ফেলতে পারেননি সিপ্পি। সলমনের নাম জড়িয়ে অসত্য ঘোষণা করেন সিপ্পি। সলমন বলেন, ‘‘কেরিয়ারে শুরুতে আমার জীবনে এক দেবতাসমান মানুষ এসেছিলেন। তিনি রমেশ তৌরানি।’’
রমেশ নাকি সিপ্পিকে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে জানান সলমন। অভিনেতা বলেন, ‘‘আসলে রমেশ সে দিন ওই পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে আমি একটি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাই।’’
১৯৯১ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘পত্থর কে ফুল’ ছবিটি। এই ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন জিপি সিপ্পি। সলমনের বিপরীতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রবীনা টন্ডন। অভিনেত্রীর কেরিয়ারের প্রথম ছবি ছিল এটি।