টিনসেল নগরী যেমন আলোর রোশনাইয়ে ভরা, ঠিক তেমনই আলোর পিছনে ছায়ার মতো রয়েছে অন্ধকার। স্বজনপোষণ থেকে শুরু করে কাস্টিং কাউচ— বিতর্ক চলতেই থাকে বলিপাড়ায়। তেমনই এক বিতর্কিত অধ্যায় হল বলিউডের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, এই সব অনুষ্ঠানে যে পুরস্কার দেওয়া হয় তা তারকাদের অভিনয় দক্ষতার উপর নির্ভর করে নয়, বরং অর্থের বিনিময়ে দেওয়া হয়।বলি অভিনেতা ঋষি কপূর সেই কথা স্বীকারও করেছিলেন।
২০০৭ সালে ‘খুল্লম খুল্লা’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের প্রতি পাতায় ঋষি তাঁর জীবনের খুঁটিনাটি তুলে ধরেছেন। এই বইয়েই উল্লেখ রয়েছে যে, অর্থের বিনিময়ে পুরস্কার কিনেছিলেন ঋষি।
১৯৭৩ সালে রাজ কপূর পরিচালিত ‘ববি’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন ঋষি কপূর এবং ডিম্পল কপাডিয়া।
ঋষি এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানান যে, ‘ববি’ ছবিতে অভিনয় করার পর রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়ে যান তিনি। সেই সময় তাঁর জনসংযোগদলের এক সদস্য ঋষিকে প্রশ্ন করেন যে, তিনি কোনও পুরস্কার কিনতে চান কি না।
ঋষি বলেন, ‘‘তখন আমার ২০-২১ বছর বয়স। এই বয়সে এত নামডাক! সবকিছু নিয়ে স্পষ্ট ধারণাও ছিল না। তাই আমি পুরস্কার কিনতে রাজি হয়ে যাই।’’
ঋষিকে জানানো হয় যে, ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি পুরস্কার কেনা যায়। অভিনেতা বলেন, ‘‘১৯৭৩ সালে ৩০ হাজার টাকার মূল্য অনেক। কিন্তু আমার বাবার টাকার অভাব ছিল না। তাই আমি সঙ্গে সঙ্গে টাকা দিয়ে দিই।’’
সেই বছর বছরের সেরা অভিনেতা হিসাবে পুরস্কার পেয়েছিলেন ঋষি। বইয়ে সেই কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।
ঋষির জীবনের এই সত্য প্রকাশ্যে আসার পর বলিপাড়ায় তাঁকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়। পরে ঋষি আবার উল্টো গান গাইতে শুরু করেন।
ঋষির দাবি, তিনি ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি যে সেই টাকা সঠিক লোকের কাছে আদৌ পৌঁছেছে কি না।
‘ববি’র নায়কের দাবি, সেই পুরস্কার হয়তো অভিনয় দক্ষতার ভিত্তিতেই দেওয়া হয়েছিল। তিনি যে টাকা দিয়েছিলেন, তা কোনও প্রতারক চুরি করে নিয়েছেন বলেও দাবি করেন অভিনেতা।
তবে সাক্ষাৎকারে ঋষি জানান, ১৯৭৩ সালে ‘ববি’ ছবির পাশাপাশি মুক্তি পেয়েছিল প্রকাশ মেহরা পরিচালিত ‘জঞ্জীর’ ছবিটি। ঋষির মন্তব্য, ‘‘অমিতাভ ‘জঞ্জীর’ ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন। অমিতাভও ওই পুরস্কারের দাবিদার হতে পারতেন।’’
অমিতাভই নাকি সেই পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন। কিন্তু ‘ববি’ ছবির জন্য পুরস্কার জেতার পর লাইমলাইটে চলে আসেন ঋষি।
তবে পুরস্কারের লোভে টাকা দিয়েছিলেন বলে যথেষ্ট লজ্জিত হয়েছিলেন ঋষি। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘বয়স কম ছিল। জানতামও না এই সব করা যায়। ভুল করেছিলাম খুব।’’
বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, এখনও অর্থের বিনিময়ে পুরস্কার কেনা যায়। তবে তার জন্য নাকি সঠিক লোকের সঙ্গে পরিচয় থাকা প্রয়োজন।
কিন্তু এখন ৩০ হাজার টাকা দিয়ে পুরস্কার কেনা সম্ভব নয় বলে দাবি করেন বলিপাড়ার একাংশ। তাঁদের অনুমান, এখন একটি পুরস্কার কিনতে হলে কমপক্ষে ৬ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়।
তবে, হিন্দি ফিল্মজগতের তারকারা এই বিষয়ে নীরব থেকেছেন। কারও মতে এ সব মিথ্যা রটনা। কোনও তারকার বক্তব্য, সমস্ত গুণমান বিচার করেই তারকাদের পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে সত্য যে কী তা এখনও ধোঁয়াশায়।