আশির দশক বা তার আগে কোনও রকম সমাজমাধ্যম ছিল না। জনসংযোগ মাধ্যমের চলও ছিল না। কিন্তু এত কিছুর পরেও বলি তারকাদের অনুরাগী সংখ্যায় কোনও ভাবে ভাটা পড়ত না। জিতেন্দ্র, রাজেশ খন্না, বিনোদ খন্না, অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জীব কুমারের মতো তারকাদের আলাদা করে কোনও জনসংযোগ আধিকারিকও ছিল না। কিন্তু বলিপাড়ায় জনপ্রিয়তার নিরিখে কেউ যদি নজির গড়ে থাকেন, তবে তিনি মিঠুন চক্রবর্তী।
আশির দশকে বলিপাড়ার সকল তারকার জনপ্রিয়তাকে যেন ম্লান করে দিয়েছিলেন মিঠুন। তিনি কোথাও শুটিং করতে গেলে সেটের বাইরে জনসমাগম সামলে রাখা দায় হত। এমনকি, দেশের বাইরেও অভিনেতার অনুরাগীদের সংখ্যা নেহাত কম ছিল না।
১৯৭৬ সালে মৃণাল সেন পরিচালিত ‘মৃগয়া’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় পা রেখেছিলেন মিঠুন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে দর্শকের মাতামাতি শুরু হয় আরও ছয় বছর পর।
১৯৮২ সালে ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবিটি মুক্তি পায়। সেই ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি মিঠুনের নাচের দৃশ্যগুলিও জনপ্রিয় হয়। অনুরাগীদের কাছে মিঠুন ‘ডিস্কো ডান্সার’ নামেই পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন।
শুধু ভারতেই নয়, রাশিয়াতেও মিঠুনের অনুরাগীমহল তৈরি হয়েছিল। কানাঘুষো শোনা যায় যে, কাজাখস্তানে শুটিংয়ের জন্য গিয়েছিলেন মিঠুন। তাঁকে দেখার জন্য বিমানবন্দরেই ভিড় জমিয়েছিলেন তাঁর অনুরাগীরা।
কাজাখস্তানের বিমানবন্দর থেকে যখন মিঠুন বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন গেটের বাইরে বিশাল ভিড়। কানাঘুষো শোনা যায় যে, সে দিন বিমানবন্দরের বাইরে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। এমন ঘটনা বলিউডের আর কোনও তারকার ক্ষেত্রে ঘটেনি বলে বলিপাড়ার একাংশের অনুমান।
কিন্তু জনপ্রিয়তার শিখরে থাকলেও একাকিত্ব ঘিরে ধরেছিল মিঠুনকে। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, মিঠুনের কেরিয়ারে এমন সময়ও গিয়েছে যখন তিনি এক দশকে একশোরও বেশি ছবিতে কাজ করেছেন।
এমনও দিন গিয়েছে যখন প্রতি দিন ৪ থেকে ৫টি ছবির শুটিং করেছেন মিঠুন। জনপ্রিয়তার পাশাপাশি কাজের চাপও ছিল প্রচুর। মিঠুন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমি কোনও দিন ভাবতে পারিনি যে এত বড় তারকা হতে পারব। কিন্তু আমার জনপ্রিয়তা যত বৃদ্ধি পেয়েছে, আমি তত একা হয়ে পড়েছি।’’
মিঠুন আরও বলেন, ‘‘সকলে মনে করতেন যে আমি ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমার সঙ্গে কেউ সহজে কথা বলা যায় না।’’
জনপ্রিয় হওয়ার পর মিঠুন নাকি অন্য জগতের মানুষ হয়ে গিয়েছেন। মিঠুনের আশপাশের লোকজন নাকি এমনটাই ভাবতেন বলে জানান অভিনেতা।
মিঠুন বলেন, ‘‘সকলে বলাবলি করতেন যে, আমি অনেক বড় হয়ে গিয়েছি। আমার থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। তখন আমি ঘুম থেকে উঠে শুটিংয়ে যেতাম। কাজ থেকে বাড়ি ফিরে আবার একা হয়ে পড়তাম। এই ছিল আমার রোজকার জীবন।’’
মিঠুনের মন্তব্য, ভাল অভিনেতার পাশাপাশি ভাল মানুষ হতে না পারলে দর্শকের মনে জায়গা পাওয়া যায় না। ইন্ডাস্ট্রিতেও দীর্ঘ দিন থাকা যায় না।
মিঠুন বলেন, ‘‘দক্ষতা ছাড়া অভিনয় করা যায় না। দক্ষতা থাকলে পৃথিবীর কারও আটকানোর ক্ষমতা নেই। এক জন দক্ষ অভিনেতা যদি ভাল মানুষ না হন, তা হলে ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর আয়ু অল্প।’’
আবার কেউ খারাপ অভিনেতা এবং খারাপ মানুষ হলে তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতেই পারবেন না বলে মনে করেন মিঠুন। তাই মানুষ হিসাবে ভাল হওয়া খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিনেতা।