তিন দশকে আড়াইশোর বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। শুধু হিন্দি ছবিতেই নয়, মরাঠি, তামিল এবং তেলুগু ছবিতেও কাজ করেছেন। তালিকা থেকে বাদ পড়েনি ছোট পর্দার ধারাবাহিকও। তবে অভিনয় নিয়ে নয়, খেলাধুলো নিয়ে কেরিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন মিলিন্দ গুনাজি। কিন্তু মিলিন্দের ভাগ্যে অন্য কিছু লেখা ছিল।
১৯৬১ সালের ২৩ জুলাই মহারাষ্ট্রের পুনেতে জন্ম মিলিন্দের। সেখানেই স্কুল এবং কলেজের পাঠ শেষ করেন তিনি। প্রযুক্তিবিদ্যা নিয়ে স্নাতক হন। তার পাশাপাশি, ব্যবসায় নেমে পড়েন মিলিন্দ। প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
ক্রিকেট এবং ব্যাডমিন্টন খেলায় পটু ছিলেন মিলিন্দ। উচ্চ স্তরেও খেলেছেন তিনি। খেলাধুলা নিয়েই কেরিয়ারে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আচমকা দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে মিলিন্দ জানান যে, গাড়ি সারাইয়ের কারখানায় নিজের গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।
গাড়ির পিছনের আসনে কালো রঙের রোদচশমা পরে বসেছিলেন মিলিন্দ। মিলিন্দ বসে থাকাকালীন ভুলবশত গাড়িটি একটি যন্ত্রের মাধ্যমে মাটি থেকে অনেকটা উপরের দিকে তুলে দেওয়া হয়। মিলিন্দও তা বুঝতে পারেননি। গাড়ির দরজা খুলে নামতে গিয়ে যন্ত্রে তাঁর পা আটকে যায়। পা এবং কাঁধে গুরুতর চোট পান তিনি।
চোট পাওয়ার কারণে খেলাধুলো থেকে দূরে সরে যেতে হয় মিলিন্দকে। কাঁধ এবং পায়ের চোট নিয়ে খেলার মতো অবস্থায় ছিলেন না তিনি। সেই সময় তাঁর বন্ধুরা মিলিন্দকে মডেলিংয়ে নামার পরামর্শ দেন।
সময় কাটানোর জন্য মডেলিং শুরু করেন মিলিন্দ। কর্মসূত্রে এক নামী আলোকচিত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। তাঁর কাছেই ফোটোশুট করান মিলিন্দ। তার পর বিজ্ঞাপন সংস্থার কাছে সেই ছবিগুলি জমা করেন তিনি।
নামী বিজ্ঞাপন সংস্থার তরফে ডাকও পেয়ে যান মিলিন্দ। পাঁচ বছর এ ভাবে কাজ করার পর মডেলিং জগতে নিজের পরিচিতি তৈরি করে ফেলেন তিনি। বিজ্ঞাপনে কাজ করার সময় বলি পরিচালক গোবিন্দ নিহালানির নজরে পড়েন মিলিন্দ।
যে স্টুডিয়োয় বিজ্ঞাপনের জন্য মিলিন্দ শুট করছিলেন, সেই স্টুডিয়োতেই ছবির শুটে ব্যস্ত ছিলেন গোবিন্দ। মিলিন্দকে দেখে তিনি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। তবে তার আগে অবশ্য তিনি মিলিন্দকে থিয়েটারে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন ।
মিলিন্দের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার আগেই গোবিন্দ ‘দ্রোহকাল’ ছবির কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ‘কুরুক্ষেত্র’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য ডাক পান মিলিন্দ।
১৯৯৩ সালে ‘পাপিহা’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করেছিলেন মিলিন্দ। তার পর আর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সিনেমা এবং ধারাবাহিকে কাজ পাচ্ছিলেন মিলিন্দ।
১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ফরেব’ ছবিতে মিলিন্দের অভিনয় বহুল প্রশংসা পায়। খলনায়কের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করতেন বলে ছবি নির্মাতারা তাঁর কাছে নেতিবাচক চরিত্রে কাজ করার প্রস্তাব নিয়েই যেতেন।
‘বিরাসত’, ‘গ়ডমাদার’, ‘দেবদাস’, ‘এলওসি: কার্গিল’, ‘জিস দেশ মে গঙ্গা রহেতা হে’, ‘ফির হেরা ফেরি’র মতো হিন্দি ছবিতে কাজ করেছেন মিলিন্দ। মরাঠি, তামিল এবং তেলুগু ভাষার ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গেছে তাঁকে।
অভিনয়ের পাশাপাশি, ছবি তুলতেও ভালবাসেন মিলিন্দ। পুণেতে নিজের তোলা ছবির প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন তিনি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া মিলিন্দের শখ।
মরাঠি সংবাদপত্রে ভ্রমণ সম্পর্কিত বহু প্রবন্ধ লিখেছেন মিলিন্দ। প্রকাশিত সেই প্রবন্ধগুলিই পরে বই আকারে বার করেন তিনি। এ ছাড়াও আরও ১১টি বই মিলিন্দ লিখেছেন।
ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে মিলিন্দকে। সিনেস্তানকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন যে, সঞ্জয় লীলা ভন্সালী ‘দেবদাস’ ছবিতে কালীবাবু চরিত্রটি মিলিন্দের কথা মাথায় রেখে তৈরি করেছিলেন।
৬১ বছর বয়সি মিলিন্দ এখনও বেড়ানো এবং ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত রাখেন নিজেকে। খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন মিলিন্দ। সমাজমাধ্যমে তাঁর অনুরাগী সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এখনও পর্যন্ত ইনস্টাগ্রামে মিলিন্দের অনুরাগী সংখ্যা ৫০ হাজারের গণ্ডি পার করে গিয়েছে।