আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে বলিপা়ড়ায় কৌতুকাভিনেতা হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন গোবিন্দ। কেরিয়ারে সাফল্যের স্বাদ পেলেও এক সময় এমন আসে যে অভিনেতা তাঁর জীবনে কী করবেন তা ঠাহর করতে পারছিলেন না। অভিনয়জগৎ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। সেই দুঃসময়ে তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন।
কপিল শর্মার রিয়্যালিটি শোয়ে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গোবিন্দ। সেখানেই অমিতাভ প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। গোবিন্দ জানান, তিনি যখন খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন অমিতাভ।
গোবিন্দ জানান, ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি অনেক বার মৃত্যুকে চোখের সামনে দেখেছেন। গোবিন্দের কন্যাসন্তান মাত্র ৪ মাস বয়সে মারা যায়।
পরিবারের একাধিক সদস্যকে পর পর মারা যেতে দেখেছিলেন গোবিন্দ। এক বছরের মধ্যে তিনি একাধিক আপনজনকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি পেশাগত জীবনেও প্রভাব পড়তে থাকে গোবিন্দের। তিনি যখন মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়েছেন, তখন বলিউডেও তাঁকে নিয়ে নানা রকম বিতর্ক এবং সমালোচনা শুরু হয়।
গোবিন্দের নামের সঙ্গে ‘অপেশাদার’ শব্দটি জুড়ে দিতে থাকে বলিপাড়া। শুটিংয়ের সময় অভিনেতা নাকি সঠিক সময়ে পৌঁছন না। অভিনেতার আচরণে অপেশাদারিত্বের ছাপ রয়েছে বলেও দাবি করতে থাকেন অনেকে।
বিধ্বস্ত অভিনেতা কোনও ছবিতে অভিনয় না করে বাড়িতে বসেছিলেন। শোয়ে অভিনেতা জানান, সেই খারাপ সময়ে গোবিন্দের সঙ্গে দেখা করতে যান অমিতাভ।
গোবিন্দ জানান, অমিতাভকে আসতে দেখে হাতজোড় করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। গোবিন্দের পরিস্থিতি দেখে অবাক হয়ে যান অমিতাভ।
অমিতাভ চাইছিলেন গোবিন্দ যেন তাড়াতাড়ি অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু গোবিন্দ জানান, তাঁর মানসিক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, তিনি অদূর ভবিষ্যতেও কোনও ছবিতে কাজ করবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
গোবিন্দের উত্তর শোনার পরেও তাঁকে অভিনয় করারই পরামর্শ দেন অমিতাভ। ‘বিগ বি’ সঙ্গে সঙ্গে গোবিন্দকে বলেন, ‘‘আমি চাই তুমি একটি ছবিতে অভিনয় করো।’’ তার পর ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন গোবিন্দকে।
গোবিন্দ অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে অমিতাভকে বলেন, ‘‘আপনি জানেন দেরি করে পৌঁছনোর জন্য আমার নাম খারাপ হয়ে রয়েছে। অনেকে এই পরিস্থিতির সুবিধাও নিয়ে চলেছেন।’’
গোবিন্দ পরে অমিতাভকে জানান, অমিতাভের যদি কোনও সমস্যা না থাকে তা হলে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে রাজি গোবিন্দ। ছবির বিষয়ে তিনি অমিতাভের কাছে অন্য কিছু জানতে চাইবেন না বলে দাবি করেন গোবিন্দ।
গোবিন্দের কাছে সমস্ত শোনার পর কোনও রকম আপত্তি জানাননি অমিতাভ। ১৯৯৮ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’। এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ডেভিড ধওয়ান। অমিতাভের পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করেন গোবিন্দ, রবীনা টন্ডন, পরেশ রওয়াল, অনুপম খেরের মতো তারকারা।
গোবিন্দ জানান, ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’ ছবির চিত্রনাট্যের খসড়া পর্যন্ত শোনেননি তিনি। অমিতাভের কথা শুনেই সেই ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন।
প্রতি দিন ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’ ছবির সেটে গিয়ে গোবিন্দ জেনে নিতেন তাঁকে কোন দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে। সেই মতো অভিনয় করে ফিরে যেতেন তিনি।
‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’র প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পরেও নাকি এই ছবিতে আর কে কে অভিনয় করছেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন করেননি গোবিন্দ।
‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’ ছবিটি মুক্তির পর বক্স অফিসে দারুণ ব্যবসা করে। এমনকি ছবির গানগুলিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, খারাপ সময়ে গোবিন্দের পাশে অমিতাভ দাঁড়িয়েছিলেন বলেই ‘বিগ বি’র প্রস্তাবে বিনা বাক্যব্যয়ে রাজি হয়ে যান গোবিন্দ।