অভিনয়জগতে আসার পর বলিপাড়ার বহু তারকা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে দর্শকের মনে আলাদা জায়গা রয়েছে তাঁদের। কিন্তু নেতা হিসাবে তাঁরা আদৌ সফল হতে পেরেছেন কি? কেন-ই বা অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিতে আসেন তারকারা, তা নিয়ে মুখ খুলেছেন বলি অভিনেতা আমজাদ খান।
সম্প্রতি বলিপাড়ায় আমজাদের দেওয়া একটি পুরনো সাক্ষাৎকারের অংশ ঘোরাফেরা করছে। বলিপাড়ার তারকারা কী কারণে রাজনীতিতে নামেন তা খোলসা করেছেন আমজাদ।
বলিপাড়ার কয়েক জন অভিনেতার নামও উঠে এসেছে আমজাদের ওই সাক্ষাৎকারে। অমিতাভ বচ্চন এবং রাজেশ খন্নার মতো অভিনেতার নাম উল্লেখ করেছেন আমজাদ।
আমজাদ বলেছেন, ‘‘বলিপাড়ার কয়েক জন অভিনেতা রয়েছেন, যাঁরা রাজনীতিতে এসেছেন নিজেরা সুবিধা পাবেন বলে। দেশবাসীর সেবা করতে আসা তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল না।’’
আমজাদের মন্তব্য, অভিনেতাদের মধ্যে শুধুমাত্র সুনীল দত্ত দেশের সেবা করার জন্য রাজনীতিতে এসেছিলেন। তাই দীর্ঘ দিন ধরে তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে দাবি আমজাদের।
কিন্তু অমিতাভ এবং রাজেশের মতো অভিনেতাদের উদ্দেশ্যই ছিল ‘আলাদা’। নিজেদের স্বার্থে রাজনীতিতে এসেছিলেন তাঁরা। এমনটাই দাবি আমজাদের।
আমজাদের বক্তব্য ছিল, অমিতাভ এবং রাজেশ কখনওই দেশের লোকের জন্য কিছু করেননি। আমজাদের বলেছিলেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রিতে সফল হয়েই সকলে রাজনীতিতে নামেন। কিন্তু তাঁদের ভারতকে কিছু দেওয়ার থাকে না। ভারতের লোককেও কিছু দেওয়ার থাকে না। তাঁরা খালি নিজেদের সুবিধা বোঝেন।’’ বহু বছর আগে এই সাক্ষাৎকার দেওয়া হলেও তা নিয়ে বলিপাড়ায় আবার চর্চা শুরু হয়েছে।
দুই দশক অভিনয়জগতে থেকে ১৩২টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন ‘শোলে’র গব্বর সিংহ। ১৯৪০ সালের ১২ নভেম্বর মুম্বইয়ে জন্ম আমজাদের।
মুম্বইয়ে থাকাকালীন স্কুল এবং কলেজের গণ্ডি পাশ করেছেন আমজাদ। তবে কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি থিয়েটারেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
তবে অভিনয় জগতের সঙ্গে আমজাদের পরিচয় ১১ বছর বয়সেই। ১৯৫১ সালে ‘নাজনীন’ ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে কাজ করেছিলেন তিনি। তার ৬ বছর পর ১৯৫৭ সালে ‘অব দিল্লি দূর নেহি’ ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে আমজাদকে।
১৯৬০ সালে ‘লভ অ্যান্ড গড’ ছবিতে পরিচালক কে আসিফকে সাহায্য করেছিলেন আমজাদ। এই ছবিতে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৭১ সালে পরিচালক মারা যাওয়ায় এই ছবি মুক্তি পেতেও দেরি হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৬ সালে ছবিটি মুক্তি পায়।
১৯৭৫ সালে ‘শোলে’ মুক্তি পাওয়ার পর আমজাদকে আর নিজের কেরিয়ারে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নেতিবাচক চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে সকলের মন জিতে নিয়েছিলেন তিনি। তাই অভিনেতার কাছে এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য বার বার প্রস্তাব আসতে থাকে।
কিন্তু ‘শোলে’ মুক্তি পাওয়ার দু’বছর পর সত্যজিৎ রায় বড় পর্দায় নতুন রূপে আমজাদের অভিনয় তুলে ধরেন। ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ ছবিতে আমজাদের অভিনয়ও দর্শকের মনে রাখার মতো।
‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ ছবিতে অভিনয় করার পর ইতিবাচক চরিত্রেও দুর্দান্ত অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে আমজাদকে। এই ছবিতে আমজাদকে দিয়ে গানও গাইয়েছিলেন সত্যজিৎ। অভিনয়ের সঙ্গে পরিচালনার দিকে আগ্রহী হয়ে পড়েন আমজাদ।
১৯৮৩ সালে আমজাদের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘চোর পুলিশ’ ছবিটি। কিন্তু সেই ছবি একদম ব্যবসা করতে পারেনি। বরং আমজাদের পরিচালনায় ১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আমির আদমি গরিব আদমি’ ছবিটি বক্স অফিসে হিট হয়।
বলিউডে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন আমজাদ। কিন্তু সাফল্য বেশি দিন উপভোগ করতে পারেননি তিনি। ১৯৯২ সালে মাত্র ৫১ বছর বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান ‘গব্বর সিংহ’।