হিন্দি ফিল্মজগতে পাঁচ দশক কাটিয়ে ফেলেছেন অমিতাভ বচ্চন। এই সময়ের মধ্যে দুশোটির বেশি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন ‘বিগ বি’। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা সংস্থাও খুলে ফেলেছিলেন তিনি।
১৯৯৬ সালে নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা খোলেন অমিতাভ। হিন্দি ছবির পাশাপাশি দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও প্রযোজক হিসাবে নিজের জায়গা তৈরি করে নিচ্ছিলেন তিনি।
তেলুগু, তামিল, মালয়ালম ছবির প্রযোজনা করতে শুরু করেছিলেন অমিতাভ। কিন্তু বক্স অফিসে কোনও ছবিই সফল হয়নি। ১৯৯৮ সালে ‘মেজর সাব’ ছবিটি প্রযোজনা করেছিলেন তিনি।
‘মেজর সাব’ ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন টিনু আনন্দ। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ নিজেই। এ ছাড়া অজয় দেবগন, সোনালি বেন্দ্রের মতো তারকারাও কাজ করেছিলেন।
টিনুর পরিচালনায় ‘মেজর সাব’ ছবির শুটিংও চলছিল পুরোদমে। অ্যাকশন ঘরানার ছবি হওয়ার কারণে পরিচালক হিসাবে টিনুকেই বেছে নিয়েছিলেন অমিতাভ। অমিতাভ বিশ্বাস করতেন, টিনু যথেষ্ট নিপুণ ভাবে বড় পর্দায় অ্যাকশন দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে পারেন।
কিন্তু সেটের মধ্যে অমিতাভের সঙ্গে টিনুর কথা কাটাকাটি হয়। একটি অ্যাকশন দৃশ্য শুট হয়ে যাওয়ার পর তা অমিতাভের মনে ধরেনি। তিনি সেই কথা টিনুকে জানান।
অমিতাভের মনে হয়েছিল অন্য ভাবে অ্যাকশন দৃশ্যটি শুট করার। টিনুকে তিনি অনুরোধ করেন, আরও এক বার যেন দৃশ্যটি শুট করা হয়। কিন্তু অমিতাভের কথায় টিনু বেঁকে বসেন।
টিনু সরাসরি অমিতাভকে জানিয়ে দেন যে, তিনি একই দৃশ্য বার বার শুট করতে রাজি নন, তাঁর অত সময় নেই।
অমিতাভের প্রস্তাবে টিনু মুখ ফিরিয়ে নিলে ‘বিগ বি’ বলেন, ‘‘আমি এই ছবির প্রযোজক। আমারও কিছু মতামত থাকতে পারে।’’ অমিতাভের জবাবে চুপ থাকেননি টিনু।
অমিতাভকে পাল্টা জবাব দিয়ে টিনু বলেন, ‘‘আপনি এই ছবির প্রযোজক হলে আপনি পরিচালনার কাজটুকুও করে নিন।’’ এই বলে সেট ছেড়ে চলে যান টিনু।
টিনু পরিচালনার কাজ মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে সেট ছেড়ে বেরিয়ে গেলে অমিতাভ বিপদে পড়ে যান। কী ভাবে ছবির বাকি কাজ শেষ করবেন তা বুঝতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান অজয় দেবগন।
অমিতাভের বিপদ দেখে অজয় বলেন, ‘‘আমি এই ধরনের দৃশ্য টুকটাক পরিচালনা করতে পারব। আপনি যদি ভরসা করেন, তা হলে চেষ্টা করতে পারি।’’
অজয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান অমিতাভ। অজয় তাঁর সাহায্য করার জন্য তাঁর বন্ধু পরিচালক রোহিত শেট্টিকে ডেকে পাঠান। তার পর বাকি ছবির শুটিং অজয় নিজেই পরিচালনা করেন।
কিন্তু বলিপাড়ার একাংশের দাবি, সেটে অমিতাভ এবং টিনুর মধ্যে কোনও ঝগড়াই হয়নি। শুটিংয়ের মাঝে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি পরিচালনার কাজ থেকে বিরতি নিয়ে নেন। বাকি কাজ অজয় শেষ করেন।
এমনকি, ‘মেজর সাব’ ছবিতে একটি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করারও কথা ছিল টিনুর। কিন্তু অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাঁকে। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করেন বিকাশ আনন্দ। সুস্থ হলে টিনু তাঁর চরিত্রের সংলাপ ডাবিং করেন বলে বলিপাড়া সূত্রে খবর।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অজয় জানিয়েছেন যে, ‘মেজর সাব’ ছবির শুটিংয়ের সময় অমিতাভ এবং অজয় দু’জনেই চোট পান। একটি অ্যাকশন দৃশ্যে প্রায় ত্রিশ ফুট উঁচু জায়গা দিতে লাফ দিতে হত। জায়গাটি প্রায় তিন তলা উঁচু বাড়ির সমান।
অজয় বার বার অমিতাভকে অনুরোধ করেছিলেন যে, তাঁরা ‘বডি ডাবল’দের দিয়ে সেই দৃশ্যটি শুট করিয়ে নেবেন। কিন্তু অজয়ের প্রস্তাবে রাজি হননি অমিতাভ। দুই অভিনেতা নিজেই সেই দৃশ্যে অভিনয় করেন এবং অত উঁচু জায়গা থেকে লাফানোর কারণে চোট পান দু’জনেই।