ত্রিকোণ সম্পর্ক। ৩ জনই ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। সম্পর্কের জটিলতায় ৩টি জীবন ছারখার হয়ে যায়। প্রেমিকার জন্য স্ত্রীকে খুন করেছিলেন দেশের এক খ্যাতনামী ব্যবসায়ী পরিবারের পুত্র। যে ঘটনায় হইচই পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে।
পরকীয়ার ভয়ঙ্কর পরিণতির এমন অনেক দৃষ্টান্তেরই সাক্ষী থেকেছে দেশ। তবে ২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে এক হত্যাকাণ্ড আলাদা করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। এক নামী ব্যবসায়ী পরিবারের পুত্রবধূকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযুক্ত ছিলেন তাঁরই স্বামী।
দেশের এক নামী বিস্কুট প্রস্তুতকারক সংস্থার মালিক ওমপ্রকাশ শ্যামদাসানি। যিনি ‘বিস্কুট ব্যারন’ নামেই পরিচিত। তাঁর পুত্রের কিস্সায় শিহরিত হয়ে উঠেছিল গোটা দেশ। ঠিক কী ঘটেছিল?
জবলপুরের ব্যবসায়ী শঙ্কর নাগদেবের কন্যা জ্যোতির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল শ্যামদাসানির পুত্র পীযূষের। বিয়ের পর দেশের আর এক ব্যবসায়ী পরিবারের কন্যার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন পীযূষ।
মনীষা মাখিজা নামে ওই তরুণীর প্রেমে আচ্ছন্ন হয়েছিলেন পীযূষ। প্রেমিকার জন্যই জ্যোতিকে নিজের জীবন থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন তিনি।
জ্যোতিকে অপহরণ করে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন পীযূষ। তবে তিনি নিজে খুন করেননি। এ জন্য কাজে লাগিয়েছিলেন প্রেমিকার গাড়িচালক এবং তাঁর সহযোগীদের। কী ভাবে খুন করা হয়েছিল?
২০১৪ সালের ২৭ জুলাই খুন হন জ্যোতি। তাঁকে ১৭ বার কুপিয়ে হত্যা করা হয়। উদ্ধার করা হয় রক্তাক্ত দেহ।
পুলিশকে পীযূষ সেই সময় জানিয়েছিলেন যে, নৈশভোজ করতে জ্যোতিকে নিয়ে একটি রেস্তরাঁয় গিয়েছিলেন তিনি। নৈশভোজ শেষে সেখান থেকে গাড়িতে ওঠার সময় বাইকে করে কয়েক জন দুষ্কৃতী এসে তাঁর স্ত্রীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে চম্পট দেন।
কানপুরের পনকি এলাকা থেকে সে দিন গাড়ি-সহ জ্যোতির রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। কিন্তু পীযূষের ওই দাবি ধোপে টেকেনি। পীযূষের আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তার পরই তিনি ভেঙে পড়েন। খুনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পীযূষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। স্বীকার করেন খুনের কথা।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, মনীষার সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই স্ত্রীকে খুন করান পীযূষ। আর এই জন্য স্ত্রীকে অপহরণের গল্প সাজান তিনি।
খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় মনীষাকেও। জ্যোতিকে খুনের ঘটনায় জড়িত অধবেশ ছিলেন মনীষার গাড়িচালক। অধবেশ এবং তাঁর সঙ্গীদের দিয়েই স্ত্রীকে খুন করান পীযূষ।
পুলিশ জানিয়েছিল, সে দিন রেস্তরাঁ থেকে নৈশভোজ সেরে জ্যোতিকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পীযূষ। মাঝপথে গাড়ি থামান তিনি। সেখানেই দাঁড়িয়েছিলেন অবধেশ এবং তাঁর দুই সঙ্গী সোনু আর রেনু। বাইকে করে পীযূষদের পিছু নিয়েছিলেন আশিস নামে আরও এক যুবক।
এর পরই গাড়ি থেকে নেমে পড়েন পীযূষ। স্টিয়ারিংয়ে বসেন অবধেশ। জ্যোতি চিৎকার করার আগেই তাঁর মুখ চেপে ধরেন বাকি অভিযুক্তরা। চলন্ত গাড়িতেই জ্যোতিকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। কোপানোও হয় তাঁকে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর জ্যোতিকে ওই অবস্থায় ফেলে চম্পট দেন অভিযুক্তরা।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছিল যে, মনীষাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পীযূষ। আর সেই কারণেই জ্যোতিকে খুনের ছক কষেন তিনি। শোনা গিয়েছিল, শুধু মনীষা নন, বিস্কুট কারখানায় এক মহিলা কর্মীর সঙ্গেও বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল পীযূষের।
এই ঘটনায় পীযূষ এবং তাঁর প্রেমিকা মনীষা-সহ ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল কানপুর জেলা আদালত।