চলতি বছরেই আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার আগে যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত আমেরিকার বিত্তশালীদের মাথায়। বজ্রের নাম জেফ্রি এপস্টিনের নথি।
এত দিন মুখবন্ধ খামে বন্দি ছিল। আদালতের নির্দেশে খামের মুখ খোলা হতেই কাঁপুনি ধরে গিয়েছে আমেরিকার ‘উচ্চ মহলে’। কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টিনের নথি প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে আমেরিকার তাবড় ব্যক্তিত্বের চরিত্রের নিকষ কালো দিক।
জেফ্রি এডওয়ার্ড এপস্টিন। আমেরিকার ধনকুবের। যাঁর বিরুদ্ধে কম করে ৪০ জন মহিলা যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন। প্রত্যেকেই জানিয়েছিলেন, তাঁরা ধনকুবেরের ইন্দ্রিয়াসক্তির শিকার হয়েছিলেন অল্প বয়সে। কেউই তখনও ১৮ উত্তীর্ণ হননি।
অর্থের জোরে নাবালিকাদের অপরিণতমনস্কতার সুযোগ নিয়েছিলেন এপস্টিন। কখনও ইচ্ছের বিরুদ্ধে, কখনও ভয় দেখিয়ে সহবাস করেছেন তাঁদের সঙ্গে। সেই অত্যাচারের বিবরণও নানা ভাবে সামনে এসেছে বহু বার।
সেই জেফ্রি এপস্টিনের নথিতেই প্রকাশ্যে এসেছে বিশ্বের তাবড় তাবড় ব্যাক্তিদের নাম। তালিকায় কার নাম নেই! আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বিল্ ক্লিন্টন থেকে স্টিফেন হকিং, মাইকেল জ্যাকসন, প্রিন্স অ্যান্ড্রু, ল্যারি পেজ, সকলেই বহাল তবিয়তে উপস্থিত নথিতে।
এপস্টিনের নথি অনুযায়ী, এঁরা প্রত্যেকেই তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় যৌনাচারে যুক্ত ছিলেন। আদালতের নির্দেশে খামের মুখ খোলার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল ১ জানুয়ারির পর থেকে। সেই প্রক্রিয়া নিয়মমাফিক শুরুও হয়ে গিয়েছে।
তাতেই ভূমিকম্প শুরু হয়ে গিয়েছে তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্বের ড্রয়িংরুমে। আগামিদিনে আরও স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাবে, এই সমস্ত দুনিয়া কাঁপানো ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এপস্টিনের সম্পর্কের খুঁটিনাটি।
এই নথিতে মূলত রয়েছে এপস্টিনের সঙ্গে যোগাযোগের ফলে কে যৌন আকাঙ্ক্ষা কী ভাবে পূর্ণ করেছিলেন, তার সালতামামি। ফলে, সুনামি সদ্য শুরু!
যৌন নিগ্রহের শিকার ভার্জিনিয়া জিউফ্রে এপস্টিনের সঙ্গী তথা ব্রিটিশ সমাজকর্মী ঘিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। সেই মামলার সূত্র ধরেই একে একে প্রকাশ্যে আসছে বিখ্যাত সব নাম।
প্রসঙ্গত, যৌন অপরাধী এপস্টিনকে ২০১৯ সালে জেলে পাঠানো হয়েছিল। জেলেই আত্মঘাতী হন তিনি। এপস্টিনের পর ২০২১ সালে যৌন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ঘিসলাইনকেও। ঘিসলাইন ম্যাক্সওয়েল। জেফ্রির প্রেমিকা ছিলেন। তিনি বর্তমানে ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
দিনে অন্তত তিন বার মিলনেচ্ছু হতেন জেফ্রি। তাঁর সেই চাহিদা একা সামাল দিতে পারতেন না জেফ্রির প্রেমিকা। তাই প্রেমিকের চাহিদার জোগান দেওয়ার জন্য অসহায় মহিলাদের সঙ্গে জেফ্রির পরিচয় করিয়ে দিতেন ম্যাক্সওয়েল।
তখনই জানা গিয়েছিল ম্যাক্সওয়েল শুধু জেফ্রির চাহিদার জোগান দিতেন তা-ই নয়। ইংল্যন্ডের রাজপুত্র অ্যান্ড্রু, যাঁর নামও একবার যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিল, তাঁর সঙ্গেও দহরম মহরম ছিল ম্যাক্সওয়েলের।
তখনই বোঝা গিয়েছিল জেফ্রির শিকড় অনেক গভীরে। এখন আদালতে নির্দেশে জেফ্রির নথি খোলা শুরু হতেই যেন ভূমিকম্প শুরু হয়েছে আমেরিকার উচ্চ মহলে।
আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল্ ক্লিন্টনকে এপস্টিনের নথিতে সম্বোধন করা হয়েছে ‘ডো ৩৬’ নামে। এখনও পর্যন্ত মোট ৫০ বার তাঁর নাম ঘুরেফিরে এসেছে সদ্য মুখখোলা নথিতে। এ ছাড়াও রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম।
বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রু, বিনোদন জগতের মাইকেল জ্যাকসন, লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, জর্জ লুকাস, জেসন রিচার্ডস, কেভিন স্পেসি, ব্রুস উইলিস, ড্যানিয়েল উইলসনের নাম উল্লেখযোগ্য।