Bobby Murder in Bihar

খুন জেনেও প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ! বিধানসভার তরুণী টাইপিস্ট খুনে কি যুক্ত ছিল বড় মাথা?

শ্বেতনিশা রানির মৃত্যুরহস্যের জট আজও কাটেনি। পুলিশের দাবি, খুন করা হয়েছিল তাঁকে। যদিও তার সপক্ষে প্রমাণ দিয়ে উঠতে পারেনি বিহার পুলিশ।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
পটনা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:০৪
Share:
০১ ১৬

তাঁকে দেখে চোখ ফেরানো ছিল মুশকিল। পটনার প্রভাবশালী মহলে ছিল তাঁর ওঠা-বসা। রাজনীতিক থেকে আমলা, অনেকের সঙ্গেই ছিল সম্পর্ক। সেই শ্বেতনিশা রানির মৃত্যুর রহস্য জট আজও কাটেনি। পুলিশের দাবি, খুন করা হয়েছিল তাঁকে। যদিও তার সপক্ষে প্রমাণ আর দিয়ে উঠতে পারেনি বিহার পুলিশ।

০২ ১৬

পরিচিত বৃত্তে শ্বেতনিশা পরিচিত ছিলেন ববি নামে। বিহার বিধানসভায় টাইপিস্টের চাকরি করতেন তিনি। ১৯৮৪ সালের ৮ মে ভোরবেলা মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। চার ঘণ্টার মধ্যেই সমাধিস্থ করা হয় ববির দেহ। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৫ বছর।

Advertisement
০৩ ১৬

ববির মৃত্যু নিয়ে একাধিক রহস্য দানা বেঁধেছিল। তাঁর মৃত্যুর দু’টি শংসাপত্র ছিল। কী ভাবে সে রকম হল, তা আজও জানা যায়নি। ববির মৃত্যু নিয়ে সরব হয়েছিল বিহারের বিরোধী দলগুলিও।

০৪ ১৬

কংগ্রেস নেত্রী তথা বিধান পরিষদ সদস্য রাজেশ্বরী সরোজ দাসের দত্তক কন্যা ছিলেন ববি। রাজেশ্বরী বিহার বিধান পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন।

০৫ ১৬

পটনার স্ট্র্যান্ড রোডে ছিল রাজেশ্বরীর বাড়ি। ১৯৮৪ সালের ৮ মে ভোর ৪টে থেকে সেই বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়। বেশ কয়েকটি গাড়ি ঢুকতে এবং বার হতে দেখা যায়। চার ঘণ্টা পর ববির কফিনবন্দি দেহ বার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেখান থেকে। পিরমোহনি সমাধিস্থলে ববিকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।

০৬ ১৬

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি। ববির মৃত্যু নিয়ে মামলা দায়ের করেন পুলিশের সিনিয়র সুপার কিশোর কুণাল। কবর থেকে তোলা হয় ববির দেহ। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তেমন ফলপ্রদ হয়নি। কুণাল জানিয়েছিলেন, সেই রিপোর্ট তেমন কোনও তথ্য দিতে পারেনি, তার কারণ, ববির দেহ পচে গিয়েছিল।

০৭ ১৬

ববির ভিসেরার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সাত দিন পর এসেছিল রিপোর্ট। তাতে দেখা গিয়েছিল, ম্যালাথিয়ন খাওয়ানো হয়েছিল ববিকে। ম্যালাথিয়ন এক রকম জৈব কীটনাশক।

০৮ ১৬

ববির মৃত্যুর দু’টি শংসাপত্র নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। প্রথমটি দিয়েছিলেন বিধানসভার চিকিৎসক কে কে ঝা। তিনি মৃত্যুর শংসাপত্রে লিখেছিলেন, ‘‘মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ দেহের ভিতর রক্তক্ষরণ (হ্যামারেজ)।’’

০৯ ১৬

দ্বিতীয় শংসাপত্রটি দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিওলজির চিকিৎসক আশোককুমার ঠাকুর। তিনি জানিয়েছিলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ববির। ভোর সাড়ে ৪টের সময়। অথচ চিকিৎসক ঝা দাবি করেছিলেন, ভোর ৪টের সময় তিনি ববির দেহ পরীক্ষা করেছিলেন।

১০ ১৬

এক জন মানুষের মৃত্যু কখনও দু’টি সময়ে হতে পারে না। আবার দু’টি শংসাপত্রে মৃত্যুর সময়ও ভিন্ন। পুলিশের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল যে, কেন দু’জন চিকিৎসকের থেকে মৃত্যুর শংসাপত্র নেওয়া হয়েছিল।

১১ ১৬

কংগ্রেস নেত্রী তথা ববির মা রাজেশ্বরী দাবি করেছিলেন, মৃত্যুর আগের সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বার হয়েছিলেন ববি। রাতে ফিরেছিলেন। তার পর তাঁর পেটে ব্যথা হয়। রক্তবমি করেন। মৃত্যু হয় ববির। রাজেশ্বরী এ-ও দাবি করেন, মৃত্যুর দিন কয়েক আগে রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন ববি। পুলিশ যখন কংগ্রেস নেত্রীর বাড়িতে তল্লাশি চালান, তখন ববির খুব বেশি জিনিস মেলেনি। একটি সূত্রের দাবি, সেই নিয়ে খটকা লেগেছিল পুলিশের।

১২ ১৬

পরে পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছিল, ৭ মে রাতে ববিকে এক বিধায়কের গাড়িতে পটনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাঁকে সেখানে চারটি ট্যাবলেট খেতে দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসায় পুরোপুরি সাড়া দেওয়ার আগেই ববিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরের দিন ভোরে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর।

১৩ ১৬

পুলিশের অনুমান, হাসপাতালে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল ববিকে। যাতে পরে বিষ দেওয়ার সময় তিনি বাধা দিতে না পারেন।

১৪ ১৬

পটনার উচ্চ মহলে ছোট থেকেই যাতায়াত ছিল ববির। কলেজ ভর্তি হলেও পাশ করতে পারেননি। দু’বার বিয়ে হয়েছিল। দু’বারই ভেঙে গিয়েছিল। দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে দুই সন্তানও ছিল তাঁর। ১৯৭৮ সালে বিহার বিধানসভায় টেলিফোন অপারেটর হিসাবে যোগ দেন। অভিযোগ, তাঁকে নিয়োগ করার জন্য বিশেষ পদ তৈরি করা হয়েছিল। পরে তিনি টাইপিস্ট পদে যোগ দেন।

১৫ ১৬

পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছিল এক মন্ত্রী, কয়েক জন বিধায়ক এবং বিধানসভার এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন ববি। তাঁর মৃত্যুর তদন্তে নামা বিভিন্ন মহল থেকে বাধা পেয়েছিল পুলিশ। বিরোধী নেতা কারপুরি ঠাকুর সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছিলেন। বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন, ববি ‘খুন’-এ অভিযুক্তেরা রয়েছেন মন্ত্রিসভায়। সে কারণেই ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল সেই খুন।

১৬ ১৬

পুলিশের সিনিয়র সুপার কিশোর কুণাল তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘‘আমি একশো শতাংশ নিশ্চিত যে, খুন হয়েছেন ববি।’’ তার পরেও সেই তদন্ত আর এগোয়নি। এক পুলিশ আধিকারিক দাবি করেছিলেন, এই খুনের তদন্তের অগ্রগতি হয়নি কারণ সেখানে জড়িয়ে ছিলেন প্রভাবশালী কিছু রাজনীতিক, মন্ত্রী। কেন ওই চরম পরিণতি হয়েছিল, তা-ও জানা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement