এশিয়ার একেবারে দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ক্ষুদ্র দেশ ভিয়েতনাম। প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে এই দেশটির আয়তন মাত্র তিন লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। থাকেন ন’কোটি মানুষ।
জনসংখ্যা, আয়তন সব দিক থেকেই ‘ক্ষুদ্র’ ভিয়েতনাম। তবে সেখানে সম্প্রতি যে দুর্নীতির খোঁজ মিলেছে, তা একেবারেই ‘ক্ষুদ্র’ নয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্ দুর্নীতির পর্দাফাঁস হয়েছে ভিয়েতনামে।
ভিয়েতনামের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সাইগন কমার্শিয়াল থেকে কোটি কোটি টাকার তছরুপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই তদন্তের সূত্রে উঠে এসেছে এক ভিয়েতনামী বৃদ্ধার নাম।
ট্রুয়ং মি ল্যানকে গত মাসেই গ্রেফতার করেছে ভিয়েতনামের পুলিশ। তাঁর বয়স ৬৭ বছর। লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতির সঙ্গে তিনি যুক্ত বলে অভিযোগ।
ভিয়েতনামের দুর্নীতির ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলা হচ্ছে মি ল্যানকে। তিনিই গোটা বিষয়টিকে পরিচালনা করতেন। এই দুর্নীতির অভিঘাতে ভেঙে পড়তে বসেছে ভিয়েতনামের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা।
অভিযোগ, মোট ১২০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রতারণার শিকার হয়েছে ভিয়েতনামী ব্যাঙ্ক। ভিয়েতনামী মুদ্রায় যা তিন কোটি চার লক্ষ কোটি ডং। ভারতীয় মুদ্রায় এর অর্থ এক লক্ষ চার হাজার কোটি টাকার বেশি। এই অর্থ ভিয়েতনামের মোট জিডিপির তিন শতাংশের বেশি।
কী করতেন মি ল্যান? তিনি রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশের কোনায় কোনায় তিনি নিজের জাল বিস্তর করেছিলেন। ভুরি ভুরি ঋণ নিয়েছিলেন ব্যাঙ্ক থেকে।
যে সংস্থাগুলির মাধ্যমে মি ল্যান ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেন, সেগুলির অধিকাংশই ভুয়ো। ভিয়েতনামের সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাজারের বেশি ভুয়ো সংস্থা খুলেছিলেন ওই বৃদ্ধা।
অভিযোগ, ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরাও ল্যানের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে সকলকে ‘হাত’ করে নিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। পরে সে সব ফাঁস হয়েছে।
দুর্নীতির দায়ে গত বছরেও এক বার গ্রেফতার করা হয়েছিল মি ল্যানকে। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। দুর্নীতির শিকড় কত গভীরে, তা তখনও আন্দাজ করতে পারেনি পুলিশ।
দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত আরও ৮৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২৪ জন রয়েছেন, যাঁরা ভিয়েতনাম সরকারের আধিকারিক। অর্থাৎ, সরকারের ভিতরেও দুর্নীতির শিকড় পৌঁছে গিয়েছে।
ভিয়েতনামের এই দুর্নীতির সঙ্গে অনেকে ২০১০ সালের মালয়েশিয়ার দুর্নীতির তুলনা টানছেন। ৩৭ হাজার কোটি টাকার সেই দুর্নীতি মালয়েশিয়ার সরকারকে টলিয়ে দিয়েছিল।
২০১৬ সাল থেকে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করেছে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট সরকার। তাতে সারা বছরে হাজারের বেশি সরকারি আধিকারিককে বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে দুর্নীতির দায়ে ভিয়েতনামের দুই ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়। তার পরেই পদত্যাগ করেন কমিউনিস্ট সরকারের খোদ স্টেট প্রেসিডেন্ট।
দুর্নীতির কেঁচো খুঁড়তে খুঁড়তে আরও বড় কেউটে বেরিয়ে আসবে, আশাবাদী তদন্তকারীরা। আগামী দিনে আরও বড় মাথাদের গ্রেফতার করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই দুর্নীতি ভিয়েতনামে কমিউনিস্ট সরকারের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি সব দিক থেকে বিপর্যস্ত। সরকারের শীর্ষ পদাধিকারীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ফলে দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ।