ভারতীয় তরুণ প্রজন্মের পছন্দের তালিকায় ঘটছে বদল। খুচরো বাজারের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ‘জেন জ়ি’। কারণ বিলাসবহুল বা দামি পণ্যের জন্য খরচের ক্ষমতা বাড়ছে ভারতীয় তরুণ-তরুণীদের। বিশেষত শহুরে ক্রেতাদের কেনাকাটার ধরনে পরিবর্তন আসছে।
শহুরে ভারতীয়েরা আর দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করতে উৎসাহী নন। এমনকি নিত্য পণ্যের কেনাকাটার বদলে তাঁরা ঝুঁকছেন বেড়াতে যাওয়ার দিকে। বাড়ছে নিত্যনতুন পণ্য বা পরিষেবা বা বিনোদন পরখ করার প্রবণতাও। ভারতীয় ‘জেন জ়ি’র খরচের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে খাবার সরবরাহকারী (ফুড ডেলিভারি) অ্যাপগুলি।
চিকেন বিরিয়ানি থেকে কোল্ড প্লের অনুষ্ঠান— এতেই মজে ‘জেন জ়ি’। গাঁটের কড়ি বেশি খরচ করতেই বেশি উৎসাহী তাঁরা। এক রাতের অভিজ্ঞতার জন্য কয়েক লাখ খরচ করতেও বেশি ভাবতে রাজি নয় নতুন প্রজন্ম। ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ২৭ শতাংশই এই তালিকাভুক্ত।
গবেষণা সংস্থা সিএলএসএ-র সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, নতুন নতুন বেড়াতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা, নিত্যনতুন ফ্যাশন, প্রসাধনী এবং দামি গ্যাজেটের জন্য খরচের পরিমাণ বাড়ছে জেন জ়ির মধ্যে।
‘কোল্ডপ্লে’-র মুম্বই কনসার্টের টিকিট বিক্রি নিয়ে যে উন্মাদনা দেখা দিয়েছে তা প্রমাণ করে দিয়েছে জেনেশুনেও চড়া দামে টিকিট কিনতে রাজি তারা।
দু’টি অনুষ্ঠানের টিকিট অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বুকিং শুরু হয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে যায়। ব্রিটিশ ব্যান্ডটি চাহিদা মেটাতে তৃতীয় শো করার কথা ঘোষণা করে।
কোল্ডপ্লের শোয়ে ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামের ‘লাউঞ্জ’ বিভাগের টিকিটের দাম ধার্য করা হয়েছিল ৩৫ হাজার। সেই একই টিকিট ভায়াগোগোতে তিন থেকে সাত লক্ষ টাকায় বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।
কোল্ডপ্লের অনুষ্ঠানের টিকিট পেতে রবিবার লক্ষ লক্ষ অনুরাগী ভার্চুয়ালি ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। গ্র্যামিজয়ী রক ব্যান্ডটির ‘মিউজ়িক অফ দ্য স্ফিয়ারস ওয়ার্ল্ড ট্যুর’-এর অংশ হিসাবে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মুম্বইয়ে তিনটি শো করার কথা।
কোল্ডপ্লে-র টিকিটের চাহিদা এতটাই বেশি যে, ব্যান্ডটি ১৮ এবং ১৯ জানুয়ারির শোয়ের পর ২১ জানুয়ারি তৃতীয় শো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৯ বছর পর ভারতে আসছে ব্রিটিশ রক ব্যান্ডটি।
ভারতীয় গায়ক দিলজিৎ দোসাঞ্জের শো নিয়েও উন্মাদনা তুঙ্গে ছিল অনুরাগীদের মধ্যে। তাঁর একটি শোয়ের ৭২০০ টাকা দামের টিকিট আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে যায়।
এ বছরে ২৬ অক্টোবর দিল্লির শোয়ের টিকিট বুকিং শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যেই বিক্রি হয় ১০ লাখ টিকিট। টিকিটের দাম ছিল ১৬ হাজার টাকা।
৩০ নভেম্বর কনসার্টের জন্য ভারতে আসার কথা ব্রিটিশ গায়িকা ডুয়া লিপার। মুম্বইয়ে ‘জোম্যাটো ফিডিং ইন্ডিয়া কনসার্ট’-এ যোগ দিতে আসবেন এই বিখ্যাত ব্রিটিশ গায়িকা।
ভারতে আসছেন রক তারকা ব্রায়ান অ্যাডামসও। এর আগে পাঁচ বার ভারতে শো করতে এলেও কখনও কলকাতায় আসেননি কানাডার এই সঙ্গীতশিল্পী। সম্প্রতি অ্যাডামস জানিয়েছিলেন, তিনি তাঁর সঙ্গীত নিয়ে বিশ্ব সফরে বেরোবেন।
গুরুগ্রাম, মুম্বই, বেঙ্গালুরু এবং হায়দরাবাদ ও কলকাতায় শো করতে আসবেন তিনি। ৮ ডিসেম্বর কলকাতার ‘অ্যাকোয়াটিকা’য় রয়েছে ব্রায়ানের শো।
রিপোর্ট বলছে, বিদেশি শিল্পীদের শোয়ের টিকিট দ্রুত বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এই কনসার্টগুলি থেকে আয়োজক সংস্থাগুলি একলপ্তে ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। যা দেশের প্রথম সারির রেস্তরাঁর ৪০ শতাংশের তিন মাসের ব্যবসার সমান।
একই ভাবে পেট ভরাতে অনলাইন খাদ্য সরবরাহকারী অ্যাপের উপরই বেশি নির্ভরশীল হচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা। অ্যাপে ডেলিভারি দিলে অল্প সময়ের মধ্যেই বাড়িতে পৌঁছে যায় খাবার। সময় বাঁচলেও গাঁটের কড়ি খরচ হচ্ছে অনেক বেশি।
রিপোর্ট বলছে দ্রুত পরিষেবা দেয় যে সব রেস্তরাঁ, তাদের সম্মিলিত আয়ের তুলনায় একাই ব্যবসা বাড়িয়েছে একটি অনলাইন খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থা। প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি ব্যবসা বেড়েছে তাদের।
রেস্তরাঁর বুকিং থেকে কনসার্টের টিকিট পর্যন্ত পাওয়া যায় এই অনলাইন খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থার অ্যাপটিতে। তাই সব মিলিয়ে ভাল আয় করেছে সংস্থাটি।
টিকিট বুকিং, হোটেল বুকিং, এমনকি অচেনা জায়গায় পছন্দের টুরিস্ট স্পট খুঁজে বার করতেও বিশেষ কয়েকটি অ্যাপের জুড়ি মেলা ভার। সেই ধরনের একটি অ্যাপও ২৯ শতাংশ বেশি ব্যবসা করেছে।
ফ্যাশন সংক্রান্ত একটি বহুলপ্রচারিত ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর ব্যবসাও ২৮ শতাংশ বেড়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।