বিহারের সরন জেলায় গানের অনুষ্ঠান চলছিল। গান গাইছিলেন নিশা উপাধ্যায়। চলছিল নাচানাচি। আচমকাই ছুটে এল গুলি। পায়ে লাগল গায়িকার। কিছু ক্ষণ পর লুটিয়ে পড়লেন তিনি। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কারা চালাল গুলি? কে এই নিশা?
নিশা এখন পটনার এক হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। ভক্তেরা প্রিয় গায়িকার জন্য প্রার্থনা করছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি।
সরনের গৌর বসন্ত গ্রামের বাসিন্দা। তবে এখন থাকেন পটনায়। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে অনুষ্ঠান করেন।
‘লে লে আয়ে কোকা কোলা’, ‘নবকার মন্ত্র’, ‘ঢোলিদা ঢোল রে’, ‘হাসি হাসি জান মারেলা’— এই গানগুলি মূলত অনুষ্ঠানে গেয়ে থাকেন তিনি। এ সব গান তাঁকে খ্যাতি দিয়েছে।
সমাজমাধ্যমেও দারুণ জনপ্রিয় নিশা। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১ লক্ষ ২৫ হাজার। ভক্তেরা তাঁর সুস্থতা কামনা করেছেন।
কী হয়েছিল সেই রাতে? ৩১ মে সরন জেলার সেন্ধওয়ার গ্রামে বীরেন্দ্র সিংহ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল। অনেকে বলেন, উপনয়নের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। কেউ কেউ দাবি করেছেন গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান চলছিল। সেই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। সেই অনুষ্ঠানেই গান গাইতে গিয়েছিলেন নিশা।
শূন্যে ছোড়া হচ্ছিল গুলি। ভোজপুরী গায়িকা নিশার পায়ে গুলি লাগে। প্রথমে তিনি বুঝতে পারেননি, কী হয়েছে। পায়ে ব্যথা করছিল। তবু গান থামাননি।
কিছু ক্ষণ পরেই মঞ্চেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। নিশা জানিয়েছেন, পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন রক্তপাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে পায়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা অনুভব করেন তিনি। বুঝতে পারেন, কী ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে সভায় হইচই শুরু হয়ে যায়।
সঙ্গে সঙ্গে নিশাকে পটনার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছে যায় তাঁর পরিবার। চিকিৎসকেরা তাঁর পা থেকে স্প্লিন্টার বার করেন।
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, অনুষ্ঠানবাড়িতে আনন্দে শূন্যে গুলি চালাচ্ছিলেন কয়েক জন। একটি গুলি এসে নিশার পায়ে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান অভিযুক্ত যুবক।
খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ। তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, খুব অল্প সময়ে খ্যাতি পেয়েছিলেন নিশা। তাঁকে গুলি করার নেপথ্যে কি সেটাই কারণ? না কি নেহাতই দুর্ঘটনাবশত ছিটকে এসেছে গুলি!
ছাপরার এএসআই সন্তোষ কুমার জয়সওয়াল জানিয়েছেন, গুলিচালনা নিয়ে তদন্ত চলছে।
জনতা বাজার থানার এসএইচও নাসিরুদ্দিন খান জানিয়েছেন, অভিযুক্তের খোঁজ চলছে। তবে এখনও সরকারি ভাবে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
হাসপাতালে একটি সংবাদমাধ্যমকে নিশা জানিয়েছেন, তাঁর ভাগ্য ভাল ছিল বলে সেই রাতে প্রাণে বেঁচেছেন। নয়তো গলা বা শরীরের অন্য কোথাও গুলি লাগতে পারত। তাতে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত। অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে গুলি চালানো বন্ধের দাবি তুলেছেন নিশা।
বিহারের সংস্কৃতি মন্ত্রী জিতেন্দ্র কুমার রায় এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি জানিয়েছে, দোষীরা শিগগিরই শাস্তি পাবেন। আনন্দের অনুষ্ঠানে বন্দুক নিষিদ্ধ করার কথাও বলেছেন। বিহার, উত্তরপ্রদেশ-সহ বেশ কিছু রাজ্যে আনন্দ অনুষ্ঠানে গুলি চালানো হয়। তাতে মৃত্যুর সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের শোনভদ্র জেলায় বিয়ে করতে যাওয়ার পথে গুলি ছুড়ছিলেন বর। সেই গুলি লাগে তাঁর বন্ধুর। বর মণীশ মধেশিয়ার গুলিতে মৃত্যু হয় বাবু লাল যাদব নামে এক যুবকের।
অন্য দিকে, গত এপ্রিলে উত্তরপ্রদেশেরই হাথরস জেলার সালেমপুর গ্রামে বিয়ের আসরে বরের পাশে বসে শূন্যে গুলি ছুড়ছিলেন কনে। সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ মামলা দায়ের করে কনের খোঁজ শুরু করেন। তার জেরে বিয়ের পর ফেরার হয়ে যান কনে।