মোবাইল ফোনের মধ্যে থাকে একাধিক অ্যাপ্লিকেশন। মোবাইল ছাড়া যেমন জীবন অচল, তেমনই অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ ছাড়া মোবাইলও অচল। মোবাইল ফোনের এই অ্যাপগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে অপারেটিং সিস্টেম।
অপারেটিং সিস্টেমকে যে কোনও মোবাইল বা কম্পিউটারের প্রধান চালিকাশক্তি বললে অত্যুক্তি হয় না। বিশ্বের বাজারে মোবাইলগুলিতে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের একচেটিয়া রাজত্ব।
মোবাইল ফোনে অ্যাপল অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহারও প্রচলিত। তবে অধিকাংশ মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রেই অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহৃত হয়। অ্যান্ড্রয়েড ফোন দামেও সস্তা।
অপারেটিং সিস্টেমের এই গুগল নির্ভরতা কাটাতে উদ্যোগী হয়েছে চেন্নাইয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি মাদ্রাস)। ভারত সরকারের সহায়তায় তারা নতুন একটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেছে।
সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত এই অপারেটিং সিস্টেমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভারস’। নামের প্রথম অংশে রয়েছে ‘ভারত’-এর ভার (বিএইচআর) এবং দ্বিতীয় অংশে রয়েছে অপারেটিং সিস্টেমের সংক্ষিপ্ত রূপ বা ওএস।
মাদ্রাস আইআইটি-র সহায়তায় জ্যানডিকে অপারেশন নামের একটি সংস্থা ভারস প্রস্তুত করেছে। সম্প্রতি ভারসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নতুন অপারেটিং সিস্টেমটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে দেখেছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও।
কী বিশেষত্ব রয়েছে ভারসের? প্রচলিত অপারেটিং সিস্টেমগুলির চেয়ে তা কেন আলাদা? কেনই বা তা ব্যবহার করবেন দেশবাসী?
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সব রকমের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা যায় না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অ্যাপ ডাউনলোডেও নিষেধাজ্ঞা থাকে। প্লে স্টোর থেকেই যাবতীয় অ্যাপ ডাউনলোড করতে হয়। তাতে সব অ্যাপ থাকে না।
মূলত মোবাইলে এই অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রেই স্বাধীনতা এনে দেবে ভারস, দাবি নির্মাতাদের। এই অপারেটিং সিস্টেমযুক্ত মোবাইলে অ্যাপ ব্যবহারে কোনও বিধিনিষেধ থাকবে না। এমনকি মোবাইলে আগে থেকে কোনও অ্যাপ বানানোও (ডিফল্ট) থাকবে না।
ব্যবহারকারী নিজের ইচ্ছামতো যে কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করে এই ফোনে ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সাধারণত ক্যামেরা, গুগল ক্রোম, ফটোগ্যালারির মতো বেশ কিছু অ্যাপ আগে থেকে ইনস্টল করা থাকে। ভারসের ক্ষেত্রে থাকবে না সেগুলিও। এনডিএ বা নো ডিফল্ট অ্যাপ সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে ভারসে।
ভারসের ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যবহারকারীকে ইন্টারনেট থেকে এপিকে ফাইল ডাউনলোড করতে হবে। যদিও এপিকে ফাইল ইন্টারনেট থেকে সরাসরি ডাউনলোড করা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। গুগলের তরফে এপিকে ফাইল ডাউনলোড না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে ভারসের পার্থক্য খুব বেশি নয়। অ্যান্ড্রয়েড ওপেন সোর্স প্রজেক্ট বা এওএসপি-র উপর ভিত্তি করেই এই নতুন অপারেটিং সিস্টেমটি তৈরি করা হয়েছে। তবে অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে ভারসের কোনও সাদৃশ্য নেই।
ভারসে ব্যবহার করা হয়েছে লিনাক্স কার্নেল। এই অপারেটিং সিস্টেমযুক্ত ফোনে কোনও অ্যাপই থাকবে না। সম্পূর্ণ অ্যাপশূন্য হবে ভারসের মোবাইল। পরিবর্তে এতে থাকবে প্রাইভেট অ্যাপ স্টোর সার্ভিসেস বা পাস।
পাস হল পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে যাচাই করা এবং সংস্থার নির্দিষ্ট নিরাপত্তা মান পূরণ করা একটি অ্যাপের তালিকা। এই পাসের মাধ্যমে ইচ্ছামতো অ্যাপ ডাউনলোড করা যাবে ভারসের মোবাইলে।
ভারসের উদ্বোধন এবং পরীক্ষামূলক ব্যবহার হয়েছে ঠিকই, তবে কবে থেকে এই অপারেটিং সিস্টেম বাজারে আসবে, তা এখনও জানা যায়নি। এমনকি আদৌ তা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য বাজারে আনা হবে কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়।
বর্তমানে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলক ভাবে ভারস ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে কঠোর নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা রক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। মোবাইল এবং অ্যাপের মাধ্যমে গোপনীয় বার্তাবহন করার দরকার পড়ে।
ভারস অপারেটিং সিস্টেমে প্রায় প্রতিটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপই ব্যবহার করা যাবে। তবে যে অ্যাপগুলিতে গুগল প্লে সার্ভিস প্রয়োজন হয়, সেগুলি ভারসের ক্ষেত্রে কী ভাবে কাজ করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।