লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মায়ানমারে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা। তীব্র ভূকম্পনের জেরে এখনও পর্যন্ত ভারতের প্রতিবেশী দেশে মৃতের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা ১৬৭০। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবারের ভূমিকম্পে বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর।
ভূমিকম্পবিধ্বস্ত এলাকায় এখন শুধুই স্বজনহারাদের কান্নার রোল। হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা চলছে অনেক মানুষের। যাঁরা বেঁচে গিয়েছেন, তাঁদের খাবার, পানীয় জল ও ওষুধ সরবরাহ করার কাজে লেগেছেন উদ্ধারকর্মীরা। পর্যাপ্ত খাবার এবং জল ছাড়াই রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন ঘরবাড়ি হারানো অনেক মানুষ।
ভূমিকম্পের কবলে পড়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে মায়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অনেক ঘরবাড়ি, দোকান। ভূমিকম্প তছনছ করে দিয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়েছিটিয়ে পড়ে রয়েছে রাস্তার উপর। ভূমিকম্পের উৎসস্থলের কাছাকাছি অঞ্চলে প্রচুর বাড়ি ভেঙে পড়েছে।
সেই ধ্বংস এবং অসহায়তার অনেক ছবি ও ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। সে সব দেখে উদ্বেগ এবং শোক প্রকাশ করেছেন অনেকে।
আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কয়েকটি ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। ঘরবাড়ি হারানো মানুষের অসহায়তার ছবিও দেখা যাচ্ছে। তবে হাল ছাড়তে রাজি নন উদ্ধারকারীরা। উদ্ধারকার্যের বেশ কয়েকটি ছবি প্রকাশ পেয়েছে ইতিমধ্যেই।
সেই ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে, উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন তাঁরা। ধ্বংসস্তূপের নীচে কেউ চাপা পড়ে রয়েছেন কি না সেই খোঁজও চলছে। এই কঠিন সময়ে অন্যান্য দেশের কাছে সাহায্য চেয়েছে মায়ানমারের জুন্টা সরকার। ভারত থেকে ১৫ টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে শনিবার সকালেই মায়ানমারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে বিমান।
শুক্রবার সকাল থেকে পর পর ১৫ বার কেঁপেছে ভারতের পূর্ব দিকের প্রতিবেশী দেশটির মাটি। রিখটার স্কেলে প্রথম কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৭। তার পরে ১০ ঘণ্টার মধ্যে ১৪টি ভূমিকম্পের পরবর্তী কম্পন বা ‘আফটারশক’ অনুভূত হয়েছে।
৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই সবচেয়ে শক্তিশালী ‘আফটারশক’টি হয়। রিখটার স্কেলে তার মাত্রা ছিল ৬.৭। উভয় ক্ষেত্রেই কম্পনের উৎসস্থল ছিল মাটি থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। এই দুই কম্পনে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর পরের ‘আফটারশক’গুলি আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেয়। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদও এক বার ভূমিকম্প হয়েছে মায়ানমারে। তার তীব্রতা ছিল ৪.২। ‘আফটারশক’-এর কারণে বার বার বাধার মুখে পড়েছে উদ্ধারকাজ।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স শুক্রবার জানিয়েছে, ভূমিকম্পে মায়ানমারে দু’টি সেতু ভেঙে গিয়েছে। ভূকম্পনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মান্দালয় শহর। সেখানে একটি মসজিদ ভেঙে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ভেঙেছে অনেকগুলি বাড়ি।
মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে শুক্রবার রাতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মায়নমারের জুন্টা সরকারের প্রধান মিন আং লাইং। তিনি বলেন, ‘‘অনেক এলাকায় এখনও বাড়ি ভেঙে পড়ে রয়েছে। উদ্ধারকাজ চলছে। আমরা সাধ্যমতো উদ্ধারকাজ চালাচ্ছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্যও আবেদন জানাচ্ছি।’’ শনিবার সকাল হতে দেখা যাচ্ছে সত্যি হয়েছে তাঁর আশঙ্কা।
গৃহযুদ্ধে জর্জরিত মায়ানমারের বিস্তীর্ণ এলাকা জুন্টা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মনে করা হচ্ছে, সেই সমস্ত এলাকায় ভূমিকম্পের ফলে কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। দেশের অন্তত ছ’টি প্রদেশে শুক্রবার জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে সরকারের তরফে।
মায়ানমারে ভূমিকম্পের জেরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবেশী তাইল্যান্ডও। জোরালো কম্পনের ফলে সেখানকার রাজধানী শহর ব্যাঙ্ককে নির্মীয়মাণ ৩০ তলা একটি বাড়ি ভেঙে পড়েছে হুড়মুড়িয়ে। সেই ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবারই মায়ানমার এবং তাইল্যান্ডের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সাধ্যমতো সমস্ত সাহায্য করতে প্রস্তুত ভারত। এ বিষয়ে তিনি বিদেশ মন্ত্রককে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, শনিবার ভোরে উত্তরপ্রদেশের হিন্ডন বায়ুসেনা স্টেশন থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার সি১৩০জে বিমান মায়ানমারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। তাতে অন্তত ১৫ টন ত্রাণসামগ্রী রয়েছে।
ভূমিকম্পবিধ্বস্ত মায়ানমারে পাঠানো হয়েছে খাবার, কম্বল, তাঁবু থেকে শুরু করে ঘুমোনোর সামগ্রী (স্লিপিং ব্যাগ), সোলার ল্যাম্প, জল পরিশোধক এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র।