কল খুললেই মিলবে গরম জল। এর জন্য আর টন টন জীবাশ্ম-জ্বালানি পোড়াতে হবে না। শীতকালে শহরবাসীর জন্য গরম জল সরবরাহ অব্যাহত রাখতে অভিনব পদ্ধতির আশ্রয় নিল বার্লিন।
কী সেই অভিনব পদ্ধতি? জার্মানির রাজধানী বার্লিনে তৈরি হচ্ছে বিশালাকার একটি থার্মোফ্লাস্ক। তাতে জমা থাকবে গরম জল। সেই জল সরবরাহ করা হবে শহরবাসীকে।
৪৫ মিটার লম্বা এই থার্মোফ্লাস্কটিতে ৫৬০ লক্ষ লিটার গরম জল ধরবে।
কেন এমন ভাবনা? এর নেপথ্যে দু’টি কারণ উঠে আসছে। প্রথমত, পরিবেশের কথা ভেবে জীবাশ্ম-জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমানো।
দ্বিতীয় কারণ, প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল জার্মানি। যুদ্ধের কারণে যে কোনও দিন রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে।
তাই তখনও যাতে শহরবাসীর জন্য গরম জল সরবরাহ অব্যাহত থাকে, সে কারণে এই কেন্দ্রীয় থার্মোফ্লাস্ক তৈরির পরিকল্পনা।
বেসরকারি একটি সংস্থা এই বিশালাকার থার্মোফ্লাস্কটি তৈরি করছে। ঘরে যে ভাবে জল গরম রাখা হয়, এ ক্ষেত্রেও সেই একই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে ।
বাড়িতে জল গরম করার জন্য প্রকারান্তরে জীবাশ্ম-জ্বালানি পড়ানো হয়। এ ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটা হবে না।
তা হলে এর তাপের উৎস কী? এই বৃহৎ থার্মোফ্লাস্কের তাপের উৎস হল সৌর এবং বায়ুশক্তি দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুৎ।
তা ছাড়া বৃহৎ থার্মোফ্লাস্কে এক বার জল গরম হয়ে যাওয়ার পর তা অনেক ক্ষণ গরম থাকবে। তাই বাড়তি বিদ্যুৎ পরে ব্যবহার করার জন্য ব্যাটারির মধ্যে সঞ্চয় করা হবে।
এই থার্মোফ্লাস্কে তাপধারণ ক্ষমতা ২০০ মেগাওয়াট। এটি প্রায় ১৩ ঘণ্টা জল গরম রাখে।
থার্মোফ্লাস্কের জল গরমকালে সব বার্লিনবাসীর গরম জলের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। শীতকালে ১০ শতাংশ চাহিদা মেটাতে পারে এটি।
এ বছরের শেষের দিকে এই দৈত্যাকার থার্মোফ্লাস্কটি তৈরির কাজ শেষ হবে। নেদারল্যান্ডে এমনই এক থার্মোফ্ল্যাস্ক রয়েছে। তবে বার্লিনেরটি তৈরি শেষ হলে এটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম গরম জল রাখার ব্যবস্থা।
এ নিয়ে বার্লিনের এক পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ আধিকারিক বলেন, ‘‘ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বার্লিন জার্মানির অন্যান্য অংশের তুলনায় রাশিয়ার গ্যাস এবং জীবাশ্ম-জ্বালানির উপর নির্ভরশীল। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে যে কোনও দিন জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিতে পারে। তাই আমরা দ্রুত কাজ শেষ করতে চাইছি।’’
জীবাশ্ম-জ্বালানি এবং রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কমাতে দৈত্যাকার থার্মোফ্লাস্ক তৈরির কাজও তাই চলছে দ্রুত গতিতে।