টলিউড অভিনেতা বনি সেনগুপ্তকে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। দু’দিন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। তার পর থেকেই নতুন করে শিরোনামে উঠে এসেছেন টালিগঞ্জের এই তারকা।
২০১৪ সালে রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘বরবাদ’ ছবির হাত ধরে টলিউডে পা রাখেন বনি। তাঁর বাবা বিখ্যাত পরিচালক তথা প্রযোজক অনুপ সেনগুপ্ত। বনির মা পিয়া সেনগুপ্ত এক সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রে চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। এ হেন বনির আসল নামটাই কিন্তু অনেকের অজানা ছিল।
বাবা এবং মায়ের নামের সঙ্গে মিলিয়ে বনির নাম রাখা হয়েছিল অনুপ্রিয়। বড় পর্দার জনপ্রিয়তার আলোয় সেই নাম ঢাকা পড়ে গিয়েছে। টালিগঞ্জে বনি নামেই তাঁর খ্যাতি। সম্প্রতি, রাজনৈতিক খবরের শিরোনামে বনির নাম উঠে আসার পর কেউ কেউ তাঁর আসল নামটিও জানতে পেরেছেন।
বনি কিন্তু একা নন, টলিউডের একগুচ্ছ তারকাই এমন ‘ছদ্মনামধারী’। অর্থাৎ, তাঁদের বাবা, মায়ের দেওয়া ছোটবেলার নাম বিনোদনের জগতে এসে হারিয়ে গিয়েছে। দর্শকেরা তাঁদের চেনেন সম্পূর্ণ অন্য কোনও নামে। তারকাদের সেই ‘ছদ্মনাম’-এর খোঁজ রইল আনন্দবাজার অনলাইনে।
পরিচিত নামের আড়ালে যে টলি তারকার আসল নাম প্রায় কারও জানতে বাকি নেই, তিনি হলেন দেব। মেদিনীপুরের দীপক অধিকারী লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের দুনিয়ায় হয়ে উঠেছেন সকলের প্রিয় ‘দেব’। ওই নামেই তাঁকে সকলে চেনেন।
টালিগঞ্জের আর এক ‘ছদ্মনামধারী’ অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী। নব্বই-এর দশকে অভিনয় জগতে প্রথম পা রেখেছিলেন টোটা। কলেজে পড়াকালীন প্রভাত রায়ের ছবিতে তাঁর প্রথম কাজ। তার পর একের পর এক অফার। অচিরেই টলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতার খ্যাতিলাভ করেন তিনি। সুযোগ পান ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’ ছবিতেও।
তার পর একে একে নানা বাণিজ্যিক এবং আর্টফিল্মে সমান তালে কাজ করেছেন টোটা। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের এই ‘ফেলুদা’র আসল নামটি কিন্তু বেশ বিরল। টোটা আসলে পুষ্পরাগ রায় চৌধুরী।
‘ছদ্মনাম’-এর তালিকায় রয়েছেন যিশু সেনগুপ্তও। ১৯৯৯ সালে বাংলা ছবিতে তাঁর প্রথম কাজ। টেলিভিশনের রিয়্যালিটি শো-তে সঞ্চালনা থেকে শুরু করে ধারাবাহিকে অভিনয়, বড় পর্দায় চুটিয়ে কাজ— সবেতেই যিশুর অবাধ আনাগোনা।
প্রতিভা এবং জনপ্রিয়তার জোরে টলিউড পেরিয়ে বলিউডেও পাড়ি দিয়েছেন যিশু। কাজ করেছেন তেলুগু ছবিতেও। টালিগঞ্জের এই অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেতার আসল নাম বিশ্বরূপ সেনগুপ্ত।
টলিউডের মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবিগুলিতে নায়ক হিসাবে বরাবর জনপ্রিয় জিৎ। ২০০২ সালে ‘সাথি’ ছবির হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে নায়ক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। এর আগে কাজ করেছেন একটি তেলুগু ছবিতেও। বাংলা ধারাবাহিকেও নজর কেড়েছিল জিতের অভিনয়।
৫২ বছর বয়সেও টালিগঞ্জে ‘নায়ক’ জিতের ক্যারিশ্মা ফিকে হয়নি। বাণিজ্যিক ছবিতে তাঁকে দেখে এখনও গলা ফাটান হলভর্তি দর্শক, অনুরাগীরা। জিৎ বাঙালি নন। সিন্ধি সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও তাঁর জন্ম কলকাতার কালীঘাটে। জিতের আসল নাম জিতেন্দ্র মদনানী।
টলিউডের আর এক অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের পুরো নামটিও অনেকের অজানা। হিরণ বাংলা ছবিতে প্রথম কাজ করেন ২০০৭ সালে। ‘ভালবাসা ভালবাসা’, ‘ওলটপালট’, ‘মন যে করে উড়ু উড়ু’, ‘লে হালুয়া লে’, ‘জামাই বদল’-এর মতো একাধিক বাণিজ্যিক ছবিতে এক সময় হিরণ অভিনয় করেছিলেন।
তবে পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর হিরণের অভিনয়ের কেরিয়ার কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায়। তাঁর পুরো নাম হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়। বিনোদনের দুনিয়ায় আসার পর নামটিতে কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছে।
আশি, নব্বইয়ের দশকে বাংলা ছবিতে একচেটিয়া নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। তাঁর ছবি যেমন সুপারহিট, তেমন একাধিক সংলাপ আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
৬৭ বছর বয়সি অভিনেতা চিরঞ্জিৎ বর্তমানে তৃণমূলী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি বারাসতের বিধায়ক। অনেকেই জানেন না, চিরঞ্জিতের আসল নাম দীপক চক্রবর্তী।
‘ছদ্মনামী’ নায়কদের ভিড়ে লুকিয়ে আছেন এক নায়িকাও। তিনি অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের কন্যা কোয়েল মল্লিক। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের প্রথম সারির এই নায়িকার আসল নামও কিন্তু বহু মানুষের অজানা। কারণ সেই নাম সে ভাবে কখনও প্রচারের আলোয় আসেনি।
২০০৩ সালে ‘নাটের গুরু’ ছবিতে জিতের বিপরীতে নায়িকা হিসাবে প্রথম দেখা গিয়েছিল কোয়েলকে। তার পর থেকে নানা স্বাদের বাংলা ছবিতে একচেটিয়া অভিনয় করেছেন তিনি। কোয়েলের আসল নাম রুক্মিণী মল্লিক।