প্রতিবেশী নেটো দেশগুলির ‘আগ্রাসনের’ জবাব দেবেন পরমাণু হামলা চালিয়ে। হুমকি দিলেন বেলারুসের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। লুকাশেঙ্কো জানিয়েছেন, বেলারুস সীমান্তে আমেরিকার বন্ধু দেশগুলির আগ্রাসনের জবাব হিসাবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবেন তিনি।
সম্প্রতি নেটোর তিন সদস্য দেশ পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া এবং লাটভিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, পুতিনের ‘ব্যক্তিগত বাহিনী’ হিসাবে পরিচিত ওয়াগনার গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে রাশিয়ার বন্ধু রাষ্ট্র বেলারুস।
পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া এবং লাটভিয়া— এই তিন দেশের সঙ্গেই সীমান্ত ভাগ করে নেয় লুকাশেঙ্কোর দেশ। আর এই তিন প্রতিবেশী দেশেই পরমাণু হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন বেলারুস প্রেসিডেন্ট।
সম্প্রতি পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়া দাবি করেছে, নেটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর চাপ বাড়াতে তাদের দেশে ওয়াগনার সেনাদের পাঠানোর বৃহত্তর চক্রান্ত করছে বেলারুস।
পাশাপাশি, বেলারুসের সীমান্তে তারা প্রায় ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করবে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছে পোল্যান্ড। সেনা মোতায়েনের কথা জানিয়েছে লিথুয়ানিয়াও।
বিগত এক বছরে রাশিয়া এবং বেলারুসের মধ্যে যৌথ সামরিক মহড়ার সংখ্যাও বেড়েছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বেলারুসের তিন প্রতিবেশী দেশ।
বেলারুসের দাবি, সেনা মোতায়েন করার যে সিদ্ধান্ত প্রতিবেশীরা নিয়েছে, তা মোটেও বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। ওয়াগনার সেনাকে আশ্রয় দেওয়ার যুক্তিকেও প্রতিবেশীদের ‘আকাশকুসুম কল্পনা’ বলে মন্তব্য করেছে বেলারুস।
সীমান্তে প্রতিবেশীদের সেনা মোতায়েনকে ‘আগ্রাসন’ বলে উল্লেখ করে পাল্টা পরমাণু হামলা চালানোর হঙ্কার দিয়েছেন বেলারুসের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো।
বৃহস্পতিবার বেলারুসের এক রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে লুকাশেঙ্কো বলেন, ‘‘যদি পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া বা লাটভিয়ার দিক থেকে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করা হয়, তা হলে আমরা তার জবাব দেব। আমরা যে জবাব দেব, তা অনেকেই সহ্য করতে পারবে না।’’
কিন্তু ইউরোপের মাঝারি আয়তনের এই দেশ পরমাণু হামলার হুমকি দেওয়ার মতো সাহস কোথা থেকে জোটাল? তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে অনেক দেশ।
উল্লেখযোগ্য যে, গত মাসেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের থেকে ‘উপহার’ পেয়েছেন লুকাশেঙ্কো। দেশের শত্রুদের আটকানোর জন্য বেলারুসের হাতে নাকি পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার তুলে দিয়েছে বন্ধু রাশিয়া।
যদিও রাশিয়া সম্প্রতি মিনস্ক (বেলারুসের রাজধানী)-এর হাতে কী পরিমাণে পরমাণু অস্ত্র তুলে দিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে আমেরিকার প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ)-এর এক ঊর্ধ্বতন কর্তা সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’কে জানিয়েছেন, বেলারুসের হাতে পুতিন যে পরমাণু অস্ত্র তুলে দিয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
তাই মনে করা হচ্ছে, রাশিয়ার বলেই বলীয়ান হয়েছে বেলারুস। ক্ষমতার আস্ফালন দেখাতে শুরু করেছে এই দেশ। আর তার জন্যই নাকি প্রতিবেশী তিন দেশকে হুমকি দিয়ে ফেলেছেন লুকাশেঙ্কো।
লুকাশেঙ্কো বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, প্ররোচিত না করা হলে বেলারুস অন্য কোনও দেশের উপর হামলায় বিশ্বাসী নয়। কিন্তু যদি প্রতিবেশীরা ক্রমাগত উস্কানি দিতে থাকে, তা হলে তিনি হামলা চালানোর আগে দু’বার ভাববেন না।
লুকাশেঙ্কো বলেছেন, “আমাদের প্ররোচিত করলে হামলা চালানোর আগে দু’বার ভাবব না। শত্রুদের আটকাতে আমরা পুরো অস্ত্রাগার খালি করে দেব। সর্বশক্তি নিয়ে আক্রমণ করব।’’
লুকাশেঙ্কোর দাবি, প্রতিবেশী তিন দেশই তাঁদের সঙ্গে পেরে উঠবে না। তিন দেশকেই তিনি এক মাসের মধ্যে বন্দি করে ফেলার ক্ষমতা রাখেন বলেও মন্তব্য করেছেন বেলারুসের প্রেসিডেন্ট।
বেলারুস প্রেসিডেন্ট এ-ও স্পষ্ট করেছেন, কাউকে ভয় দেখাতে তিনি পরমাণু অস্ত্র সঞ্চয় করেননি। তিনি বলেন, ‘‘শুধু ভয় দেখানোর জন্য আমরা পরমাণু অস্ত্র নিয়ে আসিনি। দরকার পড়লে ব্যবহারও করব।’’
লুকাশেঙ্কো বলেন, ‘‘পরমাণু অস্ত্র শত্রুদেশের আগ্রাসন রুখতে খুবই উপযোগী। তাই আমাদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু হলে অবিলম্বে সেই অস্ত্র ব্যবহার করব আমরা।’’
লুকাশেঙ্কোর দাবি, রাশিয়ার দেওয়া পরমাণু অস্ত্রাগার ছাড়া আরও একটি অস্ত্রভান্ডার রয়েছে বেলারুসের হাতে। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনও মন্তব্য করেননি।
প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই যে গুটিকয়েক দেশ পুতিনের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তাদের মধ্যে বেলারুস অন্যতম। যদিও প্রত্যক্ষ ভাবে কখনও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেনি লুকাশেঙ্কোরা।