ইউপিএসসি। লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ের স্বপ্নের চাকরি। আমলা হওয়ার স্বপ্নপূরণের পথ কঠিন। কিন্তু অসম্ভব নয়। সেটা আরও এক বার প্রমাণ করলেন ঝাড়খণ্ডের সৌরভ ভাওয়ানিয়া।
কঠিন পরীক্ষার ধাপ পেরিয়ে তবেই হওয়া যায় আইএএস। তার জন্য দরকার কঠোর অনুশীলন, অধ্যবসায়। তবে সব সময় বইয়ে চোখ দিয়ে না বসে থাকলেও চলে। জানাচ্ছেন আইএএস অফিসার সৌরভ।
সৌরভ ঘোরতর সংসারী। যখন ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন এক সন্তানের বাবা তিনি।
সংসার, অন্য চাকরি সামলেও কী ভাবে হবে লক্ষ্যপূরণ? এই আইএএস অফিসারের দাবি, লক্ষ্যে পাখির চোখ রাখতে হয়। কোনও ভাবেই যেন লক্ষ্য থেকে সরে না যাই, এটাই খেয়াল রাখতে হবে।
২০১৮ সালে ইউপিএসসি পাশ করেন সৌরভ। তাঁর সর্বভারতীয় র্যাঙ্ক ছিল ১১৩। তবে প্রথম বারেই সফল হননি। দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলেন সৌরভ।
আগাগোড়া পড়াশোনায় ভাল সৌরভ। চাকরিও করতেন বড় জায়গাতেই। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)-তে চাকরি করেও সৌরভের লক্ষ্য ছিল আইএএস অফিসার হওয়ার।
সৌরভের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের দুমকায়। ছোট থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলোতেও ভাল ছিলেন। আর ছিলেন ইন্টারনেট-পাগল। কলেজজীবনে চলে আসেন কলকাতায়। বাণিজ্য শাখার ছাত্র ছিলেন সৌরভ। ভর্তি হন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। সিএ পাশ করেন। তার পর এমবিএ পড়তে চলে যান দিল্লি।
বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান। সংসারের হাজারো ঝামেলা, কাজের চাপও বিশাল। তার পরও কী ভাবে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কঠিন পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া যায়? সৌরভ বলছেন, পরিকল্পনা এবং সঠিক রুটিন দরকার। সব সময় বইমুখো হয়ে না থেকেও ইউপিএসসি পাশ করা যায়।
সৌরভ জানাচ্ছেন, আরবিআইয়ের চাকরির ইন্টারভিউ পর্বে বসেই তাঁর মনে হয়েছিল, ব্যাঙ্কিং নয়, তিনি বরাবর চেয়েছেন আমলা হয়ে জনসেবা করতে।
সদ্য বিয়ে করেছেন তখন। সংসারের দায়িত্ব আছে। পাকা চাকরি। কিন্তু ২৯ বছর বয়সে সৌরভ বুঝে যান, ‘‘জীবন চাইছে আরও বেশি কিছু।’’ ঝুঁকি ছিলই। কিন্তু তিনি ওই বয়সে ঠিক করেন, নতুন করে শুরু করবেন।
সৌরভের কথায়, ‘‘ছোট থেকেই চেয়ে এসেছি, এমন কাজ করার যাতে সরাসরি মানুষের উপকার হবে।’’
চাকরির পাশাপাশি নেমে পড়েছেন ইউপিএসসি প্রস্তুতিতে। কী ভাবে? সৌরভের দাবি, তিনি পড়াশোনা করতেন অফিসের ‘লাঞ্চ ব্রেক’-এ। চা-কফি খাওয়ার সময়টা কমিয়ে চোখ বুলোতেন ইউপিএসসি-র বিশাল সিলেবাসে।
এ ভাবে মাত্র দু’মাস। তার পর এল সুখবর। স্ত্রী পারুল হলেন সন্তানসম্ভবা। বাবা হতে চলেছেন সৌরভ। এক ঝটকায় আরও বাড়ল দায়িত্ব। তবু খামতি ছিল না প্রস্তুতিতে।
ওই অল্প সময়ে পরিকল্পনামাফিক পড়াশোনা করেছেন সৌরভ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময় সন্তানের জন্ম দিলেন পারুল। বাবা হলেন সৌরভ।
তার পরেও প্রিলিমিনারি পাশ করেছেন সৌরভ। পেয়েছিলেন ১১৭ নম্বর। কিন্তু মেইন পরীক্ষাটা সে বার পাশ করতে পারেননি।
মন তো খারাপ হবেই। কিন্তু এক বারের চেষ্টায় কতিপয় পরীক্ষার্থীই ইউপিএসসি পাশ করেন। এটা ভেবেই পরের বারের প্রস্তুতি শুরু করেন সৌরভ। তাঁর কথায়,‘‘আমার শক্তি ছিল পরিবার। ওদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালবাসতাম। তা ছাড়া জোর ছিল, একটা চাকরি তো করছিই।’’
২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল এল সুখবর। ইউপিএসসি পাশ করেছেন সৌরভ। অবিশ্বাস্য ঠেকেছিল তাঁর। স্বামীর এমন সাফল্যে দারুণ খুশি স্ত্রী।
সৌরভের কথায়, ‘‘যাঁরা ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের বলব, আপনি বাবা বা মা হোন, ১০টা-৫টার চাকরি করুন, কোনও কিছুই সমস্যা নয়। বীজমন্ত্র হল, ইচ্ছাশক্তি এবং শৃঙ্খলা।’’