নীল ছবি নিয়ে কৌতূহল কম নেই সাধারণ জনতার। কিন্তু জানেন কি, এই ছবি কুশীলবদের কী রকম অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়? ইন্টারনেটের যুগে নীল ছবির দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয়। সমাজও অনেক এগিয়ে গিয়েছে। তবুও এই ছবি ঘিরে ‘ঢাক ঢাক গুড় গুড়’ ভাব কমেনি।
জনতার মনোরঞ্জনে অনেক কৃচ্ছ্রসাধনই করতে হয় নীল ছবির কলাকুশলীদের।
অনেকেই মনে করেন, পর্ন তারকাদের জীবন বিলাসবহুল। আবার কেউ ভাবেন, যৌনতার নেশায় মত্ত হয়ে তাঁরা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু পেটের জ্বালা বড় জ্বালা। আর সেই টানেই অনেকে বাধ্য হয়ে নীল ছবির নির্মাতাদের ক্যামেরার সামনে নিজের সবটুকু উজাড় করে দেন।
পর্ন ছবির দুনিয়া কেমন? নীল ছবির জগতের নানা দিক তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছিলেন সমান্থা বেন্টলি নামে এক পর্ন তারকা। ক্যামেরার সামনে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার কাজ যে কতটা কঠিন, সেই কথা তুলে ধরেছেন নীল ছবির দুনিয়ার ওই শিল্পী। এমনকি ঋতুস্রাবের মধ্যেও শুটিং করতে হয় বলে তিনি জানিয়েছেন। যা অত্যন্ত কষ্টকর বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, শত কষ্ট হলেও পেটের টানে, নিজের পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এই কাজ করতে হয় পর্নশিল্পীদের।
অনেকেরই ধারণা, পর্ন ছবিতে কাজ করে লাখ লাখ টাকা কামানো যায়। কিন্তু সত্যিই কি তাই? সমান্থা জানিয়েছেন, অন্য পেশায় যেমন পরিশ্রম করলে তার সুফল মেলে, নীল ছবির দুনিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। সেখানেও পরিশ্রমের উপর ভিত্তি করেই পারিশ্রমিক জোটে।
সামান্থার কথায়, ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড়। প্রচুর নতুন মুখের ভিড় বাড়ছে। ফলে প্রতিযোগিতাও আছে। দর্শকরা রোজ রোজ নতুন জিনিস দেখতে চান। যদি আপনি কঠোর পরিশ্রম করেন এবং সঠিক ভাবে এই পেশায় কাজ করেন, তা হলে অনেক টাকা রোজগার করতে পারেন। মোদ্দা কথা হল, আর চার-পাঁচটা পেশার মতোই এখানে প্রতিযোগিতা রয়েছে এবং নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হলে, ভাল উপার্জন করতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। নীল ছবির কাজ বলে সহজে কিছু হয় না।
প্রতিযোগিতা আছে বলেই নীল ছবির দুনিয়াতেও সহকর্মীদের মধ্যে রেষারেষি, ঈর্ষাও রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে একটা পার্থক্য রয়েছে। ধরুন, যে ব্যক্তির সঙ্গে আপনার বনিবনা হয় না, বা যাঁকে আপনি পছন্দ করেন না, তাঁর সঙ্গেই হয়তো আপনাকে যৌনতায় লিপ্ত হতে হবে।
কিন্তু নীল ছবির দুনিয়ায় যদি আপনি নিজের একটা জায়গা করতে পারেন, তা হলে আপনি অপছন্দের ব্যক্তির সঙ্গে যৌনতার দৃশ্য করতে আপত্তি জানাতে পারবেন। সেই জায়গাটা যত দিন না তৈরি করতে পারেন কোনও পর্নশিল্পী, তত দিন তাঁর পছন্দ-অপছন্দকে পাত্তা দেন না নির্মাতারা। যাঁকে পছন্দ করেন না, তাঁর সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হওয়া সত্যিই কঠিন কাজ।
নীল ছবি দেখা যতটা সুখকর, ছবির সঙ্গে যুক্ত কুশীলবদের জীবন বোধহয় ততটা সুখকর নয়। এই ছবির শুটিং করতে গিয়ে অনেক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয় শিল্পীদের।
রোজ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে নিজের শরীরকে মেলে ধরা শিল্পীদের জন্য একে বারেই উত্তেজনাপূর্ণ নয়। সমান্থার কথায়, যৌনরোগে আক্রান্ত হওয়ায় ভয় থাকেই। আর সে কারণে অনেক সাবধানতা মেনে চলতে হয় শিল্পীদের।
সমান্থার মতে, সাধারণত সমাজে যাঁরা যৌন সংসর্গে লিপ্ত হন, তাঁদের থেকে নীল ছবির শুটিং করা অনেক নিরাপদ। তাঁর কথায়, ‘‘পর্নশিল্পী মানেই যৌনরোগে আক্রান্ত, এ কথা শুনলে হাসি পায়। আমরা অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ভাবে থাকি এবং অত্যন্ত সচেতন।’’
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও জানিয়েছেন যে, প্রত্যেক বার শুটিংয়ের আগে শারীরিক পরীক্ষা করানো হয় শিল্পীদের। প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সার্টিফিকেট থাকলে তবেই শুটিঙের অনুমতি দেওয়া হয় শিল্পীদের।
পর্ন ছবির প্রতিটি শুটিঙের আগে শিল্পীদের ‘এসটিডি’ (সেক্সুয়াল ট্রান্সমিটেড ডিজ়িজ়) স্টেটাস জানাতে হয়। এ জন্য পরীক্ষা করতে হয়।
শেষ কবে এসটিডি পরীক্ষা করেছিলেন? পরীক্ষা করানোর পর কত বার যৌনমিলন হয়েছে? যাঁদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ছেন, তাঁরা কি এসটিডিতে আক্রান্ত? তাঁরা কবে শেষ পরীক্ষা করেছিলেন? শুটিঙের আগে এমন হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় নীল ছবির কুশীলবদের।
সমান্থার কথায়, নিয়মিত এত পরীক্ষা করানো হয় যে, যার ফলে পর্নশিল্পীদের যৌনরোগের ঝুঁকি কম থাকে। এমনকি, নীল ছবির সঙ্গে যুক্ত কোনও শিল্পী যদি বাইরের কারও সঙ্গে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হন এবং সেখান থেকে এসটিডিতে আক্রান্ত হন, তা হলেও পরীক্ষার পর রোগ সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। ফলে নীল ছবির দুনিয়ায় সহজেই বাসা বাঁধতে পারে না যৌনরোগ।
যৌনমিলনের সময় দীর্ঘ ক্ষণ ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় ‘ভায়গ্রা’ ব্যবহারের ফলে অনেকে বেশি ঘামেন, এমনকি হৃদ্রোগেও আক্রান্ত হন। অনেক সময় নিতে হয় ইঞ্জেকশনও। যা স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
অনেকেই ভাবেন, পর্ন ছবির শুটিং উত্তেজনায় ভরপুর থাকে। কিন্তু আদতে তেমনটা হয় না। শুটিংয়ের সেটও অত চিত্তাকর্ষক হয় না। পর্নশিল্পীরা কেউই অপ্সরা নন। অনেক সময়ই রূপটান না করেই ঘুরে বেড়ান সেটে। তাঁরাও মশলা দেওয়া খাবার খান। তাঁদের চোখেমুখেও ক্লান্তির ছাপ থাকে। শুটিঙের মাঝে প্রিয় জনের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন। অধিকাংশ যৌনদৃশ্যেরই কোরিওগ্রাফ করা হয়। এক কথায়, নীল ছবির শুটিং আর চার-পাঁচটা ছবির শুটিঙের মতোই হয়। আলাদা করে কোনও উত্তেজনা থাকে না।
নীল ছবির দুনিয়াতেও বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান হয়। সেখানেও রেড কার্পেটের ব্যবস্থা থাকে। এই প্রসঙ্গে লাস ভেগাতে ‘এভিএন অ্যাওয়ার্ডসে’র কথা বলেছেন সমান্থা। এই পুরস্কারমঞ্চে মনোনীত হতে পারা স্বপ্নের মতো। এই পুরস্কারকে ‘অস্কারস অফ পর্ন’ বলা হয়।
সমান্থার কথায়, নীল ছবির শুটিং নিয়ে সাধারণ মানুষ যেমন কল্পনা করেন, বাস্তবে কিন্তু তেমনটা হয় না। নীল ছবি দেখতে ভাল, কিন্তু তৈরি করতে অনেক শ্রম লাগে। আর তারই নেপথ্যকাহিনি তুলে ধরেছেন ওই পর্নতারকা।