বয়স আদতে কোনও প্রতিকূলতা নয়। সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মঞ্চে সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন ৬০ বছরের ‘তরুণী’ আলেজ়ান্দ্রা মারিসা রদ্রিগেজ়। সুন্দরীর মুকুট জিতলেও সেই পথ এত সোজা ছিল না তাঁর কাছে।
আর্জেন্টিনার লা প্লাতা শহরের বাসিন্দা আলেজ়ান্দ্রা । পেশায় একাধারে উকিল এবং সাংবাদিক তিনি। সম্প্রতি ‘মিস্ ইউনিভার্স বুয়েনাস আইরেস’ নামে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে শিরোনামে এসেছেন তিনি।
বিজয়ী হওয়ার পর চলতি বছরের মে মাসে ‘মিস্ ইউনিভার্স আর্জেন্টিনা’ নামে এক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সুযোগও পেয়েছেন আলেজ়ান্দ্রা।
যে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিশ্ব জুড়ে সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন সেই মঞ্চে নিজের পরিচিতি তৈরি করতে চেয়েছিলেন আলেজ়ান্দ্রা।
সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে বয়স যে আদৌ কোনও বাধা নয়, তা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন আলেজ়ান্দ্রা । কিন্তু নিয়মকানুনে শেষমেশ বাঁধা-ই পড়তে হল বছর ষাটের সুন্দরীকে।
১৯৫২ সালে তৈরি হওয়া নিয়মানুযায়ী যে প্রতিযোগীরা বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন, তাঁদের সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে ১৮ বছর, সর্বোচ্চ ২৮ বছর। বয়সের সীমা ২৮ বছর থেকে সামান্য পার হলেও তিনি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার অধিকার হারাবেন।
বয়স একমাত্র শর্ত নয়, বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য তৈরি হয়েছিল আরও নিয়মকানুন। মহিলা প্রতিযোগীদের অবিবাহিতা হতে হবে। এমনকি, তাঁদের কোনও সন্তান থাকলেও তাঁরা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
পরে অবশ্য সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার নিয়মকানুনে বদল আনা হয়। তবে তা সামান্যই। সর্বনিম্ন বয়সে কোনও পরিবর্তন করা না হলেও জানানো হয়, সর্বোচ্চ ৭৩ বছর বয়স পর্যন্ত মহিলা প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে তাঁদের সন্তান থাকা চলবে না এবং অবিবাহিতা হতে হবে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার আবার নিয়মবদল করা হয়। চলতি বছরে আয়োজিত প্রতিযোগিতাগুলিতে নতুন নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। সে কারণেই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন আলেজ়ান্দ্রা।
২০২২ সালে ২৮ বছর বয়সে বিশ্বসুন্দরীর খেতাব জিতেছিলেন নোলা গ্যাব্রিয়েল। ‘সবচেয়ে বয়স্ক’ সুন্দরী হিসাবে নজির গড়েছিলেন তিনি। সেই নজির ভেঙে দিলেন আলেজ়ান্দ্রা।
স্থানীয় একটি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে আলেজ়ান্দ্রা জানান, স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর সাংবাদিকতা নিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি।
পরে সাংবাদিকতা ছেড়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন আলেজ়ান্দ্রা । একটি হাসপাতালের আইনি পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি।
৬০ বছর বয়সে নিজের পরিচর্যা কী ভাবে করছেন সে প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে আলেজ়ান্দ্রা জানান, তিনি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন। সঠিক পরিমাণে খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চা করেই তিনি নিজের যত্ন নেন।
আলেজ়ান্দ্রা বলেন, ‘‘ডায়েট মেনে খাওয়াদাওয়া করি আমি। প্রচুর ফলমূল এবং শাকসব্জি খাই। মাঝেমধ্যে একটানা উপোস করে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংও করি।’’
সারা সপ্তাহে অন্তত তিন বার শরীরচর্চা করেন আলেজ়ান্দ্রা। বাকি সময়ে হাঁটাহাঁটি করেন তিনি। শরীরের উপর খুব একটা জোর দেন না তিনি।
আলেজ়ান্দ্রা জানান, তিনি যে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন সেখানে ১৮ থেকে ৭৩ বছর পর্যন্ত সকল বয়সের প্রতিযোগী ছিলেন। বয়স সেই মঞ্চে আদপেই কোনও বাধা মানেনি বলে জানান তিনি।