ব্রিটেন থেকে বিলাসবহুল গাড়ি আনিয়েছিলেন। কিন্তু কাস্টমসের চাপে সেই গাড়ির জন্য পাল্টা খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ৩০ গুণ বেশি টাকা। আইনি জটিলতায় মাথায় হাত সংশ্লিষ্ট সংস্থার।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো সূত্রে খবর, চট্টগ্রাম ইপিজেডের হংকং এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটস লিমিটেড’ গত বছর এপ্রিল মাসে রোলস-রয়েস কালিনান গাড়িটি আমদানি করেছিল।
আমদানির পর তা চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ (ইপিজেড) এলাকায় নেওয়া হয়।
বাংলাদেশে এই গাড়ির দাম ২ কোটি ৭৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা (কর ছাড়া)। আমদানির পর দেশের শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্তারা গাড়িটিকে বাজেয়াপ্ত করেন।
অতঃপর, তা ছাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বিপুল জরিমানা করেছে সে দেশের কাস্টমস বিভাগ।
জানা গিয়েছে, রোলস-রয়েসের এই গাড়ির জন্য মোট ৫৭ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ২৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে এর জন্য।
অর্থাৎ, আইনি জটিলতা কাটিয়ে গাড়িটিকে ফের হাতে পেতে জরিমানা, শুল্ক-কর মিলিয়ে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা খরচ করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে।
বাংলাদেশের কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান গত ১২ অক্টোবর এই নির্দেশ দিয়েছেন। ৩০ দিনের মধ্যে কর এবং জরিমানা মিটিয়ে দিতে বলা হয়েছে আমদানিকারককে।
কাস্টমস কমিশনারের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানাতে পারবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা।
ব্রিটেনের বিখ্যাত গাড়ির ব্র্যান্ড রোলস-রয়েস। তাদের যে গাড়ি নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্কের সূত্রপাত, সেই মডেলটির নাম কালিনান এসইউভি। গাড়িটি তৈরি করা হয়েছে ২০২১ সালে।
ঝকঝকে কালো রঙের এই এসইউভি গাড়িটি বাংলাদেশে প্রথম আমদানি করা হয় এপ্রিল মাসে। তার পর থেকে শুরু হয় বিতর্ক।
অভিযোগ, গাড়িটির শুল্কায়নের জন্য কাস্টমস হাউসে কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই গাড়িটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শরিফ জহিরের বাড়িতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
খবর পেয়ে শরিফ জহিরের ঢাকার বাড়িতে হানা দেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মীরা। সেখান থেকে অবৈধ অপসারণের অভিযোগে গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করেন তাঁরা।
প্রথম আলো সূত্রে খবর, বিদেশ থেকে আমদানি করা বিলাসবহুল এই গাড়িটি শুধু মাত্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহার করার অনুমতি ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিয়ম ভেঙে ব্যক্তিগত ব্যবহারের উদ্দেশে তা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছেন বাংলাদেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
মূল অভিযুক্ত শরিফ অবশ্য জানান, গাড়িটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। তাই বিমা দাবি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের মৌখিক ভাবে জানিয়ে ঢাকায় সরানো হয়েছিল গাড়িটি। তিনি কাস্টমসের নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন করবেন বলেও জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে আমদানিকৃত রোলস রয়েসের এই গাড়িটি প্রতি লিটার জ্বালানি খরচে ৫.১ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। হাইওয়ের ক্ষেত্রে তা প্রতি লিটারে যেতে পারে ৮.৫ কিলোমিটার।
এই গাড়ির সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৬ হাজার ৭৫০। কালো ছাড়াও নীল, সাদা, বেগুনি, সবুজ, ধূসর ও অন্যান্য নানা রঙের মডেল পাওয়া যায় গাড়িটির।
ব্রিটেনে তৈরি এই গাড়ি রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে পড়শি দেশে।
যে গাড়ির দাম ২ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা, কাস্টমসের নির্দেশে তার জন্যই ৮৫ কোটি টাকা খরচ করতে হবে আমদানিকারককে। বাংলাদেশের নানা মহলে তাই চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছে রোলস রয়েস।