কখনও ‘ভ্যাম্পায়ার’ কখনও বা ‘ভূত’! হিন্দি ফিল্মজগতে হরর ঘরানার ছবি মানেই বড় পর্দায় ভেসে উঠবে সেই পরিচিত মুখ। আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে ‘ভূত’ হিসাবেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন অনিরুদ্ধ আগরওয়াল।
ছোটবেলা থেকেই খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ ছিল অনিরুদ্ধের। অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়বেন, তা কখনও ভাবেননি তিনি। কিন্তু এক বার অভিনয় শুরু করার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। হরর ঘরানার সমস্ত ছবির প্রস্তাব যেন অনিরুদ্ধের ঝুলিতেই আসত।
১৯৪৯ সালের ২০ ডিসেম্বর উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূনে জন্ম অনিরুদ্ধের। বাবা-মা এবং দশ ভাইবোনের সঙ্গে দেহরাদূনেই থাকতেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলা নিয়েও ব্যস্ত থাকতেন অনিরুদ্ধ।
স্কুলের দলের প্রতিনিধিও ছিলেন অনিরুদ্ধ। উচ্চশিক্ষার জন্য কলেজে ভর্তি হলে সেখানেও খেলাধূলার জন্য পরিচিতি পান তিনি। রুরকি আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংপাশ করেন তিনি।
পড়াশোনা শেষ করে মুম্বইয়ে চলে যান অনিরুদ্ধ। সেখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজে যোগ দেন তিনি। কিন্তু সুখ বেশি দিন থাকেনি তাঁর। গভীর অসুখ ধরা পড়ে অনিরুদ্ধের।
পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার ধরা পড়ায় অনিরুদ্ধের উচ্চতার পাশাপাশি মুখের গড়নও অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। নিজের জীবন নিয়ে মুষড়ে পড়েছিলেন তিনি।
হঠাৎ অনিরুদ্ধের এক বন্ধু তাঁকে খবর দেন, মুম্বইয়ে ‘রামসে ব্রাদার্স’ আসছেন। তাঁদের ছবির জন্য নতুন মুখের সন্ধানে রয়েছেন। আশির দশকে হিন্দি ফিল্মজগতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন রামসে ব্রাদার্স। রামসে ব্রাদার্স নির্মিত হরর ঘরানার ছবি দেখার জন্য মুখিয়ে থাকত দর্শক।
বন্ধুর কথামতো রামসে ব্রাদার্সের ছবির জন্য অডিশন দিতে যান অনিরুদ্ধ। যে অসুখ নিয়ে মুষড়ে পড়েছিলেন, সেটাই যেন বর হয়ে এল অনিরুদ্ধের জীবনে। মুখের গড়ন এবং উচ্চতা দেখে ছবি নির্মাতারা পছন্দ করে ফেললেন অনিরুদ্ধকে।
অভিনয়ে নামবেন বলে ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি ছেড়ে দেন অনিরুদ্ধ। রামসে ব্রাদার্সের সঙ্গে একের পর এক হরর ঘরানার ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ‘বীরানা’, ‘পুরানা মন্দির’, ‘বন্ধ দরওয়াজা’ ছবিতে ভূতের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
কেরিয়ারের প্রয়োজনে নিজের নামও বদলে ফেলেন অনিরুদ্ধ। বলিপাড়ায় অজয় নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। হিন্দি ছবির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি। ‘দ্য জঙ্গল বুক’ এবং ‘সাচ আ লং জার্নি’র মতো ইংরেজি ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
বড় পর্দার পাশাপাশি ধারাবাহিকেও কাজ করেছেন অনিরুদ্ধ। ‘শক্তিমান’, ‘মানো ইয়া না মানো’র মতো হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। কিন্তু অভিনয়জগতেও তাঁর দিন ফুরিয়ে আসে।
পুরনো এক সাক্ষাৎকারে অনিরুদ্ধ জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব এলেও তা খুবই কম ছিল। খুব বেশি রোজগার করতে পারতেন না তিনি। ২০১০ সালে বলিপাড়া থেকে অবসর নিয়ে নেন তিনি।
আইআইটি থেকে পড়াশোনা করার পর চাকরি ছেড়ে বি গ্রেড ছবিতে অভিনয় শুরু করেছিলেন অনিরুদ্ধ। বর্তমানে স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।
অনিরুদ্ধের কন্যা কপিলা আগরওয়াল এক জন স্থপতি। ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বান্টি অওর বাবলি’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে কপিলাকে।
বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন অনিরুদ্ধের পুত্র অসীম আগরওয়াল। ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ফাইট ক্লাব: মেম্বার্স ওনলি’ ছবিতে কাজ করেছেন অসীম।