ব্যক্তিগত অনুদানকারী হিসাবে ভারতের সবচেয়ে বেশি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছেন ব্যবসায়ী লক্ষ্মী মিত্তল। নির্বাচনী বন্ডের তথ্য ঘেঁটে উঠে এসেছে এমন তথ্যই।
নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য বলছে, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ভারতের রাজনৈতিক দলে ৩৫ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন লক্ষ্মী।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গত মঙ্গলবার নির্বাচনী বন্ডের তথ্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে জমা দিয়েছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই)। বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সেই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে নির্বাচন সদন।
সেই বন্ডের ক্রেতা এবং প্রাপক দলের লম্বা তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশও করে দেওয়া হলেও সেখানে ছিল না বন্ডের নম্বর। কার টাকা কার কাছে গিয়েছে, সেই তথ্যও এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
তবে কত তারিখে কোন সংস্থা কত টাকার বন্ড কিনেছিল, তার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। যাতে দেশের অগ্রগণ্য বহু শিল্পগোষ্ঠীর নাম রয়েছে। প্রাপক দলের তালিকায় বিজেপি, কংগ্রেস, ডিএমকে, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, তৃণমূল, শিরোমণি আকালি দল, বিআরএসের মতো দলগুলি রয়েছে।
স্টেট ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২২ হাজার ২১৭টি বন্ড কেনা হয়েছিল। তার মধ্যে সব দল মিলিয়ে বন্ড ভাঙিয়েছে ২২ হাজার ৩০টি। কমিশন যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দাতা সংস্থার তালিকা ৩৩৭ পাতার। আর প্রাপক দলগুলির নামের তথ্য ৪২৬ পাতার।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ২০১৮ সাল থেকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিজেপির প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ ছয় হাজার ৯৮৬ কোটি ৫০ লাখ। তার পরেই তালিকায় থাকা তৃণমূল পেয়েছে এক হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। সেখানে কংগ্রেসের তহবিলে গিয়েছে এক হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। আর বিআরএস নির্বাচনী বন্ড ভাঙিয়ে পেয়েছে এক হাজার ৩২২ টাকা।
সেই সব তথ্য খতিয়ে দেখেই ব্যক্তিগত অনুদানকারী হিসাবে লক্ষ্মীর নাম উঠে এসেছে।
‘আর্সেলরমিত্তল’ সংস্থার মালিক লক্ষ্মী। সেটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত প্রস্তুতকারী সংস্থা।
বর্তমানে লক্ষ্মী ব্রিটেনে থাকেন। সেখানে থেকেই ব্যবসায়িক রমরমা। তবে ভারতের রাজনীতিতেও যে তাঁর নজর রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়েছে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য খতিয়ে দেখার পর।
এসবিআই প্রকাশিত তথ্য বলছে ১.৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি সম্পত্তির মালিক লক্ষ্মী ৩৫ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছেন এবং অনুদান দিয়েছেন।
ব্যক্তিগত অনুদানকারীদের যে পরিমাণ অনুদান দিয়েছেন, তার মধ্যে ৯ শতাংশেরও বেশি অর্থ লক্ষ্মী একাই দিয়েছেন। যদিও লক্ষ্মীর মাধ্যমে কোন দলের লক্ষ্মীলাভ হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।
ঘটনাচক্রে, ‘আর্সেলরমিত্তল নিপ্পন স্টিল ইন্ডিয়া (আর্সেলরমিত্তল এবং টোকিয়ো-ভিত্তিক নিপ্পন স্টিলের যৌথ উদ্যোগ)’ সম্প্রতি গুজরাত সরকারের সঙ্গে ১৬০০ কোটি টাকার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ২০২৪ সালে দু’পক্ষের মধ্যে একটি মউ-ও স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এ ছাড়াও ওই সংস্থা গুজরাতের হাজিরা প্ল্যান্টে তিনটি ৩৫০০০০ কিলোর ‘কনভার্টার’ (যন্ত্রবিশেষ) তৈরির চুক্তি পেয়েছে।
পাশাপাশি, অন্ধ্রপ্রদেশে সৌর এবং বায়ু শক্তি সংক্রান্ত একটি বহু কোটির প্রকল্পের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছে ‘আর্সেলরমিত্তল নিপ্পন স্টিল ইন্ডিয়া’।
লক্ষ্মী ছাড়াও ব্যক্তিগত অনুদানকারীদের তালিকায় রয়েছেন ইন্দ্র ঠাকুরদাস জয়সিংহনি। তিনি ১৪ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। জয়সিংহনি বৈদ্যুতিন তার তৈরির সংস্থা ‘পলিক্যাব ইন্ডিয়া’র প্রধান। এ ছাড়াও রয়েছে লক্ষ্মীদাস বল্লভদাস বণিকের নাম। তিনি অম্বানীদের রিলায়্যান্স সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্য দিকে, তালিকা খতিয়ে দেখা যায়, বন্ড কেনায় শীর্ষে রয়েছে বিতর্কিত লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’। তারা কিনেছে মোট ১,৩৬৮ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড।
বন্ড কেনায় টাকার অঙ্কের নিরিখে তার পরেই রয়েছে বিখ্যাত তেলুগু ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রেড্ডির সংস্থা ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’। তারা ৯৬৬ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিয়েছে। মূলত হায়দরাবাদ কেন্দ্রিক এই সংস্থা একাধিক সরকারি প্রকল্পের বরাত পেয়েছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থাকে ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘ক্ষতিকারক’ আখ্যা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ স্টেট ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দেয়, অবিলম্বে নির্বাচনী বন্ড বিক্রি বন্ধ করার জন্য।
পাশাপাশি, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কতগুলি নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছে, কোন কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনী বন্ড থেকে টাকা পেয়েছে— সেই সংক্রান্ত সব তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সেই তথ্য প্রকাশ্যে আনে নির্বাচন সদন।