ফ্রান্সকে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। স্বপ্ন ছুঁয়েছেন লিয়োনেল মেসি। তাঁর সঙ্গে ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ খরা কাটিয়ে খুশির জোয়ারে ভাসছেন সাড়ে ৪ কোটি আর্জেন্টিনাবাসী।
ফ্রান্সের সঙ্গে আর্জেন্টিনার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখেছে কাতারের লুসেইল স্টেডিয়াম। টেলিভিশনে দেখেছে গোটা বিশ্ব। ম্যাচ গড়িয়েছে টাইব্রেকার পর্যন্ত।
স্বাভাবিক ভাবেই মেসিকে নিয়েই মাতামাতি চলছে। কিন্তু টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার আসল নায়ক কিন্তু এক জনই। তিনি গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস।
শেষ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সকলের ইচ্ছাপূরণ করেছেন লিয়ো মেসি। বিশ্বকাপে এঁকে দিয়েছেন স্বপ্নের চুম্বন। এ দৃশ্য সম্ভবই হত না মার্তিনেসের দস্তানা ফরাসি আক্রমণের মুখে ঢাল হয়ে না দাঁড়ালে।
টাইব্রেকারে ফ্রান্সের পর পর ২টি গোল আটকে দিয়েছেন মার্তিনেস। বিশ্বকাপ এবং মেসির মধ্যেকার দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়েছে সেই ‘অবিশ্বাস্য সেভ’।
আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে বরাবরই দাপুটে ৩০ বছর বয়সি মার্তিনেস। ২০২১ সালে আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা জয়ের নেপথ্যেও অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি।
কাতার বিশ্বকাপে মার্তিনেসের হাতেই উঠল সোনার গ্লাভস্। বিশ্বকাপে সেরা গোলরক্ষকের স্বীকৃতি। এর আগে কোপা আমেরিকাতেও একই সম্মান পেয়েছিলেন তিনি।
গ্লাভস্ হাতে তেকাঠির নীচে দুর্ভেদ্য বলয় তৈরি করেন মার্তিনেস। তাঁকে ডিঙিয়ে জালে বল জড়ানো যে সহজ নয়, তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন বিপক্ষ দলের ফুটবলাররা।
ক্লাব ফুটবলেও মার্তিনেস দাগ কেটেছেন বার বার। তিনি ইংল্যান্ডের অ্যাস্টন ভিলা ক্লাবের হয়ে খেলেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ২ কোটি ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য প্রায় ২০১ কোটি টাকা) খরচ করে আর্জেন্টিনার এই অন্যতম সেরা গোলরক্ষককে কিনে নিয়েছেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। অ্যাস্টন ভিলার সঙ্গে তাঁর চুক্তি ৪ বছরের।
এর আগে মার্তিনেস খেলতেন আর্সেনাল ক্লাবের জার্সিতে। সেখানেও একের পর এক নজির গড়তে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। অ্যাস্টন ভিলা ক্লাবের হয়ে মার্তিনেস ২০২০-২১ ক্রীড়াবর্ষে সেরা খেলোয়াড়ের সম্মান পান।
ক্লাব ফুটবলে খেলার সময় মার্তিনেস সতীর্থদের কাছ থেকে একটি ডাকনাম পান। তাঁকে ডাকা হত ‘দিবু’ নামে। এই নামেই ঘনিষ্ঠমহলে পরিচিত মার্তিনেস।
আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় এক টেলিভিশন ধারাবাহিকের অ্যানিমেশন চরিত্রের নাম ‘দিবু’। সেই থেকেই মার্তিনেসকে এই নাম দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালের ৩ জুন আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে মার্তিনেসের অভিষেক হয়। চিলির বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের নির্বাচন পর্বের সেই ম্যাচে ১-১ ড্র করেছিলেন মেসিরা।
চলতি বিশ্বকাপে ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলেছেন ‘দিবু’। অবিশ্বাস্য ভাবে বাঁচিয়েছেন একাধিক গোল। ফ্রান্সের পাশাপাশি নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটিতেও টাইব্রেকার হয়। সেখানেও দু’টি গোল বাঁচিয়ে দলকে সেমিফাইনালে তুলে দেন তিনি।
কিন্তু সেমিফাইনালের আগে সেই ম্যাচে মার্তিনেসকে নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। ডাচ কোচকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। জয়ের পর মাঠেই মেজাজ হারান।
পরে অবশ্য মার্তিনেস জানিয়েছেন, ডাচ কোচ লুই ফ্যান হাল খেলার আগে আর্জেন্টিনাকে অবজ্ঞা করেছিলেন। বলেছিলেন, ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালে নেদারল্যান্ডের সঙ্গে পেরে উঠবেন না মেসিরা। তাতেই ক্ষুব্ধ হন মার্তিনেস। ম্যাচ জিতে তার জবাব দেন।
ফাইনাল ম্যাচেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। সোনার দস্তানা হাতে তুলে নিয়ে তিনি যে অঙ্গভঙ্গি করেছেন, অনেকের মতে তা শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়েছে। তবে বিশ্বজয়ের আনন্দে আপাতত সব বিতর্ক ঢাকা পড়ে গিয়েছে। মেসির স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে নেপথ্য কারিগর হিসাবে মার্তিনেসকে মনে রেখে দেবে ফুটবলবিশ্ব।