মিশরের পিরামিড দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। মিশর মানেই বিস্ময়, জনশ্রুতি, হাজারো ঐতিহাসিক কাহিনি আর কিংবদন্তি। রহস্যে ঘেরা এই দেশে এ বার আবিষ্কৃত হল আর এক মমি।
তবে এই মমি কোনও রাজারাজড়া কিংবা ফ্যারাওয়ের নয়। প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং বিশেষজ্ঞদের অনুমান, মমিটি যাঁর, তিনি কোনও সাধারণ মানুষ। কিন্তু মমির চারদিকে যে পরিমাণ ধনরত্ন পাওয়া গিয়েছে, তাতে এই মমিটি অসাধারণত্ব লাভ করেছে।
পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, মমিটির বয়স প্রায় ৪,৩০০ বছর। কিছু দিন আগে এক দল প্রত্নতত্ত্ববিদ পাথরের সমাধিক্ষেত্র খুঁড়ে মমিটি আবিষ্কার করেন। মমিটি সোনা দিয়ে তৈরি পাতা আকারের একটি বাক্সে ঢাকা ছিল।
সমাধিটি পাওয়া গিয়েছে মিশরের রাজধানী কায়রোর দক্ষিণে সাক্কারা বলে একটি জায়গায়। প্রায় ১৫ মিটার মাটি খুঁড়ে সমাধিক্ষেত্র এবং মমিটির সন্ধান পান প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
এই সাক্কারা শহরটিও কম রহস্যময় নয়। মিশরের স্ফিংস যেখানে রয়েছে, তার থেকে বেশ দূরেই অবস্থান এই জনপদের। কিন্তু এই শহরেই রয়েছে প্রায় ৩০০০ বছরের পুরনো একটি সমাধিক্ষেত্র।
ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় ঠাঁই হয়েছে সাক্কারার। এই শহরের অনতিদূরেই রয়েছে প্রাচীন মেমফিস শহর, যেখানে পাওয়া গিয়েছে বিখ্যাত স্টেপ পিরামিড এবং বারোটি ছোট ও মাঝারি পিরামিড।
সাম্প্রতিক কালে সাক্কারার সমাধিক্ষেত্র থেকে ৩টি মমি আবিষ্কৃত হয়েছে। তাঁর মধ্যে নতুন এই মমিটিই সবচেয়ে প্রাচীন বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন, হেকাশেপেস নামের এক ব্যক্তির দেহাবশেষ রয়েছে ওই মমির ভিতরে। কোনও সাধারণ মানুষের সমাধিতে এত যত্ন এবং আড়ম্বরের ছাপ মিশরে প্রায় বিরল।
তবে ওই তিনটি মমির মধ্যে সবচেয়ে বড় মমিটি যাঁর, তাঁর নাম খুনুমদেফেফ। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় এই ব্যক্তি কোনও সম্ভ্রান্ত পুরোহিত এবং অভিজাত ব্যক্তিদের মধ্যে নেতা গোছের কেউ ছিলেন বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান।
আর একটি মমির মধ্যে শায়িত রয়েছেন মেরি। এই ব্যক্তি খুব সম্ভবত ফ্যারাওদের হয়ে নজরদারির কাজ করতেন। কারণ প্রাচীন পুথিতে মেরিকে ‘গোপন নিরাপত্তারক্ষী’ বলে অভিহিত করেছে।
এই বিশেষ পদাধিকার বলেই মেরি পরবর্তী কালে ‘নিষিদ্ধ’ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন ধর্মীয় উপচার পালন করতে পারতেন।
আর একটি শবাধারের ভিতর রয়েছে ফেতেক নামের এক ব্যক্তির দেহাবশেষ। তাঁর সম্পর্কে খুব বিশেষ কিছু জানা যায়নি। প্রতিটি মমির সঙ্গে সোনাদানা ছাড়াও পাওয়া গিয়েছে মাটির তৈরি নানা আকারের পাত্র।
মিশরের পুরাতত্ত্ব মন্ত্রকের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ জাহি হাওয়াসের মতে এই সমাধিগুলি খ্রিস্টপূর্ব ২৪০০ থেকে ২১০০ অব্দের।
মমিগুলির গুরুত্ব প্রসঙ্গে জাহি এবং আর এক প্রত্নতত্ত্ববিদ আলি আবু দেশিস জানিয়েছেন, মমিগুলোর আকার এবং সেগুলোর আশেপাশে পাওয়া নানা জিনিস পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে রাজা বা ফ্যারাওয়ের সঙ্গে জনগণের কেমন সম্পর্ক ছিল।
কিছু দিন আগেই মিশরের এক দল প্রত্নতত্ত্ববিদ কায়রোর নিকটবর্তী লাক্সর শহরে দাবি করেছিলেন যে, রোমান যুগের এক প্রাচীন শহরের সন্ধান পেয়েছেন তারা। সেই শহরই আজকের সাক্কারা কি না, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়।
মিশর সরকার সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, দেশের প্রত্নক্ষেত্রগুলিতে আরও নিবিড় ভাবে খননকার্য চালানো হবে। এর ফলে আরও বেশ কিছু রহস্যে আলো ফেলা যাবে বলে তাদের বিশ্বাস।
মিশরের মিউজ়িয়ামে আরও বেশি সংখ্যককে পর্যটককে আকর্ষণ করতেই এই পদক্ষেপ করছে মিশর সরকার। ২০২৮ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ৩ কোটি পর্যটককে মিউজ়িয়ামমুখো করাতে চাইছে তারা।
যদিও প্রত্নতত্ত্ববিদদের একাংশের অভিযোগ, শুধু চমকদারির জন্যই এ সব করা হচ্ছে। প্রত্নক্ষেত্রগুলিতে খননকার্য চালানোর জন্য যে বিশেষ পড়াশোনা বা গবেষণা করতে হয়, সে ব্যাপারে নাকি যথাযথ উদ্যোগ নিচ্ছে না সরকার।