চলতি বছরের শেষে হতে পারে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক হৃদেশ কুমারের ঘোষণা ঘিরে তোলপাড় উপত্যকা।
হৃদেশ জানিয়েছেন, জম্মু-কাশ্মীরে বসবাসকারী ভিন্ রাজ্যের মানুষও বিধানসভা নির্বাচনে ভোটাধিকার পাবেন।
‘ভূমিপুত্র’ না হলেও মিলবে ভোটাধিকার। নির্বাচন কমিশনের বুধবারের এই ঘোষণার পর ফের উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি।
এর ফলে নয়া ভোটার তালিকায় আরও ২০ লক্ষ নাম যুক্ত হবে। কিন্তু যে কেউই কি জম্মু-কাশ্মীরের ভোটার হতে পারেন? কী বলছে নির্বাচনী আইন-বিধি?
হৃদেশ জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীরে বসবাসকারী বা কর্মরত ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা-সহ যে কোনও ভারতীয় নাগরিক ভোটের তালিকায় তাদের নাম তালিকাভুক্ত করতে পারেন এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিধানসভা এবং স্থানীয় সংস্থা নির্বাচনে ভোটও দিতে পারবেন।
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানান, এমনকি জম্মু-কাশ্মীরে আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে যে বিশাল সশস্ত্র বাহিনী নিযুক্ত রয়েছে, সেই সেনা কর্মীরাও ভোটার তালিকায় তাঁদের নাম যোগ করতে পারেন।
এই ঘোষণায় বিতর্কের সঙ্গে সঙ্গে একাংশের মধ্যে বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, জম্মু-কাশ্মীরে গেলেন, তার পর ভোট দিয়ে আবার সেখান থেকে ফিরে আসতে পারেন।
অনেকে এ-ও মনে করছেন, এক জন নাগরিক একাধিক রাজ্যে, একাধিক বার ভোট দিতে পারেন।
নিয়ম হল, যে কোনও ভারতীয় নাগরিক (যারা এ দেশে থাকেন) যে কোনও রাজ্য নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, একাধিক রাজ্যে একাধিক নির্বাচনে ভোট দেওয়া যাবে।
ভোটারদের তালিকায় নাম যোগ করার আগে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা সমস্ত নথি পরীক্ষা করে দেখেন।
ধরা যাক, পশ্চিমবঙ্গের কোনও বাসিন্দা চেন্নাই চলে গেলেন। সেখানেই থাকলেন এবং আবেদন জানালেন যে তিনি চেন্নাইতেই ভোট দিতে চান। সে ক্ষেত্রে বাংলার ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ যাবে।
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের ঘোষণার পর আর একটি বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে— ২০-২৫ লক্ষ নতুন ভোটার নির্বাচনী তালিকায় যুক্ত হবে, যাদের সঙ্গে উপত্যকার কোন সম্পর্ক নেই। সত্যিটা আসলে কী?
ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য এখন চারটি তারিখ দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনের তরফে। ১ জানুয়ারি, ১ এপ্রিল, ১ জুলাই, ১ অক্টোবর। জম্মু-কাশ্মীরে শেষ বার ভোটার তালিকায় নাম তোলার প্রক্রিয়া চলে ২০১৯ সালে। জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, গত তিন বছরে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ নতুন ভোটার তৈরি হয়েছে।
অন্য দিকে, বিজেপি বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করছে, বিজেপি নির্বাচনে জেতার জন্য ভোটার আমদানি করছে। বিজেপি যে হেতু জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের মন জয় করতে পারবে না, তাই বহিরাগতদের দিয়ে ভোটের শতাংশ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
কমিশন বলছে, বিষয়টি আদৌ তা নয়। শুধু মাত্র উপত্যকায় যাঁরা ‘সাধারণ ভাবে বসবাস করছেন’, তাঁরাই নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। তাই এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনও জায়গা নেই বলে কমিশনের তরফে দাবি করা হয়েছে।