হায়দরাবাদ পাবলিক স্কুলে একসঙ্গে পড়াশোনা করার সময় থেকেই সত্য নাদেল্লার সঙ্গে আলাপ। তা গভীর বন্ধুত্বে পরিণত হতে বিশেষ দেরি হয়নি। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা গেলেও নাদেল্লার সঙ্গে সম্পর্কে ছেদ পড়েনি। পরে মাইক্রোসফ্টটের সিইও নাদেল্লার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন অনুপমা প্রিয়দর্শিনী।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাদেল্লার সম্পর্কে খুঁটিনাটি বহু কথাই শিরোনাম কেড়ে নেয়। ৬,২০০ কোটির মালিকের স্ত্রী অনুপমাকে তুলনায় নেপথ্যচারিণী বলা যায়। নেপথ্যে থেকেও স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলেছেন খ্যাতনামীর স্ত্রী।
তেলঙ্গানার বেগমপেট এলাকার সেই স্কুলের দুই সহপাঠীর বাবাদের মধ্যেও গভীর বন্ধুত্ব ছিল। অনুপমার বাবা কেআর বেণুগোপালের সঙ্গে আইএসএসের একই ব্যাচে ছিলেন নাদেল্লার বাবা বুক্কপুরম নাদেল্লা যুগন্ধর।
অনুপমার জন্ম দিল্লিতে। তবে তাঁর স্কুলজীবন কেটেছে হায়দরাবাদে। স্কুলের পর নাদেল্লার মতোই মণিপাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে পড়াশোনা করেন। স্নাতক স্তরে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন নাদেল্লা। অনুপমা স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক।
এককালে স্থপতি হিসাবে চাকরিও করতেন অনুপমা। তবে ১৯৯২ সালে বিয়ের পর সে পেশা ছেড়ে সংসারে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তত দিনে আমেরিকায় পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করে দিয়েছেন নাদেল্লা।
আমেরিকার উইসকনসিন-মিলওয়াকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি হাসিল করেছিলেন নাদেল্লা। পরে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বুথ স্কুল অফ বিজ়নেস থেকে এমবিএ করেন।
প্রথাগত উচ্চশিক্ষা শেষে আমেরিকার গ্রিন কার্ডও পেয়ে গিয়েছিলেন নাদেল্লা। গ্রিন কার্ডধারীর সঙ্গে বিয়ের পরেও অনুপমার ভিসার আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের পর ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে নাদেল্লার সঙ্গে আমেরিকায় কিছু দিন কাটিয়েছিলেন তিনি।
অনুপমার খাতিরে নিজের গ্রিন কার্ডও ফিরিয়ে দেন নাদেল্লা। স্ত্রীর জন্য অভিবাসন দফতরের নিয়মের জটিলতা কাটাতে এইচ-১বি ভিসা নেন তিনি।
নিজেদের বিয়ে নিয়ে বিশেষ হইচই করার ইচ্ছা ছিল না অনুপমা এবং নাদেল্লার। তবে সেই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাও।
‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনুপমাদের বিয়েতে বিনা আমন্ত্রণেই হাজির হন রাও। এমনকি, আমন্ত্রণ না জানানোয় নবদম্পতিকে নাকি মৃদু ভর্ৎসনাও করেন তিনি।
দম্পতির বিয়ের বছরেই মাইক্রোসফ্টের সিইও পদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন নাদেল্লা। এর পর একে একে জন্ম হয় জ়েন, তারা এবং দিব্যা— তিন সন্তানের। ২০২২ সালে মৃত্যু হয় ২৬ বছরের জ়েনের।
ছোটবেলা থেকেই সেরিব্রাল পল্সির শিকার ছিলেন জ়েন। দৃষ্টিহীনতা ছাড়াও স্প্যাস্টিক কোয়াড্রিপ্লেজিয়া ছিল তাঁর। ছেলের মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল হলেও নিজের কর্তব্যে অটল থেকেছেন অনুপমা। সিয়াট্লের চিলড্রেন হাসপাতালের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত তিনি।
জ়েনের মৃত্যুর আগে থেকেই অবশ্য নানা সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত অনুপমা। এক সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের যাত্রা যতই কঠিন হোক না কেন, তা মোকাবিলা করার শিক্ষাও দিয়েছে জ়েনের মৃত্যু। অন্যদের প্রতি সদয় হওয়া, তাঁদের ক্ষমতায়নের উপায়ও শিখেছি।’’
কোভিডের মতো অতিমারির সময় প্রভূত দানধ্যান করেছেন অনুপমা। অতিমারির মোকাবিলায় ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তহবিলে ২ কোটি টাকা দান করেন তিনি। সে বছর অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার মহিলা এবং কৃষিজীবীদের বিকল্প জীবিকার জন্যও ওই একই পরিমাণ অর্থ দান করেন।
৩১ বছরের দাম্পত্যে স্ত্রীকে সবসময় পাশে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাদেল্লা। অনুপমার সঙ্গে দেখা হওয়াটা যে তাঁর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, এমনই মনে করেন তিনি। জীবনসঙ্গীকে ‘অসাধারণ মহিলা’ বলেন নাদেল্লা।