প্রায় ৪০ মিনিট নিরাপত্তারক্ষীরা পথ আটকে রেখেছিলেন। অবশেষে বোলপুরের ‘ভোলে ব্যোম রাইস মিল’-এ ঢোকেন সিবিআই আধিকারিকেরা। চালকলের ভিতরে ঢুকেই ঝকঝকে দামি গাড়ির সম্ভার চোখে পড়ে তাঁদের। সূত্রের খবর, অনুব্রতের স্ত্রী এবং মেয়ের নামেই রয়েছে এই চালকল। গ্যারেজের গাড়িগুলির মালিকদের নামধামও হাতে আসে গোয়েন্দাদের। কী কী গাড়ি রয়েছে ওই চালকলের গ্যারেজে?
ভোলে ব্যোম রাইস মিলের ভিতরে মোট পাঁচটি গাড়ি রয়েছে। বেশির ভাগ গাড়ির দামই মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
চালকলের গ্যারেজে থাকা দামি দামি গাড়িগুলির মধ্যে আছে একটি হুড খোলা মহিন্দ্রা থর। ওই গাড়ির নম্বর ডাব্লুউ বি ৪বি ৬৯৬৬। এই গাড়িটির মালিকানা অর্ক দত্তের নামে। অনুব্রতের ব্যক্তিগত সচিব এই অর্ক।
হুড খোলা মহিন্দ্রা থর গাড়িটির আনুমানিক মূল্য ১৬ লক্ষ টাকা। বীরভূমের রাস্তায় এই গাড়িটিকে অনেক বার দেখা গিয়েছে বলেও স্থানীয়দের অনেকেই দাবি করেছেন।
একটি মহিন্দ্রা আল্ট্রাজ জি৪ গাড়িও রয়েছে বিতর্কিত ওই চালকলের গ্যারেজে। গাড়ির নম্বর ডাব্লুই বি ৫৪বি ৯৫৫৫।
মহিন্দ্রা আল্ট্রাজ জি৪ গাড়িটির মূল্য ৩২ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। ডিজেলচালিত এই গাড়িটিতে সাত জন বসার সুবিধা রয়েছে। ডিজেলচালিত এই গাড়িটি ২০১৮ সালে প্রথম ভারতের বাজারে আসে।
চালকলে থাকা দামি গাড়ির তালিকায় একটি ফোর্ড এন্ডেভার গাড়িও রয়েছে। সূত্রের খবর, এই গাড়ি চড়েই এসএসকেএমে চিকিৎসা করাতে আসতেন অনুব্রত। গাড়ির নম্বর ডাব্লুউ বি৫৪ ইউ৬৬৬৬। অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী প্রবীর মণ্ডলের নামে এই গাড়িটি রয়েছে। যদিও প্রবীরের দাবি, এই গাড়িটি তাঁর কাছে থেকে হুমকি দিয়ে নিয়ে নেন অনুব্রত। তিনি বলেন, ‘‘ঠিকাদারির টেন্ডার পেতে ৪৬ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম বিশ্বকর্মা পুজোর সময়। নগদ পাঁচ কোটি টাকাও দেওয়া হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। সেই টেন্ডার তো পেলামই না, উল্টে টাকা আর গাড়়ি ফেরত চাইতে গেলে হুমকি দেওয়া হয়। সর্ব ক্ষণ গাঁজার কেসের ভয় দেখাত।’’
ফোর্ড এন্ডেভার গাড়িটির দাম প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা। সাত আসনের এই এসইউভি ২০০৩ সালে প্রথম ভারতের বাজারে এসেছিল।
ভোলে ব্যোম চালকলের গ্যারেজে রয়েছে একটি মহিন্দ্রা-৫০০ গাড়িও। ডাব্লুউ বি৫৪ জেড ৪১৭৬ নম্বরপ্লেটওয়ালা এই গাড়ির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন। সতীর্থ ট্রাস্টের নামে এই গাড়িটি কেনা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
চালকলের গ্যারেজ থেকে উদ্ধার হওয়া এই মহিন্দ্রা-৫০০ গাড়িটি কোন বছরের মডেল তা এখনও জানা যায়নি। তবে যখন এই গাড়িটি প্রথম বাজারে আসে তখন এর দাম ছিল সাড়ে ১২ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। তবে এই গাড়ির নতুন মডেলের দাম প্রায় ২১ লক্ষ টাকা।
এই চারটি গাড়ি ছাড়া চালকলের ওই গ্যারেজ থেকে উত্তরাখণ্ডের নম্বরপ্লেট যুক্ত একটি গাড়িও উদ্ধার করেছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। ওই টাটা সুমোটির নম্বর ইউএ ০৪ ৭১৮৩। টাটা সুমো ভারতের বুকে একটি বহুল প্রচলিত গাড়ি। অনুব্রত মূলত এই গাড়ি চেপে ঘুরতেন বলেই স্থানীয়দের দাবি। উদ্ধার হওয়া ওই টাটা সুমোটির আনুমানিক মূল্য ৭ লক্ষ টাকা।
চালকলের গ্যারেজ থেকে উদ্ধার হওয়া বহুমূল্য ঝকঝকে এই সব গাড়িতে আবার সাঁটানো রয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার’ লেখা স্টিকার।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে মোট ৪৫ বিঘা জমির উপর তৈরি ভোলে ব্যোম চালকলে ঢোকে সিবিআইয়ের একটি দল। সূত্রের খবর, গত দু’মাস ধরে এই চালকলটি বন্ধ। তা সত্ত্বেও সিবিআই আধিকারিকেরা ঢোকার সময় এই চালকলের ভিতরে ছিলেন অনেক কর্মী। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তদন্তকারী দল ওই মিল থেকে বেরিয়ে যায়।।