‘অ্যানিম্যাল’ ছবির হিংস্রতা হইচই ফেলেছে। কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে ছবির নায়ক রণবীর কাপুর, ভিলেন ববি দেওল থেকে পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভঙ্গাকে। ভয়ঙ্কর সেই সব খুনখারাপির দৃশ্যের পাশাপাশি শিরোনামে আরও একটি বিষয়। ছবির নায়ক রণবীর কাপুরের সঙ্গে তৃপ্তি দিমরির ঘনিষ্ঠ দৃশ্য। কে এই তৃপ্তি, যাঁকে নিয়ে এত আলোচনা, সমালোচনা?
রণবীরের সঙ্গে তৃপ্তির সেই অন স্ক্রিন ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনা শুরু হয়েছে। দু’জনের তরফে জানানো হয়েছে, চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে তাঁরা সেই দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। নির্দেশ মেনেছেন পরিচালকের। তাতে সমালোচনা বন্ধ হয়নি। ৩। ছবি মুক্তির পর থেকে ৫০০ কোটি টাকা রোজগার করেছে। অনেকেই তারিফ করেছেন রণবীর আর ববির অভিনয়ের। তার পাশাপাশি রণবীর এবং তৃপ্তির ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নিয়েও চলছে কথাবার্তা।
এই নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃপ্তি নিজেও। জানিয়েছেন, ‘অ্যানিম্যাল’ ছবির ওই দৃশ্যের থেকেও অনেক বেশি কঠিন ছিল ‘বুলবুল’ ছবিতে ধর্ষণের দৃশ্যে অভিনয়। কেন ওই দৃশ্যে অভিনয় অতটা কঠিন ছিল, তা-ও একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন তৃপ্তি।
একটি সাক্ষাৎকারে তৃপ্তি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, বুলবুলে যে ধর্ষণের দৃশ্যে অভিনয় করেছিলাম, সেটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ, ওখানে আমায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল। নিজে থেকে কিছু করার তুলনায় আত্মসমর্পণের অভিনয় করা অনেক বেশি কঠিন। ওটা সামলাতে পারলে এ বারের দৃশ্য আমার কাছে একেবারেই কঠিন নয়।’’
তৃপ্তি জানিয়েছেন, ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ের সময় মাত্র চার জন সেটে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ক্রমাগত সাহস জুগিয়েছেন তাঁকে।
তৃপ্তির কথায়, ‘‘ছবির ওই দৃশ্য নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। আমাকেও প্রথমে নাড়া দিয়েছিল সেটা। প্রথম কয়েকটি ছবিতে আমি সমালোচনার মুখে পড়িনি। এ বার তা-ই হল। সেটে যাঁরা ছিলেন, সকলে বোঝানোর চেষ্টা করে গিয়েছিলেন। তবে আমি মনে মনে ভেবে নিয়েছিলাম যে, যা করছি, ঠিক করছি। কারণ, এক জন অভিনেতা হিসাবে এ ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক।’’
শুটিংয়ের সময়ও বেশ চাপেই ছিলেন তৃপ্তি। তবে বাকিরা দারুণ সাহায্য করেছেন। তিনি জানান, রণবীর, তিনি, পরিচালক সন্দীপ এবং চিত্রগ্রাহক ছাড়া আর কেউ ছিলেন না সেটে। প্রতিটা শটের পর বাকিরা এসে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘তুমি ঠিক আছো তো? অসুবিধা হচ্ছে না তো?’’
এর পরেই তৃপ্তি জানান, যাঁদের ছবি তৈরির বিষয়ে ধারণা নেই, তাঁরা অনেক কিছু কল্পনা করে নেবেন। তাঁদের কাছে গোটা বিষয়টি ‘ভয়ঙ্কর’ বতে পারে। কিন্তু তাঁর কাছে সে রকম নয়। চরিত্রের প্রয়োজনে যা করা উচিত, তা-ই করবেন। সাফ জানিয়েছেন, তৃপ্তি।
এর পর ভিকি কৌশলের বিপরীতে একটি ছবিতে অভিনয় করছেন তৃপ্তি। নাম ‘মেরে মেহবুব মেরে সনম’। ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পাবে সেই ছবি। প্রযোজনা করছে কর্ণ জোহরের ধর্মা প্রোডাকশন।
এর পর রাজকুমার রাওয়ের সঙ্গেও একটি ছবিতে অভিনয় করছেন তৃপ্তি। নাম ‘ভিকি বিদ্যা কি উও ওয়ালা ভিডিয়ো’। ছবিটি রোমান্টিক কমেডি। পরের বছরই মুক্তি পাওয়ার কথা।
শুধু ‘অ্যানিম্যাল’ নয়, বরাবরই ভিন্ন পথে হেঁটেছেন তৃপ্তি। শ্রেয়স তলপড়ের পরিচালনায় ‘পোস্টার বয়’ ছবি দিয়ে বলিউডে প্রবেশ তৃপ্তির। সময়টা ২০১৭ সাল। ছবিতে ছিলেন সানি দেওল, ববি, শ্রেয়স নিজে। বিপরীতে তৃপ্তি।
২০১৮ সালে মুক্তি পায় তৃপ্তি অভিনীত ‘লায়লা মজনু’। পরিচালক ছিলেন ইমতিয়াজ আলি। বিপরীতে ছিলেন অবিনাশ তিওয়ারি। ছবিটি বাণিজ্যিক ভাবে সফল হয়নি। তবে তৃপ্তির অভিনয় মন কাড়ে।
২০২০ সালে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় ‘বুলবুল’। প্রযোজক ছিলেন অনুষ্কা শর্মা এবং ভাই কর্নেশ শর্মা। বাঙালি বধূর চরিত্রে তৃপ্তির অভিনয় নজরে আসে। অবিনাশ এবং রাহুল বোসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছিলেন তৃপ্তি।
২০২২ সালে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় ‘কলা’। ওই ছবিরও প্রযোজক অনুষ্কা শর্মা। কলা চরিত্রে অবসাদ, উদ্বেগ, হিংসা নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তৃপ্তি। তাঁর অভিনয় মন ছুঁয়ে যায় দর্শকদের।
এ হেন তৃপ্তির জন্ম দিল্লিতে। ১৯৯৫ সালে। তৃপ্তির পরিবার আদতে উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগের বাসিন্দা। সমাজবিদ্যায় দিল্লির একটি কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন তিনি। পুনের ফিল্ম এবং টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে একটি কোর্সও করেন।
২০১৪-১৫ সালে মডেলিংয়ে হাতেখড়ি। ২০১৬ সালে একটি ছবির জন্য অডিশন দিয়েও সুযোগ পাননি। ২০১৭ সালে সুযোগটা এসে যায়। ‘পোস্টার বয়’-এর সৌজন্যে।
তবে ছবির থেকে সম্পর্কের কারণে অনেক বেশি আলোচিত হয়েছেন তৃপ্তি। শোনা যায়, অনুষ্কার ভাই কর্নেশের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তৃপ্তি। কর্নেশ তাঁর ‘বুলবুল’ এবং ‘কলা’ ছবির প্রযোজক ছিলেন। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর কর্নেশের সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ ছবি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করেন তৃপ্তি। জানান, নিজেদের সম্পর্কের কথা।
তৃপ্তির জন্মদিনে সমাজমাধ্যমে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন খোদ অনুষ্কা। তার পরেই জল্পনা শুরু হয়, তবে কি বিয়েটা সেরেই ফেলবেন কর্নেশ আর তৃপ্তি! এর মাঝেই কর্নেশের সঙ্গে প্রযোজনা ব্যবসা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন অনুষ্কা।
সব ঠিকঠাকই চলছিল। আচমকাই বাধে গোল। সমাজমাধ্যমে একে অন্যকে আনফলো করেন তৃপ্তি এবং কর্নেশ। অদ্ভুত একটি পোস্টও দেন তৃপ্তি। সেখানে কর্নেশের উদ্দেশে তিনি লেখেন, ‘‘লোকে অনেক কথা বলবে। কিছু যায় আসে না। যাতে তুমি ভাল থাকো, তা-ই করো।’’ কর্নেশ সম্পর্ক ভাঙার বিষয়ে মুখে কিছু বলেননি। তবে তৃপ্তি বুঝিয়ে দেন, আপাতত কেরিয়ারের দিকেই নজর দিতে চান তিনি। আর তা-ই করেও চলেছেন। ‘অ্যানিম্যাল’ তার প্রমাণ।