স্কুলের পাট চোকানোর পর আর ৪-৫ জন সাধারণ ছেলের মতো তিনি কলেজে যাননি। চেনা ছকের বাইরে হেঁটেছেন। আর তাতেই সাফল্য পেয়েছেন। স্কুলজীবন শেষের পরই টাকা রোজগারের দিকে ঝুঁকেছিলেন তিনি। সেই সূত্রেই বাবার ব্যবসায় হাত পাকাতে শুরু করেন। সেই যে বণিক দুনিয়ায় পা রাখলেন তিনি, তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। তিনি দেশের অন্যতম ধনী ব্যক্তি অনিল আগরওয়াল।
অনিলের নিজস্ব সংস্থা রয়েছে। সেই সংস্থার চেয়ারম্যান তিনি। দেশে অন্যতম নামী সংস্থা সেটি। কী ভাবে ব্যবসায় হাত পাকালেন তিনি? বণিক মহলে নিজেকে কী ভাবে প্রতিষ্ঠিত করলেন এই ‘বিহারিবাবু’?
১৯৫৪ সালে বিহারের পটনায় একটি মারোয়াড়ি পরিবারে জন্ম অনিলের। পটনার মিলার হাইস্কুল থেকে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি।
অ্যালুমিনিয়াম কনডাক্টরের ব্যবসা ছিল অনিলের বাবা। তবে সেই ব্যবসা নেহাতই ছোট ছিল। স্কুলের পাট শেষের পর কলেজে ভর্তি হননি অনিল। মন দেন ব্যবসায়। বাবার ব্যবসায় নিজেকে সঁপে দেন অনিল।
তখন অনিলের মাত্র ১৯ বছর বয়স। সেই সময় পটনা ছেড়ে মুম্বই পাড়ি দেন। বিভিন্ন কেব্ল সংস্থা থেকে বাতিল করা ধাতু সংগ্রহ করে তা মুম্বইয়ে বিক্রি করতেন অনিল। এই কারবারে সাফল্যও পান তিনি।
এর পর ১৯৭৬ সালে একটি সংস্থা অধিগ্রহণ করেন অনিল। ওই সংস্থা তামা তৈরি করত। ১০ বছর ধরে এই ব্যবসা চালিয়েছিলেন তিনি।
এর পর ১৯৮৬ সালে একটি কারখানা তৈরি করেন অনিল। ওই কারখানায় ‘জেলি ফিল্ড কেব্ল’ তৈরি করা হত।
যে সংস্থাটি অনিল অধিগ্রহণ করেছিলেন, ১৯৯৩ সালে সেটিই ছিল প্রথম বেসরকারি সংস্থা, যারা তামা গলাত। পরে আরও একটি সংস্থা তিনি অধিগ্রহণ করেন।
এর পর যত দিন গড়িয়েছে, ততই একের পর এক সংস্থা অধিগ্রহণ করেছেন তিনি। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও একাধিক সংস্থা অধিগ্রহণ করেছিলেন।
স্কুলজীবন শেষের পর কলেজে না গিয়ে বাবার ব্যবসায় যোগ দিয়ে যে তিনি ভুল করেননি, তা অনিলের যাত্রাপথ দেখলেই বোঝা যায়। বলা যায়, তাঁকে কোনও দিনই পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে রাতারাতি নজর কেড়েছিলেন অনিল।
অনিলের ব্যবসায় ৭০ শতাংশেরও বেশি মালিকানা রয়েছে তাঁর পরিবারের। অনিলের পরিবারের মোট সম্পত্তিও চোখধাঁধানো। এই সম্পত্তির পরিমাণ ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এ তো গেল অনিলের পরিবারের সম্পত্তির কথা। অনিলের একার সম্পত্তির পরিমাণও নেহাত কম নয়! এই অঙ্কটা ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
বিহার তাঁর জন্মভূমি। কেরিয়ার গড়তে তরুণ বয়সে সেই বিহার তাঁকে ছাড়তে হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তাঁর এই সাফল্যের জন্য বিহারের অবদানের কথা ভোলেননি অনিল। বিহারে যেখানে বড় হয়ে উঠেছিলেন, পরে সেখানে গিয়ে স্মৃতির সরণিতে হেঁটেছিলেন তিনি।
তাঁর প্রিয় পদ ‘লিট্টি চোখা’। যা কিনা বিহারের একটি জনপ্রিয় খাবার। পছন্দের খাবারের কথা সম্প্রতি ভাগ করে নিয়েছেন অনিল।
এক সাক্ষাৎকারে অনিল বলেছেন, ‘‘ইংরাজি আমার প্রথম ভাষা নয় ঠিকই। তবে হোমসিক কথার অর্থ বুঝি। কাজের জন্য যখন বিহার ছাড়তে হয়েছিল, তখন এই শব্দের মর্মার্থ টের পেয়েছিলাম।’’ বিহারকে যে তিনি কতটা ভালবাসেন, সেই কথাই বোঝাতে গিয়ে এই মন্তব্য করেছিলেন অনিল।