Great Nicobar Island

সিঙ্গাপুরকে সরিয়ে সাগরের বাণিজ্যে ছড়ি ঘোরাবে আন্দামানের ছোট্ট দ্বীপ! ঘুঁটি সাজাচ্ছে দিল্লি

আন্দামানের দক্ষিণতম দ্বীপটির ভৌগোলিক অবস্থান তাকে চর্চার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। আগামী দিনে এই দ্বীপ হয়ে উঠতে পারে সাগরের বাণিজ্যে সিঙ্গাপুর, কলম্বোর বিকল্প।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৩ ০৮:১৫
Share:
০১ ২২

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণতম দ্বীপটির নাম গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপ ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা থেকে মাত্র ১৮০ কিলোমিটার দূরে।

০২ ২২

মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মাঝের মলাক্কা প্রণালীর পশ্চিম দিকে রয়েছে গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড। বিশ্বের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক রুটের মধ্যে অন্যতম এই প্রণালী।

Advertisement
০৩ ২২

গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড আকারে সিঙ্গাপুরের চেয়ে বড়, হংকংয়ের চেয়ে খানিকটা ছোট। এর বিস্তৃতি প্রায় ১,০৪৪ বর্গ কিলোমিটার। দ্বীপটি ছোট ছোট পাহাড়ে ঘেরা।

০৪ ২২

গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ডের একেবারে দক্ষিণের অংশটির নাম ইন্দিরা পয়েন্ট। এটি ভারতের দক্ষিণতম বিন্দু হিসাবে পরিচিত। বেশ কিছু নদী শিরা-উপশিরার মতো এই দ্বীপকে ঘিরে রেখেছে।

০৫ ২২

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সব দ্বীপগুলিতে আদিবাসী আইন প্রযুক্ত হয়। একমাত্র গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড ছাড়া। এখানে শমফেন উপজাতির বাস। সরকারের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

০৬ ২২

আন্দামানের এই দ্বীপটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। দ্বীপে প্রাকৃতিক সম্পদ ভরপুর। রবার, লাল তৈলবীজ, কাজু, পামের মতো গাছ এখানে পাওয়া যায়। প্রাচীন প্রবাল প্রাচীরও দ্বীপের গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে।

০৭ ২২

বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরে বাণিজ্যিক পণ্যবাহী যে সব জাহাজ পরিবহণ করা হয়, তাতে জ্বালানি ভরার জন্য সিঙ্গাপুর এবং কলম্বোর উপর নির্ভর করেন বণিকেরা। গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ডে ট্রান্স-শিপমেন্ট পোর্টের ব্যবস্থা এই নির্ভরতা কমানো যায়।

০৮ ২২

সিঙ্গাপুরে রয়েছে বিশ্বের ব্যস্ততম ট্রান্স-শিপমেন্ট বন্দর। খনিজ তেলবাহী ৫০ শতাংশ জাহাজ সিঙ্গাপুর হয়েই যায়। জ্বালানি ভরার জন্য এই বন্দরকে ব্যবহার করা হয়। সামগ্রিক বাণিজ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর ব্যস্ততার নিরিখে সাংহাই বন্দরের পরেই।

০৯ ২২

সিঙ্গাপুর বন্দরের গুরুত্ব তার ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যই। মলাক্কা প্রণালীর একেবারে পাশেই অবস্থিত সিঙ্গাপুর। এর চারপাশে বাণিজ্যসুলভ পরিবেশও রয়েছে। এই অনুকূল পরিস্থিতিকেই কাজে লাগিয়ে ক্রমাগত বন্দরটিকে উন্নত করেছে সরকার।

১০ ২২

পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে পণ্যবাহী জাহাজ ভারত মহাসাগরে এসে মূলত দু’টি পথ অনুসরণ করে। এক, শ্রীলঙ্কার পাশ দিয়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর। দুই, মলাক্কা প্রণালী দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া।

১১ ২২

গ্রেট নিকোবরকে সমুদ্রের মাঝে জংশনে পরিণত করতে পারলে সিঙ্গাপুর এবং শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরের সঙ্গে টেক্কা দেওয়া সম্ভব হবে। এই দুই বন্দরের যোগ্য বিকল্প হয়ে উঠতে পারে গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড।

১২ ২২

এশিয়া তথা সমগ্র বিশ্বে ছোট এবং মাঝারি আকারের জাহাজ নির্মাণের অন্যতম পীঠস্থান হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম। গ্রেট নিকোবরে জাহাজ তৈরির শিল্প গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশের এই শহরটিকেও টেক্কা দেওয়া যাবে।

১৩ ২২

পৃথিবীতে যত জাহাজ পণ্য পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত হয়, তার ৫০ শতাংশই পুরনো। সেগুলিকে বদলানো প্রয়োজন। জাহাজের এই ব্যবসা থেকে ২০ হাজার কোটি আয় হতে পারে। ভারত সেই ব্যবসায় হাত দিতে পারে গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ডের মাধ্যমে।

১৪ ২২

গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান সিঙ্গাপুরের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কেউ কেউ। পূর্ব, পশ্চিম এবং দক্ষিণের বাণিজ্যপথের একেবারে কেন্দ্রস্থলে মাথা তুলে আছে দ্বীপটি।

১৫ ২২

সামুদ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ডের গুরুত্বকে খাটো করা যায় না। এই রুট দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ খনিজ তেল পরিবহণ হয়।

১৬ ২২

ভারত মহাসাগরের এই অংশটিতে খনিজ তেল এবং গ্যাসের খনিও রয়েছে। এখান থেকে প্রতি বছর বিশ্বের ১৬.৮ শতাংশ তেল এবং ২৭.৯ শতাংশ গ্যাস পাওয়া যায়।

১৭ ২২

ভারতের খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির পথও এটাই। এ ছাড়া, সোনা, রুপো, নিকেল, কোবাল্ট, তামা, দস্তার মতো ধাতুগুলি এই অঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে।

১৮ ২২

গ্রেট নিকোবরের গুরুত্ব উপলব্ধি করে ভারত সরকার তাকে কাজে লাগানোর একাধিক পদক্ষেপ শুরু করেছে। এই দ্বীপে ভারতীয় বায়ুসেনার একটি এয়ার স্টেশন রয়েছে। দ্বীপটিকে সুরক্ষিত করতে যা কাজে লাগতে পারে।

১৯ ২২

গত মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি আয়োগ গ্রেট নিকোবর উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। তাতে পরিবহণ এবং প্রযুক্তিগত ঢালাও পরিষেবা দিয়ে দ্বীপটিকে সাজিয়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।

২০ ২২

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গ্রেট নিকোবরে বিমানবন্দর তৈরি হবে। যোগাযোগের মাধ্যম বৃদ্ধি করা হবে। ট্রান্স-শিপমেন্ট বন্দরও গড়ে তোলা হবে। সরকারের এই পরিকল্পনাগুলি আন্দামান ও নিকোবর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে কার্যকর করা হবে।

২১ ২২

ট্রান্স-শিপমেন্ট বন্দরের মাধ্যমে গ্রেট নিকোবরে গভীর সমুদ্র পরিবহণ পরিষেবা আনা হবে। বড় বড় সামুদ্রিক জাহাজ এই বন্দরে দাঁড়াতে পারবে।

২২ ২২

জাপানের সাহায্য নিয়ে ভারত সরকার চেন্নাই থেকে গ্রেট নিকোবর পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করেছে। যার মাধ্যমে দ্বীপটিতে টেলিকম পরিষেবা পাওয়া যাবে। সরকারি এই সমস্ত উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রেট নিকোবর আগামী দিনে বঙ্গোপসাগরের মাঝে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী আধিকারিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement