আমেরিকার হয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধে গিয়েছিলেন টেরি ভ্যান্স গার্নার। যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে তিনি এতটাই মর্মাহত হয়ে পড়েন যে, ঠিক করেন আর কোনও দিন যুদ্ধে যাবেন না। অতঃপর কৃষিকাজে মন দেন।
পশুদের জন্য খামার তৈরি করে চাষবাস করার সিদ্ধান্ত নেন টেরি। কিন্তু কে জানত যে, যুদ্ধের গুলি থেকে রক্ষা পাওয়া টেরির প্রাণ যাবে তাঁরই লালনপলন করা পশুদের হাতে!
বেশ কিছু বড় আকারের শূকরের চাষ শুরু করেছিলেন টেরি। কখনও কোনও অযত্ন হতে দেননি পোষ্যদের। কিন্তু তাঁর পালন করা শূকররাই এক দিন তাঁকে খেয়ে ফেলে!
ওরেগনের কৃষক টেরি সেই ভাগ্যবান সৈন্যদের এক জন যিনি ভিয়েতনাম প্রাণ হাতে ফিরতে পেরেছিলেন। ফিরেই তিনি বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন।
তবে যুদ্ধ থেকে ফিরেও ভাগ্যের মার থেকে বাঁচতে পারেননি টেরি। টেরির স্ত্রী জানান, এক দিন সন্ধ্যায় শূকরগুলিকে খেতে দিতে খোঁয়াড়ে গিয়েছিলেন টেরি। তবে তিনি আর ফিরে আসেননি।
পর দিন টেরির স্ত্রী তন্নতন্ন করে খুঁজেও তাঁর খোঁজ পাননি। কিছু সময় পর শূকরের খোঁয়াড়ের দিকে স্বামীকে খুঁজতে গিয়ে এক ভয়ানক দৃশ্য দেখেন টেরির স্ত্রী।
তিনি দেখেন, ওই খোঁয়াড়ের মেঝেতে মানুষের হাড়ের ছোট টুকরো এবং মানুষের দাঁত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। হাড় আর রক্ত পড়ে থাকলেও ওই মৃতদেহের সমস্ত মাংস কে বা কারা যেন খেয়ে নিয়েছে। ভয়ঙ্কর সেই দৃশ্য দেখে মূর্ছা যান টেরির স্ত্রী।
হুঁশ ফিরে এলে পুলিশের দ্বারস্থ হন টেরির স্ত্রী। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করে।
তদন্ত শেষে পুলিশ জানায়, শূকরদের খেতে দেওয়ার আগেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মেঝেতে পড়ে যান টেরি। এর পর তিনি তাঁরই পোষা শূকরদেরই খাবারে পরিণত হন।
মৃত্যুর সময় টেরির বয়স ছিল ৬৯। তাই তাঁর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে একেবারেই উড়িয়ে দেননি টেরি।
পুলিশ জানায়, টেরির মৃতদেহ এমন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, যা পরীক্ষা করে টেরি কোনও শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন কি না, তা বোঝার কোনও উপায় ছিল না।
টেরিকে কেউ এ রকম নৃশংস ভাবে খুন করেছিল কি না, তা জানতেও তদন্ত চালিয়েছিল পুলিশ। তবে অনেক চেষ্টা করেও কোনও কূলকিনারা করতে পারেনি।
যখন টেরির ছিন্নবিচ্ছিন্ন মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, তখন তাঁর পালিত শূকরদের মুখে রক্ত লেগে ছিল। মাংসের টুকরোও পাওয়া যায় তাদের পাকস্থলীতে। এ ছাড়া কাপড়ের টুকরোও তাদের পাকস্থলীতে পাওয়া গিয়েছে।
টেরির পরিবারের সদস্যেরা জানান, তিনি এক বার একটি শূকরছানাকে ভুলবশত মেরে ফেলেন। এর পরই তাঁকে বেশ কিছু শূকর আক্রমণ করে।
তবে তখন টেরি শূকরদের আক্রমণ থেকে বেঁচে যান। তাই হয়তো ওই দিন বাগে পেয়ে প্রতিশোধ নিতেই টোরির উপর আক্রমণ চালায় শূকরের দল। অন্তত এমনটাই দাবি টেরির পরিবারের সদস্যদের।
টেরির ভাই মাইকেল গার্নার জানান, শূকরের দল প্রথম বার আক্রমণ করার পর টেরি শূকরগুলিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পরে তাঁর হৃদয় পরিবর্তন হয়। শূকরের দলকে না মেরে তাদের আরও যত্ন করে লালনপালন করতে থাকেন।
টেরিকে যে শূকরগুলি আক্রমণ করেছিল, তার এক একটির ওজন ছিল প্রায় দেড়শো কেজি।
শূকর সাধারণত আক্রমণাত্মক হয় না। তবে এর আগেও শূকরদের মানুষকে খেয়ে ফেলার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।
চিনে এক বার দু’বছর বয়সি শিশুকে ঘিরে খেয়ে ফেলে শূকরের দল। রাশিয়াতেও এক মহিলা নিজের পোষা শূকরকে খাওয়ানোর সময় মৃগী রোগে আক্রান্ত হন এবং তাঁকে তাঁরই পোষা শূকর জীবন্ত খেয়ে ফেলে।
তবে যতই নিদর্শন থাকুক, টেরির মৃত্যুর ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস এবং মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।