তাঁর পৈতৃক জায়গা তাঁরই ছদ্মবেশ ধারণ করে অন্যকে বিক্রি করে দিয়েছেন এক প্রতারক! শুধু তা-ই নয়, সেই জায়গায় পেল্লায় এক বাড়িও প্রায় তৈরি হয়ে এসেছে। পাঁচ বছর পর বাড়ি ফিরে সব দেখেশুনে হতভম্ব হয়ে যান আমেরিকার এক চিকিৎসক। ওই চিকিৎসকের নাম ড্যানিয়েল কেনিগসবার্গ।
ড্যানিয়েলের জন্ম আমেরিকার কানেকটিকাট প্রদেশের ফেয়ারফিল্ড শহরে। সেখানেই বেড়ে ওঠা এবং পড়াশোনা। কিন্তু চিকিৎসক হওয়ার পর পেশার সূত্রে দীর্ঘ দিন তিনি পরিবার নিয়ে অন্যত্র বসবাস করেন। যদিও বাবা-মা বহু দিন থাকতেন ফেয়ারফিল্ডেই।
কয়েক বছর পর বাবা মারা যান। ২০০৭ সালে মায়ের মৃত্যুর পর ফেয়ারফিল্ডের ৩২ কাঠা জমির মালিক হন ড্যানিয়েল। যার মধ্যে ছিল বাড়ি এবং বাড়ি লাগোয়া বিশাল জমি।
ড্যানিয়েলের বাবা ন্যাথানিয়েল এবং মা এস্টার সেই জমি কিনে সামান্য অংশে বাড়ি তৈরি করেছিলেন। বাকি জমির কিছুটা জুড়ে ছিল বাগান। বাকি অংশ ফাঁকাই পড়ে ছিল। তাঁদের মৃত্যুর পর ওই জায়গায় গাছগাছড়া গজিয়ে ওঠে।
মায়ের মৃত্যুর পর বছরে এক-দু’বার করে ফেয়ারফিল্ড যেতেন ড্যানিয়েল। তবে ২০১১ সালে পৈতৃক বাড়ি বিক্রি করে দেন তিনি। যদিও বাড়ি লাগোয়া জমি বিক্রি করেননি। সাড়ে তিন লক্ষ ডলার মূল্যের ওই জমি সন্তানকে দিয়ে যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন।
বাড়ি বিক্রির পর ড্যানিয়েলের ফেয়ারফিল্ডে যাওয়া কমে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের পর্যন্ত তিনি এক বারও সেখানে যাননি।
২০২২ সালের অগস্টে ড্যানিয়েলের ওই জমি তাঁর অজান্তেই বিক্রি হয়ে যায়। কেউ তাঁর ছদ্মবেশে সম্পত্তির ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ স্থানীয় এক সলিসিটরকে দিয়ে দেন এবং ওই জমি বিক্রির জন্য এক রিয়েল এস্টেট সংস্থাকে বিক্রি করে দিতে বলেন।
২০২২-এর অক্টোবরে ওই সংস্থা সাড়ে তিন লক্ষ ডলারের বিনিময়ে সেই জমি কিনে নেয়। এর কয়েক মাস পরে, একটি নির্মাণ সংস্থা ওই জমিতে বিশাল বাড়িও তৈরি করতে শুরু করে।
চার হাজার বর্গফুটের বাড়িটি তৈরির আগেই ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ১৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ডলারে বিক্রি হয়ে যায়। তবে পুরো বিষয়টি তখনও ছিল ড্যানিয়ালের অজ্ঞাতে।
বিষয়টি ড্যানিয়েলের গোচরে আসে ২০২৩-এর মে মাসে। তাঁর স্কুল জীবনের এক বন্ধু তাঁকে সেই খবর দেন। তড়িঘ়ড়ি ফেয়ারফিল্ডে যান ড্যানিয়েল। তাঁর জমিতে বাড়ি তৈরি হচ্ছে দেখে কার্যত হতভম্ব হয়ে যান।
সঙ্গে সঙ্গে এক জন আইনজীবী নিয়োগ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন ড্যানিয়েল। কে তাঁর সই এবং পরিচয় নকল করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তা-ও খুঁজে বার করতে বলেন।
এর পরেই ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। তদন্ত করে দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ড্যানিয়েলের ভুল জন্মদিন, ছবি এবং ঠিকানা দিয়ে তাঁর নামে একটি জাল পাসপোর্ট তৈরি করেছিলেন।
এর পর ওই ব্যক্তি ড্যানিয়েলের সই জাল করে কানেকটিকাটের আইনজীবী অ্যান্টনি মোনেলিকে ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ দিয়ে দেন এবং বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলেন।
তবে সঠিক মালিকের কাছ থেকে সম্পত্তি কেনেনি জেনে ওই রিয়েল এস্টেট সংস্থা বাড়ি তৈরির কাজ বন্ধ করে দেয়। ড্যানিয়েলকে জমিও ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। ওই সংস্থা জানায়, সমস্ত কাগজপত্র এত নিখুঁত ছিল যে, তা ভুয়ো বলে সন্দেহ করার অবকাশ ছিল না।
গত বছর থেকে ড্যানিয়েলের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।