আমেরিকার আকাশের কাছে একসঙ্গে টহল দিচ্ছিল দু’টি রুশ এবং দু’টি চিনা বোমারু বিমান। নজরে আসতেই বাধা দিল আমেরিকা এবং কানাডার যৌথবাহিনী। এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে হইচই পড়ে গিয়েছে। আমেরিকার সীমান্তের এত কাছে রাশিয়া এবং চিন একসঙ্গে টহল দেওয়ায় অনেক প্রশ্নও উঠে আসছে।
এই সপ্তাহের মাঝামাঝি আমেরিকার আলাস্কা প্রদেশের কাছাকাছি উড়তে দেখা যায় রাশিয়া এবং চিনের বোমারু বিমানগুলিকে। এর পরেই টনক নড়ে আমেরিকার। এই প্রথম রাশিয়া এবং চিনের বোমারু বিমানগুলিকে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের উপর আমেরিকার এত কাছে একসঙ্গে উড়তে দেখা গিয়েছে।
এই ঘটনার পরেই আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কি প্রকাশ্যেই একে অপরের দিকে সামরিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া এবং চিন? আর সেই কারণেই এই যৌথ টহল? এই প্রশ্ন উদ্বেগ বাড়িয়েছে আমেরিকা এবং তার বন্ধু দেশগুলির।
এ-ও লক্ষণীয় যে, সুমেরু অঞ্চলের কাছে চিন এবং রাশিয়ার মধ্যে ‘ক্রমবর্ধমান তৎপরতা’ নিয়ে অনেক দিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে আমেরিকা। আমেরিকার দাবি, দু’দেশের কার্যক্রম আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার। আলাস্কার আকাশের কাছে যৌথ ভাবে টহল দিতে দেখা যায় রাশিয়ার দু’টি কৌশলগত বোমারু বিমান তুপোলেভ টিইউ-৯৫ এবং চিনের দু’টি এইচ-৬ বোমারু বিমানকে। এর পরেই আমেরিকা এবং কানাডার যৌথবাহিনীর যুদ্ধবিমান রাশিয়া এবং চিনের যুদ্ধবিমানগুলিকে বাধা দেয়।
উত্তর আমেরিকার ‘অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড’ বলেছে, চারটি বোমারু বিমান আমেরিকা বা কানাডার আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি। তাই তাদের হুমকি হিসাবে ধরা না হলেও এই ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন, রাশিয়া এবং চিনের বোমারু বিমানের যৌথ টহল ‘বিস্ময়কর ঘটনা নয়’ বলেই বর্ণনা করেছেন। জানিয়েছেন, চিন এবং রাশিয়া হয়তো বেশ কিছু সময় ধরে এই পরিকল্পনা করছিল।
অস্টিনের কথায়, ‘‘এই প্রথম আমরা এই দু’টি দেশের বিমানকে একসঙ্গে উড়তে দেখলাম।’’
রাশিয়া এবং চিনের বোমারু বিমানের যৌথ টহল পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলেছিল। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দাবি, এটি এমন একটি মহড়া ছিল যেখানে একটি দেশ তার প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য অন্য দেশের বিমানের পাশে তাদের যুদ্ধবিমান ওড়ায়। তবে আমেরিকা এবং কানাডা এই মহড়াকে বাধা দিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৌশলগত যুদ্ধবিমানগুলিকে আলাস্কার ‘এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জ়োন (এডিআইজ়েড)’-এর মধ্যে ট্র্যাক করে বাধা দেওয়া হয়েছিল।
এডিআইজ়েড আন্তর্জাতিক আকাশসীমা হিসাবে বিবেচিত হয়। এডিআইজ়েড এলাকা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত নয় বা কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা এর তত্ত্বাবধানও করা হয় না।
আমেরিকা জানিয়েছে, তাদের উপকূলীয় এলাকা থেকে ৩২০ কিলোমিটার দূর দিয়ে উড়ছিল চিন এবং রাশিয়ার বিমানগুলি। অন্য দিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দাবি, বিমানগুলি চুকচি সাগর, বেরিং সাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর অংশে মহড়া চালাচ্ছিল।
কিন্তু রাশিয়ার টিইউ-৯৫ এবং চিনের এইচ-৬ যুদ্ধবিমানের ক্ষমতা কেমন? দু’টি যুদ্ধবিমানই খুব একটা অত্যাধুনিক নয়। টিইউ-৯৫ বর্তমানে বিশ্বের একমাত্র যুদ্ধবিমান যা প্রপেলার চালিত।
টিইউ-৯৫ এবং এইচ-৬, দুই বিমানই পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র-সহ অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্রও থাকে বিমান দু’টিতে।
কিন্তু সত্যিই কি একে অপরের দিকে সামরিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে চুক্তি সেরেছে রাশিয়া এবং চিন? আর সে কারণেই এই মহড়া? এখনও এই দুই দেশের মধ্যে কোনও প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। রাশিয়া এবং চিনের যৌথ মহড়ার ঘটনাও প্রথম নয়।
২০১৯ সালে চিন এবং রাশিয়া কৌশলগত বোমারু বিমান নিয়ে প্রথম বার যৌথ মহড়া চালিয়েছিল। এর পরেও অনেক বার যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে দুই দেশ। তবে এই প্রথম তারা আমেরিকার এত কাছে মহড়া দিল।
উল্লেখ্য, চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাং জিয়াওগাং জানিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকে এই নিয়ে অষ্টম বার যৌথ বিমান মহড়া চালিয়েছে দু’দেশের সামরিক বাহিনী।
যদিও রাশিয়া এবং চিনের যৌথ মহড়া নিয়ে এবং আমেরিকার সেই মহড়ায় বাধা দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠে আসছে ক্রমাগত।