শাহরুখ খান-দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত পাঠান সিনেমার ‘বেশরম রং’ গান মুক্তির প্রথম থেকেই বিতর্কের মুখে। কোনও পক্ষ এই গান সিনেমা থেকে ফেলে না দিলে সিনেমা নিষিদ্ধ করার ডাক দিয়েছে তো কোনও পক্ষ আপত্তি জানিয়েছে সিনেমার নাম নিয়ে। জনাকয়েক তারকা শাহরুখ, দীপিকাদের সিনেমার সমর্থনে এগিয়ে এলেও ব়ড় অংশ এখনও চুপ। ‘রাজনৈতিক রং’-ও লেগেছে ‘বেশরম রং’-এর উপর। মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র এই সিনেমাকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি একে সনাতন সংস্কৃতির পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন। তবে এই কি প্রথম! আগেও কোপের মুখে পড়েছে বিভিন্ন মিউজ়িক ভিডিয়ো।
‘সারেগামা’ প্রযোজনা সংস্থার তরফে ২০২১-এ ‘পানঘাট’ নামে একটি মিউজ়িক ভিডিয়ো মুক্তি পায়। এই মিউজ়িক ভিডিয়োর মুখ্যচরিত্রে ছিলেন বলিউড তারকা সানি লিওনি। সানির সেই গানে রাধাকৃষ্ণের উল্লেখ ছিল। আর সেই জন্যই এই মিউজ়িক ভিডিয়ো বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের নজরে পড়ে।
উত্তরপ্রদেশের মথুরার হিন্দু সাধুরা এই গান ‘অশ্লীল’ বলে দাবি করেন। তাঁদের দাবি ছিল, এই গান হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে। অখিল ভারতীয় তীর্থ পুরোহিত মহাসভার মহেশ পাঠকের দাবি ছিল, গানটি ভগবান কৃষ্ণের জন্মভূমিকে কলঙ্কিত করেছে।
অভিষেক বচ্চন এবং রানা ডগ্গুবাটি অভিনীত ‘দম মারো দম’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১১ সালে। এই সিনেমায় একই নামে একটি আইটেম গানও ছিল। গানের কিছু কথা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বেশ কিছু সংগঠন। অনেক সংগঠনের দাবি ছিল, গানের কয়েকটি কথা ‘উস্কানিমূলক’ এবং এই গান শ্লীলতাহানিতে প্ররোচনা দিতে পারে। উল্লেখ্য, ওই গানেও কোমর দোলাতে দেখা গিয়েছিল দীপিকাকেই।
বিতর্কিত গানটি আসলে ছিল ১৯৭১-এ দেব আনন্দ এবং জিনাত আমন অভিনীত ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’ সিনেমার একটি গানের রিমিক্স। নতুন এই গানটিকে ভাল চোখে দেখেননি দেব-জিনাতও।
২০০৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত ‘আজা নাচলে’। এই সিনেমাকেই মাধুরীর ‘কামব্যাক’ সিনেমা বলে ধরা হয়। তার আগে দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর তিনি আমেরিকাতে ছিলেন।
এই সিনেমায় ‘আজা নাচলে’ নামে একটি গান রয়েছে। গানটি মুক্তি পেতেই এই গানকে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হয়। অভিযোগ আনা হয়েছিল, এই গান বেশ কয়েকটি জাতিকে নাখুশ করতে পারে। উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশে প্রথমেই এই গান নিষিদ্ধ করা হয়। পরে নির্মাতারা গানের কথা পরিবর্তন করেন এবং জনগণের অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চান।
২০১২ সালে মুক্তি পেয়েছিল কর্ণ জোহর পরিচালিত ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’। এই সিনেমার মাধ্যমেই বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন বরুণ ধওয়ান, সিদ্ধার্থ মলহোত্র এবং আলিয়া ভট্ট। এই সিনেমার গান ‘রাধা’ মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এই গান নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল অনেকগুলি হিন্দু সংগঠন। এই হিন্দু সংগঠনগুলির দাবি ছিল, এই গানে ব্যবহৃত কয়েকটি শব্দবন্ধ কৃষ্ণপ্রেয়সী রাধার জন্য অবমাননাকর।
এই মর্মে ‘ধর্মা প্রোডাকশন’, কর্ণ জোহর এবং গৌরী খানের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়।
নিষিদ্ধ করার ডাক দেওয়া হয়, শহিদ কপূর এবং প্রিয়ঙ্কা চোপড়া অভিনীত ‘কমিনে’ সিনেমার ‘ধান তে নান’ গানটিও। সিনেমাটি ২০০৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল। ওই সিনেমা ইতিমধ্যেই বিতর্কিত বিষয়বস্তুর জন্য শিরোনামে ছিল। এর মধ্যেই ‘ধান তে নান’ গানটি মুক্তি পাওয়ার পর ব্যাপক শোরগোল পড়ে।
অভিযোগ ছিল, ওই গানটিতে একটি বিশেষ জাতের মানুষকে অপমান করা হয়েছে। গান নিষিদ্ধ করার ডাক দেয় রাষ্ট্রীয় তেলি রাঠৌর চেতনা মহাসঙ্ঘ। পাশাপাশি সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভার সদস্য রাম নারায়ণ সাহু-ও এই গান নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন। চাপের মুখে পড়ে গানের কয়েকটি শব্দ পরিবর্তন করে গানটি নতুন করে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
সেন্সর বোর্ডের তরফে রাম গোপাল বর্মার ‘রণ’ ছবির আবহ গানটি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। অভিযোগ ছিল, এই গানটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত থেকে অনুপ্রাণিত। শেষ পর্যন্ত রামগোপাল এই গানটি ‘বন্দে মাতরম’ গান দিয়ে বদলে দেন।
‘দেলি বেলি’ সিনেমার ‘ভাগ ডিকে বোস’ গানটি নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এই গানের কিছু কথা নিয়ে শোরগোল পড়তে না পড়তেই নতুন বিপদ এসে জুটেছিল। জিতেন ঠুকরাল এবং সুমির তাগরা নামের দুই শিল্পী অভিযোগ আনেন যে, তাঁদের একটি গান চুরি করে তৈরি হয়েছে ‘দেলি বেলি’র এই গান । শেষ পর্যন্ত এই গানের কথা বদলে দেওয়া হয়।
অক্ষয় কুমার অভিনীত জোকার সিনেমার ‘কাফিরানা’ গানের কথা নিয়েও কম ঝামেলা হয়নি। এই গানের কিছু শব্দ ‘অশ্লীল’ বলে অভিযোগ আনে বেশ কয়েকটি সংগঠন। বেশ কয়েকটি মামলাও দায়ের হয়েছিল।
অভিযোগ ওঠার পরই ছবির নির্মাতা শিরীষ কুন্দর তড়িঘড়ি গানের ভাষা বদলে ফেলার ব্যবস্থা করেন। নতুন করে মুক্তি দেওয়া হয় গানটি।
১৯৯৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল গোবিন্দ এবং করিশ্মা কপূর অভিনীত ‘খুদ্দার’। সেই সিনেমার গান ‘বেবি বেবি মুঝে লোগ বোলে’ গানটিকে প্রথমে নিষিদ্ধ করার ডাক দেওয়া হয়েছিল। গানে ‘সেক্সি’ শব্দটির অত্যধিক ব্যবহার অনেককেই ক্ষুণ্ণ করেছিল। এর পরই ছবির নির্মাতারা গান থেকে ‘সেক্সি’ শব্দটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।