মঙ্গলবার লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর এনডিএ বনাম ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। তবে দলীয় সূত্রে খবর, রবিবার তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করতে পারেন নরেন্দ্র মোদী। নবনির্বাচিত সাংসদদের দিকেও নজর পড়েছে দেশবাসীর। দেখা যাচ্ছে, এ বার ৫৪৩টি আসনে যে সাংসদেরা বসবেন, তাঁদের মধ্যে ৪৬.২ শতাংশ সাংসদ অপরাধমূলক মামলার সঙ্গে জড়িত।
‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস’ (এডিআর) সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভার নবনির্বাচিত সাংসদদের মধ্যে ২৫১ জনের নাম আগে থেকেই নানা অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাঁদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, আবার কারও বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণের অভিযোগ।
এডিআর-এর গণনা অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িত সাংসদদের সংখ্যা ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ বার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একক গরিষ্ঠতা পায়নি। লোকসভায় ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৪০টি আসন পেয়েছে বিজেপি। ২৪০ জন নবনির্বাচিত সাংসদদের মধ্যে ৯৪ জন তাঁদের হলফনামায় জানিয়েছেন যে, তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে।
৫৪৩টি আসনের মধ্যে বিজেপির পর সর্বাধিক আসন পেয়েছে কংগ্রেস। এডিআর সূত্রে দাবি, নবনির্বাচিত ৯৯ জন সাংসদদের মধ্যে ৪৯ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে।
লোকসভায় ৩৭টি আসন পেয়েছে সমাজবাদী পার্টি। এডিআর-এর গণনানুযায়ী, ৩৭ জনের মধ্যে মোট ২১ জন নবনির্বাচিত সাংসদদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মামলা রয়েছে।
ডিএমকে দলের ২২ জন নবনির্বাচিত সাংসদদের মধ্যে ১৩ জনের এবং টিডিপি-র ১৬ জন নবনির্বাচিত সাংসদদের মধ্যে আট জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে বলে এডিআর সূত্রে খবর।
৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৯টি আসন পেয়েছে তৃণমূল। ২৯ জনের মধ্যে ১৩ জন নবনির্বাচিত সাংসদদের নাম অপরাধমূলক মামলার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে এডিআর-এর দাবি।
লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর জেডিইউ আসন পেয়েছে ১২টি। ১২ জন সাংসদের মধ্যে মাত্র দু’জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে এডিআর।
শিন্ডের শিবসেনা থেকে নবনির্বাচিত সাত জন সাংসদের মধ্যে পাঁচ জনের এবং ঠাকরের এসএস (উবিটি) থেকে ন’জন নবনির্বাচিত সাংসদদের মধ্যে তিন জনের হলফনামায় ফৌজদারি মামলার উল্লেখ রয়েছে, বলে জানিয়েছে এডিআর।
মহারাষ্ট্রে শরদ পাওয়ারের দল এনসিপি (এসপি) লোকসভায় আটটি আসন পেয়েছে। এডিআর সূত্রে খবর, আট জন নবনির্বাচিত সাংসদের মধ্যে দু’জন সাংসদের হলফনামায় অপরাধমূলক মামলার উল্লেখ রয়েছে।
নবনির্বাচিত সাংসদদের কত জন কী ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তা-ও ধরা পড়েছে এডিআর-এর গণনায়। ৫৪৩ জনের মধ্যে ২৩.৩ শতাংশ নবনির্বাচিত সাংসদ অপরাধমূলক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
৩.৪ শতাংশ নবনির্বাচিত সাংসদের নাম খুন সংক্রান্ত মামলায় জড়িয়ে রয়েছে। তা ছাড়া ২৩.৩ শতাংশ সাংসদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে এডিআর।
মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলায় নাম জড়িয়ে রয়েছে ১২.৯ শতাংশ নবনির্বাচিত সাংসদের। এডিআর সূত্রে দাবি, ৩৭.১ শতাংশ সাংসদ ঘৃণাভাষণের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
অতীতের দিকে নজর দিলে লক্ষ করা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ক্রমশ ‘ক্রিমিনাল রেকর্ড’ থাকা সাংসদের সংখ্যা লোকসভায় বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
এডিআর সূত্রে খবর, ২০০৯ সালে লোকসভায় ১৬২ জন সাংসদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা এবং ৭৬ জন সাংসদের বিরুদ্ধে গুরুতর ফৌজদারি মামলা রয়েছে।
পাঁচ বছর পর ‘ক্রিমিনাল রেকর্ড’যুক্ত সাংসদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে আরও। এডিআর সূত্রে খবর, ২০১৪ সালে লোকসভায় ১৮৫ জন সাংসদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা এবং ১১২ জন সাংসদের বিরুদ্ধে গুরুতর ফৌজদারি মামলা রয়েছে।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর ‘ক্রিমিনাল রেকর্ড’যুক্ত সাংসদের সংখ্যা কমেনি। বরং আগের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এডিআর সূত্রে খবর, ২০১৯ সালে লোকসভায় ২৩৩ জন সাংসদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা এবং ১৫৯ জন সাংসদের বিরুদ্ধে গুরুতর ফৌজদারি মামলা ছিল।
২০২৪ সালও ব্যতিক্রম নয়। এডিআর সূত্রে খবর, ২০২৪ সালে লোকসভায় ২৫১ জন নবনির্বাচিত সাংসদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা এবং ১৭০ জন সাংসদের বিরুদ্ধে গুরুতর ফৌজদারি মামলা রয়েছে।