সুহাসিনী মুলে। বলিউডের অধিকাংশ ছবিতে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় সুহাসিনীকে। কিন্তু তাঁর অভিনয় দেখে কখনও মনে হয় না যে, তিন দশক বলিপাড়া থেকে দীর্ঘ বিরতি নেওয়ার পর তিনি আবার অভিনয়ে ফিরে এসেছেন। শুধু বড় পর্দাতেই নয়, ছোট পর্দার বিভিন্ন ধারাবাহিকেও মা অথবা ঠাকুরমার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি।
কেরিয়ারের শুরুতে মৃণাল সেন এবং সত্যজিৎ রায়ের মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছিলেন সুহাসিনী। ১৯৫০ সালের ২০ নভেম্বর পটনার এক মরাঠি পরিবারে জন্ম তাঁর। তিন বছর বয়সে সুহাসিনী তাঁর বাবাকে হারান। ছোট থেকে মাকেই নিজের বন্ধু মনে করতেন তিনি।
সুহাসিনীর মা বিজয়া মুলে ফিল্মজগতের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন। চলচ্চিত্র ইতিহাসবিদ ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও বহু তথ্যচিত্র নির্মাণ করে ভারত সরকারের তরফে পুরস্কারও পেয়েছেন বিজয়া। চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে মাকে কাজ করতে দেখে সুহাসিনীরও অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায়।
১৯৬৫ সালে দিল্লির স্কুলে পড়াকালীন একটি জনপ্রিয় সাবান প্রস্তুতকারী সংস্থার বিজ্ঞাপনে মডেল হিসাবে কাজ করেন সুহাসিনী। তাঁর এই কাজ নজরে পড়ে বাঙালি পরিচালক মৃণাল সেনের। তাঁর পরবর্তী ছবির নায়িকা হিসাবে সুহাসিনীকে বেছেনেন মৃণাল।
মৃণাল সেন পরিচালিত ‘ভুবন সোম’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় সুহাসিনীকে। ১৬ বছর বয়সে ক্যামেরার সামনে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। উৎপল দত্তের মতো দক্ষ অভিনেতার সঙ্গে পাল্লা দিয়েছিলেন তিনি।
প্রথম ছবিতে কাজ করার পর আর অভিনয়ের দিকে ঝোঁকেননি সুহাসিনী। পড়াশোনা নিয়ে কেরিয়ারে এগিয়ে যাবেন বলে দেশ ছেড়ে কানাডা পাড়ি দেন তিনি। সেখানে কলেজে ভর্তি হয়ে কৃষিবিজ্ঞানের উপর একটি বিশেষ কোর্স করেন তিনি।
কৃষিবিজ্ঞানের কোর্স শেষ হওয়ার পর গণজ্ঞাপন বিষয় নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন সুহাসিনী। স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করে দেশে ফেরেন তিনি। চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর। তাই মায়ের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন তিনি।
বিভিন্ন নামী চ্যানেল সংস্থার সঙ্গেও কাজ করেন সুহাসিনী। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, চ্যানেলের অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য সেখানকার কাজ ছেড়ে দেন। তথ্যচিত্র কী ভাবে তৈরি করা হয়, তাও শিখতে শুরু করলেন তিনি।
১৯৭৫ সালের চলচ্চিত্র উৎসবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সুহাসিনীর মা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সত্যজিৎ রায়ও। সুহাসিনীর কাজ দেখে পছন্দ হয় সত্যজিতের। সুহাসিনীকে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী পদে কাজ করার প্রস্তাব দেন তিনি। সত্যজিতের প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান সুহাসিনী।
১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জন অরণ্য’ ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন সত্যজিৎ। এই ছবির কাজে সত্যজিৎকে সাহায্য করেন সুহাসিনী। তার পর তথ্যচিত্র নির্মাণ করতে শুরু করেন তিনি। কুড়ি বছরে মোট ষাটটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন তিনি।
তথ্যচিত্র নির্মাণের পাশাপাশি অভিনয়ে নামার সিদ্ধান্ত নেন সুহাসিনী। প্রথম ছবিতে অভিনয় করার ত্রিশ বছর পর ১৯৯৯ সালে ‘হু তু তু’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। তাঁর কাজ বহুল প্রশংসিত হয়। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাননি তিনি।
শুধুমাত্র হিন্দি ছবিতেই নয়, মরাঠি এবং অসমিয়া ভাষার ছবিতে অভিনয় করেছেন সুহাসিনী। কেরিয়ার গড়তেই ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৬ সালে মৃণাল সেনের সঙ্গে ‘মৃগয়া’ ছবিতে সহকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন তিনি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, অভিনয় শুরু করার পর তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে একত্রবাস করতেন সুহাসিনী। কিন্তু ১৯৯০ সাল নাগাদ তাঁদের সম্পর্কে ছেদ পড়ে। তার পর নাকি বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
‘লগান’, ‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘কুছ না কহো’, ‘ধামাল’, ‘যোধা আকবর’, ‘মহেঞ্জোদাড়ো’র মতো বহু হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় সুহাসিনীকে। তিন দশক বিরতি নেওয়ার পর কাজ শুরু করলেও একশোটি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন তিনি।
তবে কেরিয়ারে সাফল্যের কারণে নয়, ২০১১ সালে ৬০ বছর বয়সে শিরোনামে আসেন সুহাসিনী। অতুল গুর্তু নামে এক পদার্থবিদকে বিয়ে করেন তিনি। এই বয়সে সাতপাকে বাঁধা পড়েছেন বলে বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।
কিন্তু সুহাসিনীকে ঘিরে বেশি দিন বিতর্ক চলেনি। অভিনেত্রী এক সাক্ষাৎকারে জানান যে, দীর্ঘ দিন একা ছিলেন বলে তাঁর বন্ধুর পরামর্শে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলেন সুহাসিনী। সেখান থেকেই অতুলের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। সেই আলাপই প্রেমে গড়িয়ে যায়।
বর্তমানে অভিনয় এবং তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজ নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন সুহাসিনী। সম্প্রতি ‘ফেম গেম’ ওয়েব সিরিজ়ে মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে কাজ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।