স্থান, দিল্লির নেহরু প্যালেস। সময়, বিকেল ৪টে। রাস্তার ধারে এসে দাঁড়াল একটা সাদা রঙের ঝাঁ-চকচকে বিএমডব্লু। দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন বছর পঞ্চান্নের প্রৌঢ়। গায়ে ধোপদুরস্ত পোশাক, পায়ে চকচকে জুতো।
না, তিনি নেহরু প্যালেসের কোনও দামি আবাসন বা সংস্থার অফিসে ঢুকলেন না। বদলে এগিয়ে গেলেন ফুটপাতের দিকে। একটা টেবিল-চেয়ার পেতে বসে পড়লেন দইবড়া বিক্রি করতে।
ভাবতে অবাক লাগছে? রাস্তার ধারে যাঁরা দইবড়া বা এই ধরনের ‘স্ট্রিট ফুড’ বিক্রি করেন, তাঁদের সঙ্গে মিল পাওয়া যাবে না দিল্লির মুকেশকুমার শর্মার।
মুকেশ বেশি পরিচিত ‘শর্মাজি’ নামে। আবার অনেকের কাছে তিনি পরিচিত ‘কোটিপতি দইবড়াওয়ালা’ নামে।
প্রায় প্রতি দিনই বিকেলে নেহরু প্যালেসে গেলে দেখা পাওয়া যেতে পারে শর্মাজির।
বিকেল থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টা দইবড়া বিক্রি করেন মুকেশ। নিমেষে ফাঁকা হয়ে যায় পসরা। এর পর আবার গাড়ি চড়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
নেহরু প্যালেসে দাঁড়িয়ে শর্মাজির দইবড়া খাননি, এমন দিল্লিবাসী হাতেগোনা। অনেকে দিল্লি ঘুরতে গিয়ে তা চেখে আসেন।
দিল্লিবাসীর একাংশের মতে, মুকেশ যে দইবড়া বিক্রি করেন, তার স্বাদ এমনই অতুলনীয় যে সহজে ভোলা যায় না। অনেকে আবার স্বল্পভাষী মুকেশের নম্র ব্যবহারেও মুগ্ধ।
শর্মাজির দইবড়ার দামও আহামরি কিছু না। মাত্র ৪০ টাকায় এক প্লেট দইবড়া বিক্রি করেন তিনি। তবে একটি প্লেটে একটিই বড়া থাকে।
কিন্তু কী ভাবে সেই দইবড়া বিক্রি করেন মুকেশ? প্রথমে একটি প্লেটের উপর একটি বড়া রেখে উপর থেকে টক-মিষ্টি ঠান্ডা দই ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এর পর একটি চামচ দিয়ে বড়াটি কয়েক টুকরো করে দেন মুকেশ। উপর থেকে মিষ্টি চাটনি, মশলা, পাপড়ি এবং ঝুরিভাজা ছড়িয়ে পরিবেশন করা হয়।
এই দইবড়া বিক্রি করেই মুকেশের মাসিক উপার্জন লক্ষ লক্ষ টাকা। মোট সম্পত্তির পরিমাণ কয়েক কোটি।
শর্মাজির দাবি, বাড়িতে তৈরি বিশেষ মশলার গুণেই তাঁর দইবড়া এত সুস্বাদু।
সংবাদমাধ্যম ‘এনডিটিভি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, শর্মাজি ১৯৮৯ সাল থেকে দইবড়া বিক্রি করছেন। প্রথম প্রথম দইবড়ার প্রতিটি প্লেট দু’টাকায় বিক্রি করতেন মুকেশ। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ টাকা হয়েছে।
দইবড়া বিক্রি করে দিল্লির বুকে বাড়ি-গাড়ি তৈরি করে ফেলেছেন মুকেশ। বিএমডব্লু চেপে এসে দইবড়া বিক্রি করেন তিনি। গাড়ি করেই আনেন বাড়িতে তৈরি বড়া এবং দই।