শুক্রবার থেকে প্যারিসে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে ৩০তম অলিম্পিক্স। চলবে ১১ অগস্ট পর্যন্ত। বিভিন্ন খেলায় পদক জেতার লক্ষ্যে নামছেন ১০ হাজারেরও বেশি ক্রীড়াবিদ। অলিম্পিক্সে ক্রীড়াবিদেরা নিজস্ব দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
অলিম্পিক্সে সেই সব উদ্বাস্তু ক্রীড়াবিদদেরও খেলার সুযোগ দেওয়া হয়, যাঁরা স্বপ্নপূরণের জন্য অবিশ্বাস্য সব বাধা অতিক্রম করেছেন। এ রকমই একজন ক্রীড়াবিদ হলেন য়ুসরা মার্ডিনি।
য়ুসরা সিরিয়ার নাগরিক। কিন্তু সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রাণ বাঁচাতে ২০১৫ সালের অগস্টে সে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন তিনি। য়ুসরা যখন দেশ ছাড়েন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৬।
বাড়ি ছাড়ার সময় য়ুসরার সঙ্গী ছিলেন তাঁর বোন সারা। সফর ছিল কঠিন। প্রথমে কয়েক দিন শরণার্থী শিবিরে কাটিয়ে বিমানে চড়ে সিরিয়া ছাড়েন য়ুসরা। দুই বোন লেবানন চলে যান। সেখান থেকে পৌঁছন তুরস্কে। তুরস্ক থেকে নৌকায় চড়ে গ্রিসের উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু তখনই বিপত্তি বাধে।
জলপথে ১০ কিলোমিটারের রাস্তা নৌকায় করে ৪৫ মিনিটে পার হওয়ার কথা ছিল য়ুসরাদের। কিন্তু, যাত্রীদের সংখ্যা বহনক্ষমতার বেশি হওয়ায় নৌকাটি যাত্রা শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যে টলমল করতে শুরু করে।
এই অবস্থায় য়ুসরা, তাঁর বোন এবং অন্য দুই যাত্রী নৌকা ছেড়ে জলে নামতে বাধ্য হন। সাঁতরে নৌকাটিকে তীরের দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়ে তাঁদের উপর। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সাঁতার কেটে নৌকাটি পারে নিয়ে যেতে সক্ষম হন য়ুসরারা।
তবে গ্রিসে পৌঁছেও সংগ্রাম শেষ হয়নি য়ুসরাদের। বোনকে নিয়ে গ্রিস থেকে জার্মানি চলে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন তিনি।
দীর্ঘ সেই পথের অনেকটাই পায়ে হেঁটে অতিক্রম করতে হয়েছিল য়ুসরাদের। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে সাহায্য নিতে হয়েছিল চোরাকারবারীদেরও।
২০১৬ সালে উদ্বাস্তুদের নিয়ে আলাদা দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় অলিম্পিক্স কমিটি। ভাল সাঁতারু হওয়ার সুবাদে রিও ডি জেনেইরোতে বসা সেই অলিম্পিক্সের উদ্বাস্তু দলে জায়গা হয় য়ুসরার।
সাঁতারের ১০০ মিটার বাটারফ্লাই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন য়ুসরা। যদিও তাঁর র্যাঙ্ক ছিল নীচের দিকে। তবে তত দিনে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল য়ুসরা এবং তাঁর সংগ্রাম নিয়ে।
২০১৬ সালে অলিম্পিকের পতাকা হাতে নিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি শুধু অলিম্পিক্সের পতাকা বহন করেননি, বরং তাঁর মতো অনেক উদ্বাস্তুর আশা এবং স্বপ্ন বহন করেছেন।
২০১৬-র পর ২০২০ সালের অলিম্পিক্সেও অংশ নিয়েছিলেন য়ুসরা। তবে উদ্বাস্তুদের অধিকারের পক্ষে কথা বলে তত দিনে বিশ্বের দরবারে পরিচিত নাম হয়ে উঠেছেন তিনি। রাষ্ট্রপুঞ্জের সর্বকনিষ্ঠ মানবাধিকার শুভেচ্ছাদূত হিসাবেও মনোনীত হন য়ুসরা।
২০২২ সালে য়ুসরার জীবন নিয়ে তৈরি ছবি ‘দ্য সুইমারস’ মুক্তি পেয়েছে। ২০২৩ সালে বিশ্বের সেরা ১০০ প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় য়ুসরাকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল নামী একটি পত্রিকা।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে অলিম্পিক্সের উদ্বাস্তু দলের অংশ হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন মাত্র ১০ জন ক্রীড়াবিদ। চলতি প্যারিস অলিম্পিক্সে সেই সংখ্যা ৩৭।
দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁর মতো অনেক উদ্বাস্তুকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছেন য়ুসরা। তাঁর সংগ্রামকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সমাজের সব মহলের মানুষ।