ধূ ধূ প্রান্ত। চারদিকে মানুষ, গাছপালা, কাকপক্ষী কিচ্ছুটি নেই! মাইলের পর মাইল জুড়ে থরে থরে সাজানো কবর। যার নীচে শুইয়ে রাখা রয়েছে লক্ষ লক্ষ মৃতদেহ। কথা হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে বড় কবরখানা ওয়াদি আল-সালামের।
ওয়াদি আল-সালাম কবরস্থানটি রয়েছে ইরাকের পবিত্র শহর নাজাফে। মনে করা হয়, ওয়াদি আল-সালামে ৬০ লক্ষেরও বেশি মানুষকে কবর দেওয়া হয়েছে।
ওয়াদি আল-সালামের অপর নাম ‘ভ্যালি অফ পিস’ অর্থাৎ, ‘শান্তির উপত্যকা’। ইউনেস্কোর মতে, এই কবরখানা বহু নবি, বিজ্ঞানী এবং রাজপরিবারের সদস্যের শেষ বিশ্রামস্থল।
সমাধিস্থলটি নাজাফ শহরের কেন্দ্র থেকে সুদূর উত্তর-পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত। শহরের প্রায় ১৩ শতাংশ জুড়ে রয়েছে ওয়াদি আল-সালাম। দিনে দিনে তা আরও প্রসারিত হচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়াদি আল-সালাম স্বাভাবিকের থেকে দ্বিগুণ হারে প্রসারিত হচ্ছে।
ওয়াদি আল-সালাম সমাধিক্ষেত্রটির ড্রোন থেকে তোলা ছবি দেখলে তা একটি শহর বলে ভুল হতে পারে। উপর থেকে তোলা ছবিতে সমাধিগুলি সরু সরু বাড়ির মতো দেখায়।
ইউনেস্কোর কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ওয়াদি আল-সালামের আয়তন আড়াই হাজার একরের কাছাকাছি। অর্থাৎ, ১৭০০টিরও বেশি ফুটবল মাঠ এই কবরস্থানে ঢুকে যাবে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা এসে এই সমাধিস্থল পরিদর্শন করেন। ইউনেস্কোর মতে, ওয়াদি আল-সালাম মধ্যযুগেরও আগে তৈরি।
এখানে যাঁদের সমাধিস্থ করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আল-হিরার রাজা এবং আল-সাসানি যুগের সুলতান এবং নেতারা। হামদানিয়া, ফাতিমিয়া, আল-বুওয়াইহিয়া, সাফাওয়াইয়া, কাজার এবং জালাইরিয়াহ রাজ্যের রাজপুত্রদের কবরও রয়েছে এখানে।
ওয়াদি আল-সালামে যে সমাধিগুলি রয়েছে, তাদের বেশির ভাগেরই আকার এবং উচ্চতা একে অপরের সঙ্গে মেলে না। বিখ্যাত মানুষদের কবরগুলি সাধারণত উঁচু হয়।
হজরত মহম্মদের জামাই আলি ইবন আবি তালিব-সহ বেশ কয়েক জন বিখ্যাত ব্যক্তির সমাধি রয়েছে নাজাফ শহরে। আলির সমাধিক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে শহরটি তৈরি হয়েছে।
ওয়াদি আল-সালামকে ইতিহাসের এক অনন্য নিদর্শন বলে মনে করা হয়। এটি ভূমি ব্যবহারের একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিও উপস্থাপন করে।
সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা বিশ্বের শিয়াপন্থী মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধিস্থল ওয়াদি আল-সালাম। প্রতি বছর সেখানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে সমাহিত করা হয়।
সংবাদ সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়াদি আল-সালামে একটি কবর খুঁড়তে সাড়ে আট হাজার টাকার মতো খরচ হয়। সমাধির পাথরের দাম হয় ১৫-১৬ হাজার টাকার কাছাকাছি।
অনেকের মতে ওয়াদি আল-সালাম একটি গোলকধাঁধার মতো। সমাধিক্ষেত্রের শহর ঘুরে দেখানোর জন্য কোনও গাইড বা মানচিত্র নেই।
মনে করা হয় যে, ইরাক যুদ্ধের সময় ওয়াদি আল-সালামে প্রতি দিন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ মৃতদেহ সমাহিত করা হত। ২০১০ সালের পর থেকে সেই সংখ্যা আস্তে আস্তে কমতে থাকে।