প্রকাশ্যে এল ইউক্রেন সেনার গুপ্তচর বাহিনীর কর্মকাণ্ড। ইউক্রেন সেনার গুপ্তচর বাহিনী পরিচালিত একটি দাতব্য সংস্থা রাশিয়ান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের গোপন অভিযান সম্পর্কে জানিয়েছে।
ইউক্রেন সেনার গুপ্তচর বাহিনীর ওই দাতব্য সংস্থা দাবি করেছে, তাদের গোপন হামলায় রাশিয়ার প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ওই দাতব্য সংস্থা এ-ও জানিয়েছে যে, গোপন সেই অভিযানের নাম ‘ব্ল্যাক বক্স’।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘ব্ল্যাক বক্স’ অভিযানের শুরু থেকেই ক্রেমলিনে বড় ধরনের হামলা শুরু করে ইউক্রেন।
‘ব্ল্যাক বক্স’-এর অংশ হিসাবে ২০২৩ সালের মে মাসে মস্কোতে একটি বড় আকারের ড্রোন হামলা চালানো হয়েছিল বলেও ওই সংস্থা জানিয়েছে।
‘ব্ল্যাক বক্স’ অভিযান এত দিন গোপনে রাখা হলেও এই অভিযানের জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থসাহায্য নেওয়া হত। তবে যাঁরা টাকা দিতেন, তাঁরাও ‘ব্ল্যাক বক্স’-এর অভিযান সম্পর্কে জানতে পারতেন না।
‘ব্ল্যাক বক্স’ অভিযানের নেপথ্যে রয়েছে ‘কাম ব্যাক অ্যালাইভ ফাউন্ডেশন’ নামে ইউক্রেনের এক অসরকারি সংস্থা এবং ইউক্রেন সেনার গুপ্তচর বাহিনীর মিলিত প্রয়াস। দুই পক্ষের যোগসাজশে অভিযান চালানো হয়।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘ব্ল্যাক বক্স’ অভিযানের মূল লক্ষ্য রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর পরিকাঠামো দুর্বল করা নয়, তা একেবারে ভেঙে ফেলা।
পাশাপাশি ক্রিমিয়া এবং রাশিয়ার দখলে থাকা পূর্ব ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর কাঠামোকেও ধ্বংস করে দিতেই নাকি এই অভিযান শুরু হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ব্ল্যাক বক্স’ অভিযানে ‘বিভার’ নামে একটি দূর-পাল্লার ড্রোনের ব্যবহার করা হয়েছে। যা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের দিশা অনেকখানি বদলে দিয়েছে বলে ইউক্রেনের সামরিক কর্তাদের দাবি।
উল্লেখযোগ্য যে বিভার ড্রোনটি দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দিয়ে শত্রুপক্ষের উপর হামলা চালাতে পারদর্শী। উল্লেখযোগ্য ভাবে, ‘ব্ল্যাক বক্স’ অভিযানে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর অর্থ, সেখানে থাকা ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং একটি ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা ধ্বংস করে দেওয়া।
এ-ও মনে করা হচ্ছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়ার সামরিক বিমানবন্দরে বিস্ফোরক দিয়ে হামলা চালানোর ঘটনা একটি বৃহত্তর প্রকল্পের অংশ ছিল।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সেনা অভিযানের ঘোষণা করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। তার আগে রুশ সীমান্ত লাগোয়া পূর্ব-ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
গত বছর সেপ্টেম্বরে গণভোটের আয়োজন করিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে ডনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে রুশ নিয়ন্ত্রিত ‘স্বশাসিত অঞ্চল’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই দুই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর বড় অংশ রুশ।
মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলিও কয়েক বছর ধরে সেখানে সক্রিয়। কিন্তু ২১ মাসের যুদ্ধেও সেখানে নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি রুশ ফৌজ। বরং চলতি বছরের গোড়ায় বেশ কিছু অঞ্চল রুশ সেনা এবং তাদের সহযোগী ওয়াগনার যোদ্ধাদের দখলমুক্ত করেছে জ়েলেনস্কির অনুগত বাহিনী।
শীতের মরসুম শুরুর আগে পূর্ব-ইউক্রেনের ডনবাসকে (ডনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলকে একত্রে এই নামে ডাকা হয়) রুশ দখলমুক্ত করতে নতুন উদ্যমে অভিযান শুরু করেছে ইউক্রেন ফৌজ।
গত এক সপ্তাহ ধরেই কয়েকটি এলাকায় নতুন করে দু’তরফের লড়াই শুরু হয়েছে। সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, সেই অভিযানের অঙ্গ হিসেবেই রুশ অধিকৃত অঞ্চলে গোপন হানাদারি শুরু করেছে কিভ-বাহিনী।
সম্প্রতি, পূর্ব ইউক্রনের লুহানস্ক অঞ্চলে বুধবার গাড়িবোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন ইউক্রেনীয় রাজনীতিক মিখাইল ফিলিপোনেঙ্কো। ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর একটি সূত্রে এ কথা জানানো হয়েছে।
রুশপন্থী মিলিশিয়া গোষ্ঠীর এই নেতা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ‘কট্টর বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। পূর্ব-ইউক্রনের রুশ অধিকৃত অঞ্চলের আইনসভা এবং প্রশাসনের সহকারী প্রধান পদে ছিলেন তিনি।