‘আর্যা’র পর সুস্মিতা সেন আবার ফিরছেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। ভারতের এক রূপান্তরকামী মহিলার আত্মজীবনীর উপর ভিত্তি করে বানানো ওয়েব সিরিজ়ে দেখা যাবে তাঁকে। কী ভাবে একা লড়াই করে তিনি দেশের প্রথম রূপান্তরকামী মা হয়ে উঠলেন, সেই কাহিনিই তুলে ধরা হবে সিরিজ়ের ছ’টি পর্বে।
যাঁর আত্মজীবনীর উপর ভিত্তি করে ওয়েব সিরিজ়টি বানানো হচ্ছে, তিনি গৌরী সবন্ত। পুণেতে জন্ম গৌরীর। জন্মের সময় তাঁর নাম অবশ্য গৌরী ছিল না। বাবা-মা তাঁর নাম রেখেছিলেন গণেশ।
গণেশের যখন সাত বছর বয়স, তখন তাঁর মা মারা যান। ঠাকুমার কাছে বড় হয়ে ওঠা গণেশের। তাঁর বাবা পেশায় পুলিশকর্মী ছিলেন।
সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া গণেশের জীবন অন্য দিকে মোড় নেয়। ছেলেদের পোশাক পরতে তিনি ছোটবেলা থেকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন না।
টিভির পর্দায় গায়িকা ঊষা উত্থুপের সাজ মনে ধরে গণেশের। গায়িকার মতো শাড়ি, গয়না পরতে চান বলে বাবাকে জানান গণেশ।
গণেশের এমন আচরণে তাঁর বাবা রেগে গিয়েছিলেন। গণেশ অবশ্য তাঁর মনের ইচ্ছা দমিয়ে রাখেননি। কৈশোরেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি।
তখন তাঁর পকেটে মাত্র ৬০ টাকা। এই অবস্থায় পুণে থেকে মুম্বই আসেন গণেশ। জুহুর সমুদ্রসৈকতে গণেশের আলাপ হয় এক রূপান্তরকামী মহিলার সঙ্গে। সেই অচেনা মানুষই তাঁকে শাড়ি-গয়না পরিয়ে সাজিয়ে দেন।
সেখান থেকে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গণেশকে উদ্ধার করে। ২০০০ সালে গণেশ নিজে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থার সদস্যরা রূপান্তরকামীদের জীবনের লড়াইয়ের পাশে থাকেন, তাঁদের নতুন ভাবে বেঁচে থাকার উদ্যম জোগান।
সংস্থার সূত্রে তিনি খোঁজ পান, গায়ত্রী নামের একটি বাচ্চা মেয়েকে জোর করে যৌনপেশায় নামানো হচ্ছে। পরে আরও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, গায়ত্রীর মা এডসে মারা গিয়েছেন। বর্তমানে সে অনাথ।
সব শুনে ২০০৮ সালে গায়ত্রীকে দত্তক নেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলায় আমাকে এক আত্মীয় জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বড় হয়ে আমি কী হতে চাই। আমি তার উত্তরে বলেছিলাম, ‘মা’।’’
দত্তক নেওয়ার পর নিজের পরিচয়ও বদলে ফেলেন তিনি। নাম বদলে ‘গৌরী’ রাখেন তিনি। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘গণেশ মা দুর্গার ছেলে। দুর্গারই অন্য নাম গৌরী। আমি মা হয়ে নতুন পরিচয় পেয়েছি। তাই নিজের নাম বদলে গৌরী রেখেছিলাম।’’
তিনি আরও জানান, গায়ত্রী তাঁর জীবনে আসার পর তিনি বুঝতে পেরেছেন, মাতৃত্বের অনুভব শুধু জরায়ু থাকলে বা সন্তানের জন্ম দিলেই পাওয়া যায় না। ভালবাসা ও যত্নের মাধ্যমেই মাতৃত্ব ফুটে ওঠে।
রূপান্তরকামীরা যেন দত্তক নিতে পারেন সেই আবেদন নিয়ে গৌরীই প্রথম সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
গৌরীই দেশের প্রথম রূপান্তরকামী মহিলা যিনি ২০১৯ সালে ভারতের নির্বাচন কমিশনের দূত হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।