ভারতের কুখ্যাত চোর বা ঠগদের কথা বললে প্রথমেই মাথায় আসে নটবরলালের কথা। নটবরলাল এত বড় ঠগ ছিলেন যে, তিন বার তাজমহল বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি। বার বার পুলিশকে বোকা বানিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে ধরতেও পারেনি।
তবে ‘বিখ্যাত’ ভারতীয় চোরেদের মধ্যে নটবরলাল ছাড়া আরও এক জনের নাম শুনলে এখনও ঘাবড়ে যায় দিল্লি পুলিশ। তিনি ধনীরাম মিত্তল। যদিও পুলিশের খাতায় তাঁর পরিচয় ‘সুপার নটবরলাল’ এবং ‘ভারতীয় চার্লস শোভরাজ’ নামে।
নটবরলালের মতো ধনীরামও মানুষ ঠকানোয় ‘পিএইচডি’ করেছেন। ভারতের অন্যতম বিজ্ঞ এবং বুদ্ধিমান অপরাধী হিসাবেও কুখ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি।
ধনীরাম শিক্ষিত চোর। আইনের স্নাতক তিনি। হাতের লেখা নিয়েও পড়াশোনা রয়েছে তাঁর। তবে কম বয়সে জীবিকা হিসাবে চুরিকেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি।
ছয় দশকের ‘কেরিয়ারে’ প্রায় এক হাজার গাড়ি চুরির অভিযোগ রয়েছে ধনীরামের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ, দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থানের বিভিন্ন এলাকায় দিনের আলোতেও গাড়ি চুরি করা ছিল ধনীরামের ‘বাঁ হাতের খেল’।
চুরি-ডাকাতি-জালিয়াতির অভিযোগে বার বার গ্রেফতার হয়েছেন ধনীরাম। তবুও তিনি চুরি থামাননি।
বেশ কয়েকটি উদ্ভট অপরাধের সঙ্গেও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে ধনীরামের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে এমন অপরাধও রয়েছে, যা করা তো দূরের কথা, করার কথা কল্পনাও করবে না।
এক বার নথি জাল করে এক নগর দায়রা আদালতের বিচারককেই দু’মাসের জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ধনীরাম।
বেশ কয়েক দিন ধরে কিছু জাল নথি ব্যবহার করে হরিয়ানার ঝাজ্জার আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারককে ‘সরকারি’ চিঠি পাঠিয়েছিলেন ধনীরাম। সেই চিঠিতে লেখা ছিল, দু’মাসের জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
ওই বিচারক ছুটি কাটাতে গেলে আবার কয়েকটি নথি জাল করে ধনীরাম নিজেই বিচারকের আসনে বসে পড়েন। দু’মাস ধরে বিভিন্ন মামলার শুনানিও চলে তাঁর ‘এজলাসে’।
অভিযোগ, সেই সময় প্রায় দু’হাজারের বেশি অপরাধীকে মুক্ত করে দেন ধনীরাম। যদিও পরে তাঁদের আবার গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিচারকের আসনে বসে নিজের মামলাও শুনেছিলেন ধনীরাম। একটি মামলায় নিজেকেই বেকসুর খালাস করে দেন তিনি।
কয়েক দিন পরে ধনীরামের জারিজুরি ধরে ফেলেন কর্তৃপক্ষ। তবে তার আগেই সেখান থেকে চম্পট দিয়েছিলেন তিনি।
উল্লেখযোগ্য, নথি জাল করে ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত একটি রেলস্টেশনের মাস্টার হিসাবেও কাজ করেছিলেন ধনীরাম।
বহু দিন পুলিশের নজর বাঁচিয়ে চলার পর গত মঙ্গলবার দিল্লি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ধনীরাম। একটি চুরির গাড়ি বিক্রির সময় দিল্লির পশ্চিম বিহার এলাকা থেকে তাঁকে হাতেনাতে ধরে পুলিশ।
এর আগে গাড়ি চুরি করতে গিয়ে গত বছরের মে মাসে পুলিশের জালে ধরা পড়েন ধনীরাম। তার আগে একই অপরাধে মার্চ মাসে ধরা পড়েছিলেন।