তিন দিকে অরণ্যে ঘেরা। এক দিক দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দুর্গাবতী নদী। বিহারের কাইমুর রেঞ্জে ৮০০ ফুট উপরে রয়েছে শেরগড় দুর্গ। বর্তমানে এই দুর্গ ধ্বংসাবশেষে পরিণত। কালের নিয়মে এই দুর্গ ক্ষয়ের পথে যাত্রা শুরু করলেও এর সঙ্গে জড়িত ইতিহাস অবাক করতে বাধ্য করে।
কথিত আছে, শেরগড় দুর্গ পাহাড়ের ধাপে সুড়ঙ্গ কেটে কেটে এমন ভাবে বানানো হয়েছিল যে, বাইরে থেকে কেউ এই দুর্গের উপস্থিতি টের পেতেন না। কিন্তু দুর্গের ভিতর থেকে সব দেখা যেত।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, শেরগড় দুর্গ প্রথমে খাড়ওয়াড় রাজাদের অধীনে ছিল। সেই সময় এই দুর্গের নাম ছিল ভুরকুদা দুর্গ।
আফগান শাসক শের শাহ সুরি নাকি খারওয়াড়ের রাজাদের কাছ থেকে এই দুর্গ দখল করে নিয়েছিলেন।
তবে ভিন্ন মতও রয়েছে। কিছু ইতিহাসবিদদের মতে, ১৫৪০ থেকে ১৫৪৫ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে শের শাহ সুরি নিজের প্রতিরক্ষার জন্য শেরগড় দুর্গ তৈরি করেছিলেন।
পরিবারের সদস্য-সহ সৈন্যদের নিয়ে এই দুর্গে শের শাহ থাকতেন বলেও দাবি করেছেন কিছু বিশেষজ্ঞ।
শেরগড় দুর্গ ১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে। নির্মাণের সময় দুর্গের মূল প্রবেশদ্বারে ৮টি গম্বুজ থাকলেও বর্তমানে তার মধ্যে ৫টি অবশিষ্ট। প্রবেশদ্বার থেকে ১ কিলোমিটার ভিতরে ‘রানি পোখরা’ নামে একটি হ্রদও ছিল বলে জানা যায়।
শত্রুদের হামলা থেকে রক্ষা পেতে শের শাহ সুরি শেরগড় দুর্গে আশ্রয় নিতেন। দুর্গের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে শত্রুপক্ষ আসলেই যেন দুর্গের ভিতর থেকে শের শাহের সেনারা দেখতে পান, তেমন ভাবেই তৈরি হয়েছিল দুর্গটি।
শেরগড় দুর্গের ভিতর একশোটির কাছাকাছি সুড়ঙ্গ কাটা হয়েছিল। কিন্তু কোন সুড়ঙ্গ কোন পথে যেত, সেই বিষয়ে অনেকেই অজ্ঞাত ছিলেন।
তবে ইতিহাসবিদদের একাংশের বক্তব্য, এই একশোটির মধ্যে একটি সুড়ঙ্গ রোহতাস কেল্লার সঙ্গে যুক্ত ছিল। পঞ্জাব প্রদেশের এই কেল্লাটি শের শাহ সুরি নির্মাণ করেছিলেন। অনেকের ধারণা, গোপনে রোহতাস কেল্লায় পৌঁছনোর জন্য এই সুড়ঙ্গটি নির্মাণ করা হয়েছিল। দুই দুর্গের মধ্যে সংযোগ স্থাপনই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
সুড়ঙ্গের সঙ্গে রোহতাস কেল্লায় যাওয়া যাওয়ার বিষয়টি গোপন করে রেখেছিলেন শের শাহ। তাঁর খাস সহচর এবং বিশ্বাসযোগ্য সৈন্যরা ছাড়া এই সুড়ঙ্গের বিষয়ে কাউকে জানাননি শের শাহ।
শেরগড় দুর্গের কক্ষগুলি আকারে এতটাই বড় যে, একসঙ্গে এখানে ১০ হাজার লোক থাকতে পারতেন।
সুরক্ষার জন্য শেরগড় দুর্গে সব রকম আয়োজন থাকত। কিন্তু ইতিহাসবিদেরা জানান, এই দুর্গে থাকাকালীন শের শাহ সুরির উপর মুঘল সেনারা আক্রমণ করেছিলেন।
শেরগড় দুর্গে নাকি অমূল্য ধনরত্ন লুকিয়ে রেখেছিলেন শের শাহ সুরি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই ভান্ডারের সন্ধান পাননি কেউ-ই।
বর্তমানে সমগ্র ইতিহাস নিয়ে ধ্বংসের অপেক্ষা করছে এই দুর্গ। পর্যটকদের অনেকেই এই দুর্গ দেখতে যান। সেখানে গেলে লোকমুখে অনেক গল্প শোনা যায়। ইতিহাসের সঙ্গে তার সংযোগ কতটুকু বলা শক্ত।