মন্দিরের সামনে দু’টি দোকান। দোকানের সামনে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ছে। ভোগ কিনতে সকলে ব্যস্ত। নারকেল ও ফুলের সঙ্গে ঝুড়িতে ভোগ হিসাবে দেওয়া হচ্ছে মদের বোতল। মধ্যপ্রদেশের কালভৈরবের মন্দিরের সামনে এই দৃশ্য প্রতিনিয়ত দেখা যায়।
এই মন্দিরের সামনে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে মদের দোকান। দেশি-বিদেশি সব ধরনের মদ পাওয়া যায় এখানে। উজ্জয়িনী শহরের বিখ্যাত হিন্দু মন্দির এটি। শিপ্রা নদীর তীরে বহু বছর আগে গড়ে ওঠা কালভৈরব মন্দিরে প্রতি দিন হাজার হাজার ভক্ত পুজো দিতে আসেন।
স্কন্দ পুরাণের ‘অবন্তী খণ্ড’-এ প্রথম এই কালভৈরব মন্দিরের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। ৯০০ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভদ্রসেন নামে এক রাজা এই মন্দির স্থাপন করেছিলেন।
এই মন্দিরের চারদিকে শিব, পার্বতী, গণেশ ও বিষ্ণুর ছবি রয়েছে। এমনকি, দেওয়ালে মালওয়া সুলতানের সময়ে আঁকা ছবিও ছিল।
পরে এই মন্দিরটি ভেঙে আবার নতুন করে তৈরি করা হয়। পুরনো মন্দিরের চিহ্ন হিসাবে এখন শুধু মালওয়ার ছবিগুলিই রয়েছে।
বর্তমানে কালভৈরব মন্দিরটি যে আদলে বানানো হয়েছে তা ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দের পরেই তৈরি করা হয়েছে। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মরাঠাদের পরাজয়ের পর মরাঠা সেনাপতি মহাদাজি শিণ্ডে যুদ্ধে যাওয়ার আগে কালভৈরবের মূর্তির উদ্দেশে নিজের পাগড়ি দান করে যান।
পাগড়ি দান করার সময় তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, উত্তর ভারতে আবার মরাঠা শাসন ফিরিয়ে আনবেন। তাঁর ইচ্ছাপূরণ হওয়ায় তিনি এই মন্দিরটি মরাঠা আদলে তৈরি করেন।
কালভৈরবের এই মূর্তিটি সিঁদুরে মাখা। মূর্তির মাথায় রয়েছে একটি পাগড়ি।
মহাদাজি এই মন্দিরে পাগড়ি দান করেছিলেন বলে তখন থেকেই মূর্তির মাথায় পাগড়ি পরানোর রীতি চালু হয়েছে।
এই মন্দিরে পুজোর রীতি-নীতিও আলাদা। মন্দিরের পুরোহিত প্রথমে মদের বোতল খুলে কিছুটা মদ একটি পাত্রে ঢেলে নেন। তার পর সেই মদ মূর্তির মুখে ঠেকিয়ে ঢালতে থাকেন। আশ্চর্যজনক ভাবে মূর্তির গা দিয়ে সেই মদ গড়িয়ে পড়ে না।
লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে যে, দেবতাই নাকি সেই মদ ভোগ হিসাবে গ্রহণ করেন। তবে মন্দিরের পুরোহিত ছাড়া অন্য কেউ মদ পান করানোর চেষ্টা করলে তা নাকি গড়িয়ে বাইরের দিকে পড়ে যায়।
কিন্তু অনেকে মনে করেন, মূর্তির মুখের কাছে একটি ছিদ্র রয়েছে। মদ ঢালার পর সেই ছিদ্র দিয়েই তরলটি ভিতরের দিকে চলে যায়।
যদিও মন্দিরের পুরোহিত কালভৈরবের মূর্তিটি কখনও পর্যবেক্ষণ করার অনুমতি দেননি। তাই এই রহস্য এখনও রহস্যই রয়ে গিয়েছে।
সাধারণত, কাপালিক এবং অঘোরীরা এই দেবতার পুজো করেন। কিন্তু উজ্জয়িনীর অধিবাসীরা কালভৈরবকে তাঁদের প্রধান দেবতা জ্ঞানে পুজো করেন।