২০১৭। নতুন চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করেছিল টাটা গোষ্ঠী। টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)-এর সিইও নটরাজন চন্দ্রশেখরনকে টাটা সন্সের পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
চন্দ্রশেখরন টাটা গোষ্ঠীর প্রথম সর্বোচ্চ পদাধিকারী, যিনি পার্সি নন। টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সাইরাস মিস্ত্রির অপসারণের পরেই চন্দ্রশেখরনকে টাটা সন্সের অন্যতম ডিরেক্টর করা হয়েছিল। তখনই জল্পনা শুরু হয়েছিল, চন্দ্রশেখরনই হতে চলেছেন টাটার পরবর্তী চেয়ারম্যান। এর পর জল্পনা সত্য প্রমাণ করে সাইরাসের অপসারণের মাস তিনেকের মধ্যেই পরবর্তী চেয়ারম্যান করা হয় চন্দ্রশেখরনকে।
টাটা সন্সের চেয়ারম্যান মনোনীত হওয়ার আগে থেকেই শিল্পপতি রতন টাটার ‘ডান হাত’ হিসাবে পরিচিত চন্দ্রশেখরন। চন্দ্রশেখরনের উপর অগাধ আস্থাও রয়েছে রতনের।
কিন্তু কে এই চন্দ্রশেখরন? কী ভাবেই বা উত্থান তাঁর? বর্তমানে দেশের তথা বিশ্বের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হলেও চন্দ্রশেখরনের ছোটবেলা কেটেছিল অর্থাভাবে।
১৯৬৩ সালে তামিলনাড়ুর মোহানুর গ্রামে চন্দ্রশেখরনের জন্ম। কৃষক পরিবারের সন্তান চন্দ্রশেখরনের প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন গ্রামেরই একটি সরকারি স্কুল থেকে।
কম্পিউটারের প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে তাঁকে ‘কোয়ম্বত্তূর ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’তে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ফলিত বিজ্ঞান (অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স) নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক হন তিনি।
কম্পিউটার নিয়ে আরও পড়াশোনা করার ইচ্ছা থেকে তিরুচিরাপল্লীর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ‘কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনস (এমসিএ)’ নিয়ে ভর্তি হন চন্দ্রশেখরন।
১৯৮৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন চন্দ্রশেখরন। টিসিএস-এ ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দেন তিনি। এর পরেই তাঁর জীবনে ইতিবাচক মোড় আসে।
শীঘ্রই চন্দ্রশেখরনের দক্ষতা ঊর্ধ্বতনদের নজর কাড়ে। পরের দু’দশকে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তরতরিয়ে উপরে উঠেছিলেন তিনি। পদোন্নতি পেতে পেতে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁকে টিসিএসের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) পদে মনোনীত হন।
এর দু’বছর পর, অর্থাৎ ২০০৯ সালে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে টিসিএসের সিইও হন চন্দ্রশেখরন। এর পর ২০১৭ সালে তাঁকে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান করা হয়।
টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হিসাবে চন্দ্রশেখরনের বেতনও আকাশছোঁয়া। ২০১৯ সালে তিনি বার্ষিক বেতন বাবদ ৬৫ কোটি টাকা পেয়েছিলেন। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে তাঁর বার্ষিক বেতন ছিল ১০৯ কোটি টাকা।
২০২০ সালে মুম্বইয়ের বুকে বিলাসবহুল ডুপ্লে ফ্ল্যাট কিনে নজর কেড়েছিলেন চন্দ্রশেখরন। পেডার রোডের ওই ডুপ্লে-র জন্য তিনি ৯৮ কোটি খরচ করেছিলেন। ৬,০০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের জন্য নাকি প্রতি মাসে খরচ হত ২০ লক্ষ টাকা। শেষমেশ সেটি কিনে ফেলেন তিনি।
টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হিসেবে টাইটানস, টাটা স্টিল, টাটা মোটরস, টাটা পাওয়ার এবং টিএস-সহ অনেক সংস্থার দায়িত্বে রয়েছেন চন্দ্রশেখরন।
ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে দূরদর্শিতার প্রমাণও দিয়েছেন চন্দ্রশেখরন। তাঁর আমলেই টাটা গোষ্ঠীর গোষ্ঠীর মোট মুনাফা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়। ২০১৭ সালে গোষ্ঠীর মোট মুনাফা ছিল ৩৬,৭২৮ কোটি টাকা। তবে ২০২২ সালে তা দাঁড়িয়েছিল ৬৪,২৬৭ কোটি।
গত ৫ বছরে টাটা গোষ্ঠীর রাজস্বও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে একটি পত্রিকার দাবি। ২০২২ সালে ৯.৪৪ লক্ষ কোটির রাজস্ব আয় করে এই গোষ্ঠী।
সম্প্রতি, একটি তথ্যচিত্রে চন্দ্রশেখরনকে বলতে শোনা গিয়েছে, ছোটবেলায় এক বার বাবার সঙ্গে চাষবাসের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন তিনি। তবে সে সব করতে তাঁর ভাল লাগত না। সে সময়ই তিনি ঠিক করেন, চাষবাস করবেন না। আর সেই কারণেই ভবিষ্যতে বড় কিছু করার ইচ্ছা জাগে তাঁর মধ্যে। আর সেই সিদ্ধান্তের কারণে চন্দ্রশেখরন এখন উন্নতির শীর্ষে।